আর্কটিক ২০২৭ সালের মধ্যে বরফ-মুক্ত হতে পারে!

উত্তরাপথঃআর্কটিক খুব দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এবং ২০২৭ সালের মধ্যেই প্রথম পুরোপুরি বরফ-মুক্ত গ্রীষ্মের দিন দেখতে পারে! বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং চরম আবহাওয়ার কারণে এমনটা এটি আগের চেয়ে দ্রুততর হচ্ছে।কলোরাডো বোল্ডার ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ গোথেনবার্গের বিশেষজ্ঞদের একটি দল, আর্কটিক কখন বরফ-মুক্ত হবে তা নির্ধারণ করতে কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করেছেন। বিশেষজ্ঞ দলটির মতে এটি আমাদের গ্রহের জন্য একটি বড় ঘটনা হবে, কারণ এটি বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্র এবং আবহাওয়ার ধরণ পরিবর্তন করতে পারে।

বর্তমানে আর্কটিকে উদ্বেগজনক হারে সমুদ্রের বরফ গলে যাচ্ছে – প্রতি দশকে ১২% এর বেশি! গত সেপ্টেম্বরে, ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার জানিয়েছে যে আর্কটিক সাগরের বরফ ১৯৭৮ সালের পর তার সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। বরফের আবরণ প্রায় ৪.২৮ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারে নেমে এসেছে, যা অতীতে যে পরিমাণে বরফ ছিল তার থেকে একটি বড় পতন।

বিজ্ঞানীরা আর্কটিকের সেই অবস্থাটিকে বরফমুক্ত বিবেচনা করেন যখন ১ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারের কম বরফ থাকে। গবেষকরা দেখেছেন যে ২০২৬ থেকে ২০৩৬ সালের মধ্যে প্রথম আর্কটিক বরফমুক্ত হতে পারে। চরম পরিস্থিতিতে, এটি পরবর্তী তিন বছরের মধ্যেই ঘটতে পারে।  শরৎ এবং বসন্তে অস্বাভাবিক উষ্ণ আবহাওয়া সমুদ্রের বরফকে দুর্বল করে দেয় , যার ফলে বরফ দ্রুত গলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। আমরা ইতিমধ্যে এর লক্ষণ দেখেছি; ২০২২ সালের মার্চ মাসে, আর্কটিক স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০° ফারেনহাইট উষ্ণ ছিল!

বিজ্ঞানীদের মতে আমাদের এখনই এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত, কারণ কম সামুদ্রিক বরফ মানে গাঢ় মহাসাগরের জল, যা বেশি তাপ শোষণ করে এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। এটি , বিশ্বকে আরও চরম আবহাওয়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে, আমরা যদি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কম করতে পারি, তাহলে আমরা এই গলন প্রক্রিয়াটিকে ধীর করে দিতে পারব এবং আরও বেশি সময় ধরে সমুদ্রে বরফের অস্তিত্ব রাখতে পারি। প্রতিটি সামান্য প্রচেষ্টা আর্কটিক সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন।

একটি বরফমুক্ত আর্কটিকের সম্ভাবনার ভবিষৎবাণীর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জন জাগরণ আহ্বান করেছেন। আসুন আমাদের গ্রহের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটিকে রক্ষা করতে একসাথে কাজ করি!

সূত্রঃ“Eccentricity pacing and rapid termination of the early Antarctic ice ages” by Tim E. van Peer, Diederik Liebrand, Victoria E. Taylor, Swaantje Brzelinski, Iris Wolf, André Bornemann, Oliver Friedrich, Steven M. Bohaty, Chuang Xuan, Peter C. Lippert and Paul A. Wilson, 5 December 2024, Nature Communications.
DOI: 10.1038/s41467-024-54186-1

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top