এই ৪ ধরনের আটার গুণাগুণ জানলে আপনি গমের আটা খাওয়া বন্ধ করে দেবেন

উত্তরাপথঃ ভারতীয় জনসংখ্যার একটি বড় অংশের খাদ্য রুটি ছাড়া অসম্পূর্ণ, এমনকি আমাদের বাঙালীদের মধ্যেও একবেলা রুটি খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে ।এই রুটিগুলি কোন ধরণের আটা থেকে তৈরি করা উচিত তা নিয়ে সর্বদা বিতর্ক রয়েছে। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অনেক ধরনের আটা রয়েছে। প্রতিটি আটার নিজস্ব বিশেষত্ব এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে।যদি এগুলোকে আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন তাহলে আপনি সহজেই সুস্থ থাকতে পারবেন। আজ আমরা আপনাদের এমনই ৪টি স্বাস্থ্যকর আটার কথা বলছি।

বার্লি ময়দা

বার্লি ময়দা ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজগুলির একটি ভাল উৎস। এতে ভিটামিন B1, B2, B6 এর পাশাপাশি নিয়াসিন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে। এটি গমের আটার তুলনায় কিছু অনন্য সুবিধা দিতে পারে। বার্লি ময়দা ব্যবহারের কিছু সম্ভাব্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে:

উচ্চতর ফাইবার সামগ্রী: বার্লি ময়দা গমের আটার চেয়ে বেশি আঁশযুক্ত, যা হজমের জন্য সহায়ক।

নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচক: বার্লি ময়দা গমের আটার তুলনায় কম গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে, যার অর্থ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ: বার্লি ময়দা ভিটামিন এবং খনিজ যেমন বি ভিটামিন, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভাল উৎস। ম্যাগনেসিয়াম হাড় মজবুত করে।

সম্ভাব্য কোলেস্টেরল-হ্রাসকারী প্রভাব: বার্লি ময়দায় বিটা-গ্লুকান রয়েছে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্লাড সুগারও নিয়ন্ত্রণ করে। এই ময়দা ওজন কমাতেও সহায়ক। কারণ এটি খেলে আপনার পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে।

সামগ্রিকভাবে, যারা তাদের ফাইবার এবং পুষ্টির পরিমাণ বাড়াতে চান তাদের জন্য বার্লি ময়দা গমের আটার একটি পুষ্টিকর বিকল্প হতে পারে। যাইহোক, এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে বার্লি ময়দা সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে, বিশেষ করে যাদের সিলিয়াক রোগ বা গ্লুটেন সংবেদনশীলতা রয়েছে, কারণ বার্লিতে গ্লুটেন থাকে।

ছোলা বা বেসন

ছোলা প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজগুলির মতো পুষ্টিতে ভরপুর।এছাড়াও এটি ভিটামিন B1, B6 এবং ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ।  এগুলি উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস যা পেশী বৃদ্ধি, মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষনেও সহায়তা করতে পারে। উপরন্তু, ছোলাতে ক্যালোরি এবং চর্বি কম থাকে, যারা তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তাদের জন্য এটি একটি ভাল বিকল্প। এর নিয়মিত সেবন পেশী মেরামত করতে সাহায্য করে। উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার পেটকে দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখে। ছোলা থেকে তৈরি করা ছোলা আঠা গ্লুটেন সংবেদনশীলতা বা সিলিয়াক রোগে আক্রান্তদের জন্য গমের আটার জনপ্রিয় বিকল্প। এটি প্রোটিন, ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, এটি বেকিং এবং রান্নার জন্য একটি পুষ্টিকর বিকল্প তৈরি করে।

অন্যদিকে, গমের আটা অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং বেকড পণ্যের একটি সাধারণ উপাদান, তবে এটি কিছু ব্যক্তির মধ্যে প্রদাহ এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

বাজরা ময়দা

বহু শতাব্দী ধরে ভারতে বাজরার আটা খাওয়া হয়ে আসছে। এটি প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেন-মুক্ত, এটি সিলিয়াক রোগ বা গ্লুটেন সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য একটি দুর্দান্ত বিকল্প। বাজরা ময়দা ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো পুষ্টিতেও সমৃদ্ধ, যা এটিকে গমের আটার পুষ্টিকর বিকল্প হিসাবে তৈরি করে। এটিতে গমের আটার তুলনায় কম গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে সহায়তা করে।উপরন্তু, গমের আটার তুলনায় বাজরার ময়দার কিছুটা মিষ্টি এবং পুষ্টিকর স্বাদ রয়েছে, যা বেকড পণ্য এবং অন্যান্য খাবারে একটি অনন্য স্বাদ যোগ করতে পারে।

এতে প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি৬ এবং নিয়াসিনের মতো পুষ্টিকর উপাদানের পাশাপাশি অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।উচ্চ ফাইবারের কারণে এটি পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শীতকালে আপনি প্রতিদিন এটি খেতে পারেন, গ্রীষ্মে এটি প্রতি এক দিন অন্তর খাওয়া যেতে পারে। বাজরার আটা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা আপনার হার্টকে সুস্থ রাখে।

রাগি আটা

রাগিকে আঙুলের বাজরাও বলা হয়। ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় এই ময়দা খুবই পুষ্টিকর।উচ্চ পুষ্টির কারণে এটি গমের আটার চেয়ে বেশি উপকারী বলে মনে করা হয়। রাগি আটার কিছু মূল সুবিধার মধ্যে রয়েছে:

ফাইবার বেশি: রাগি ময়দা ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ, যা হজমশক্তি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ রাখে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ: রাগি ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি ভাল উৎস, যা ভাল সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গ্লুটেন-মুক্ত: রাগি ময়দা প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেন-মুক্ত, এটি এমন ব্যক্তিদের জন্য একটি ভাল বিকল্প যা গ্লুটেনের প্রতি সংবেদনশীল বা সিলিয়াক রোগ রয়েছে।

নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচক: গমের আটার তুলনায় রাগির কম গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে, যার মানে এটি ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য উপকারী হতে পারে।

সামগ্রিকভাবে, যারা পুষ্টি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়াতে চান তাদের জন্য রাগি আটা গমের আটার একটি উপকারী বিকল্প হতে পারে। রাগি এবং গমের আটা উভয়ই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হলে একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্যের অংশ হতে পারে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top