ব্রিটিশ আমলের আইপিসি, সিআরপিসি, এভিডেন্স অ্যাক্ট সংশোধন করবে কেন্দ্র

উত্তরাপথঃ এবার ব্রিটিশ আমলের আইপিসি, সিআরপিসি, এভিডেন্স অ্যাক্ট সংশোধন করবে কেন্দ্র ।এই নতুন সংশোধনীতে কঠোর হতে চলেছে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুক্রবার লোকসভায়  তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পেশ করেন। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিল ২০২৩, মব লিঞ্চিং-এর জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করা এবং বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে মহিলাদের সাথে যৌন সংসর্গের জন্য দশ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।বিলে আরও বলা হয়েছে যে “একজন পুরুষ তার নিজের স্ত্রীর সাথে যৌন মিলনে , স্ত্রীর বয়স আঠারো বছরের কম হলেও তা ধর্ষণ নয়।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন এই বিলে আগের রাষ্ট্রদ্রোহের ধারাটি বাতিল করা হয়েছে। “বিলে প্রথমবারের মতো সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ, সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ, দেশের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অপরাধগুলিকে এক সাথে করা হয়েছে যা আগে আইনের বিভিন্ন বিধানের অধীনে উল্লেখ করা হয়েছিল,”  শাহ বলেছেন যে অপরাধ প্রমানিত হলে অপরাধীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে আদালতের নির্দেশে।

তিনি বলেন যে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিমের মতো পলাতক অপরাধীদের আদালতে অনুপস্থিতিতে বিচার করা হবে এবং তাদেরও সাজা দেওয়া হবে।  বিলটিতে ৩১৩টি সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে যা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে, বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেন।

ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) বিল, ২০২৩, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস) বিল, ২০২৩  এবং ভারতীয় সাক্ষ্য (বিএস) বিল, ২০২৩  প্রবর্তন করেন যা ভারতীয় দণ্ডবিধি, ১৮৬০, ফৌজদারি কার্যবিধি আইন, ১৮৯ -এর প্রতিস্থাপন করবে। তিনি বলেন যে পরিবর্তনগুলি দ্রুত বিচার প্রদান এবং একটি আইনি ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য করা হয়েছে যা সমসাময়িক চাহিদা এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ । এই নতুন বিলগুলোকে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর অনুরোধ করেন ।

মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে, জীবিতদের বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়াও “ভুল পরিচয়পত্র দিয়ে প্রতারণা করে কোনো নারীকে বিয়ে করা বা শারীরিক সম্পর্ক করাকে আলাদা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়েছে । তিনি বলেন, এক্ষেত্রে পুলিশকে ৯০ দিনের মধ্যে অভিযোগের অবস্থা সম্পর্কে জানাতে হবে, যদি সাত বছর বা তার বেশি সাজাপ্রাপ্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হয়, তবে তা করার আগে, পুলিশকে অবশ্যই ভিকটিমদের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

তিনি বলেন, নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য কমিউনিটি সার্ভিস চালু করা হচ্ছে।“অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে বলে পুলিশ অনির্দিষ্টকাল সময় নিতে পারবে না। পুলিশ চার্জশিট দাখিলের জন্য ৯০ দিন সময় পাবে, আদালত আরও ৯০ দিন মঞ্জুর করতে পারে, তবে এটি এর বেশি হতে পারে না।

 “এটা প্রায়ই দেখা যায় যে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের আদালত সাক্ষ্য রেকর্ড করার জন্য ডাকা হয়, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা এসপি (পুলিশ সুপার) ফাইলগুলি দেখার পরে আদালতের সামনে তথ্য উপস্থাপন করবেন। এটি একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মাঠ পরিদর্শনে ব্যস্ত থাকায় এই ধরনের মামলা বিচারে বিলম্ব হচ্ছে, “মন্ত্রী বলেছিলেন।

তিনি বলেন, তল্লাশি ও জব্দের ভিডিওগ্রাফি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে এবং এটি ছাড়া চার্জশিট গ্রহণ করা হবে না।”দণ্ডপ্রাপ্তির হার বর্তমানে কম, আমরা এটিকে ৯০% এ নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রাখি, সাত বছরের শাস্তিযোগ্য সমস্ত অপরাধের জন্য ফরেনসিক প্রমাণ সংগ্রহ বাধ্যতামূলক।

এছাড়াও“যাতে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি সাজা মওকুফের নিয়মের সুবিধা না পান, যেমনটি আমরা বিহারে দেখেছি, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে মৃত্যুদণ্ড কেবল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তন করা যেতে পারে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কেবল সাত বছর পর্যন্ত ছাড় করা যেতে পারে, সাত বছরের কারাদণ্ড মওকুফ করা যেতে পারে শুধুমাত্র তিন বছর পর্যন্ত। রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রেহাই দেওয়া হবে না,”

ব্রিটিশ আমলের আইপিসি, সিআরপিসি, এভিডেন্স অ্যাক্ট সংশোধন বিলটিতে ৩১৩টি সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে যা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে, বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


আগামী ৩ বছরে শূন্য বর্জ্য হওয়ার পথে রাজস্থানের প্রথম গ্রাম

উত্তরাপথঃ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একটি প্রকল্পের আওতায় আঁধি গ্রামে এই পরিবর্তন করা হচ্ছে।জয়পুর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আন্ধি গ্রাম।আগামী তিন বছরে এই গ্রাম শূন্য বর্জ্য হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ।আন্ধি গ্রামের এই সম্পূর্ণ রূপান্তরটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একটি প্রকল্পের অধীনে করা হচ্ছে।  এই প্রকল্পটি সবুজ প্রযুক্তির হস্তক্ষেপ ব্যবহার করে আন্ধি গ্রামকে জিরো ওয়েস্ট মডেলে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে ।  এই প্রকল্পটি ২১ মার্চ ২০২২ এ শুরু হয়েছে,  প্রকল্প পরিচালক বলেন, এ গ্রামের অবস্থা আগে খুবই খারাপ ছিল।আগে এই গ্রামের লোকেদের কঠিন বর্জ্য আলাদা করার কোনও ধারনা ছিল না । .....বিস্তারিত পড়ুন

ধানের সাধ ভক্ষণ : জিহুড়

ড.  নিমাইকৃষ্ণ মাহাত: আশ্বিন সংক্রান্তিতে কৃষক সমাজের মধ্যে জিহুড় পার্বণ পালিত হয়। কৃষক সাধারণের মধ্যে জিহুড় পার্বণের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। জিহুড় অর্থাৎ আশ্বিন সংক্রান্তির সময় বহাল জমিতে লাগানো ধান বা বড়ান ধানে থোড় আসতে শুরু করে। সুতরাং ধান গাছ গর্ভাবস্থায় থাকে। মানুষের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের আচার-সংস্কার পালন করা হয়। এই সংস্কারগুলির অন্যতম হলো " ন' মাসি " অর্থাৎ গর্ভাবস্থার নবম মাসে যে আচার -অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এর কিছুদিন পরেই সন্তানজন্মগ্রহণ করে। মানব- সমাজের গর্ভাবস্থাজনিত এই ধরনের আচার সংস্কারের সঙ্গে ধান গাছের গর্ভাবস্থার কারণে পালনীয় অনুষ্ঠান জিহুড়ের সাদৃশ্য থাকে দেখা যায়। সেই জন্য অনেকে জিহুড় অনুষ্ঠানকে ধান গাছের 'সাধভক্ষণ'  বলে থাকেন। জিহুড়-এ ধান গাছ .....বিস্তারিত পড়ুন

মহারানী পদ্মাবতী এবং জোহরের ঐতিহ্য: সাহস ও আত্মত্যাগের এক গল্প

উত্তরাপথঃ ভারতের ইতিহাসে, এমন অনেক গল্প রয়েছে যা সময়কে অতিক্রম করে আমাদের সম্মিলিত চেতনায় এক অমোঘ চিহ্ন রেখে যায়। তেমনই একটি গল্প মহারানী পদ্মাবতী ও জোহরের ঐতিহ্য। সাহস, সম্মান এবং ত্যাগের এই গল্প প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং আমাদের কল্পনাকে মুগ্ধ করে চলেছে।ভারতীয় ইতিহাসের পাতায় অত্যন্ত সুন্দরী ও সাহসী মহারানী পদ্মাবতী'র উল্লেখ আছে।  রানী পদ্মাবতী রানী পদ্মিনী নামেও পরিচিত।  রানী পদ্মাবতীর পিতা ছিলেন সিংহল প্রদেশের (শ্রীলঙ্কা) রাজা গন্ধর্বসেন।ইতিহাসে রানী পদ্মিনী তার ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা এবং বীরত্বের জন্য পরিচিত হলেও, তিনি করুণা এবং শক্তির প্রতীক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। দিল্লির শক্তিশালী শাসক আলাউদ্দিন খিলজি তার অতুলনীয় সৌন্দর্যের কথা শুনে তাকে অধিকার করার সংকল্প করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

শারদোৎসবের প্রস্তুতি শুরু কলকাতা পুরসভা এবং বন্দর কতৃপক্ষের

উত্তরাপথঃ শারদোৎসবের প্রস্তুতি শুরু প্রশাসনের, প্রতিমা বিসর্জনে এ বার বিশেষ বন্দোবস্ত করছে কলকাতা পুরসভা।এ বছর ২১ অক্টোবর দুর্গা পুজা শুরু এবং ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমী। বিজয়া দশমীর পর আরও দু’দিন প্রতিমা বিসর্জন করা যাবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। তাই সেই প্রতিমা বিসর্জন পর্ব মসৃণ করতে কলকাতা বন্দর এবং পুরসভা কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে চলেছে। সোমবার কলকাতা পুরসভায় প্রাক্‌-পুজোর বৈঠকে পুরসভার বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিকদের পাশাপাশি, ছিলেন কলকাতা পুলিশ, সিইএসসি-সহ একাধিক সরকারি দফতরের আধিকারিকেরা। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top