

উত্তরাপথঃক্যান্সার গবেষণার ক্ষেত্র থেকে উঠে এসেছে রোমাঞ্চকর খবর! বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি আমাদের ইমিউন সিস্টেমে একটি লুকানো জিনিষ আবিষ্কার করেছেন যা ক্যান্সারের চিকিৎসায় কার্যকরী হতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারটি ইনফ্ল্যামেটরি মনোসাইট নামক এক ধরনের ইমিউন সেলের উপর করেছেন।এটি ক্যান্সার কোষকে লক্ষ্য করে টি কোষকে পুনরায় সক্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।বিজ্ঞানীদের এই অগ্রগতি মেলানোমা, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয় এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের মতো কঠিন ক্যান্সারের মুখোমুখি রোগীদের জন্য আরও ভাল চিকিৎসা বিকল্পের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ইমিউনোথেরাপি কি?
ইমিউনোথেরাপি ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম । এর ব্যবহার ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এই পদ্ধতিটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য পথ দেখিয়েছে যা একসময় অচিকিৎসাযোগ্য বলে মনে করা হয়েছিল। কেমোথেরাপির মতো প্রথাগত পদ্ধতির পরিবর্তে, ইমিউনোথেরাপি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বা প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকরভাবে ক্যান্সার কোষকে চিনতে ও ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
এর সাফল্য সত্ত্বেও, ইমিউনোথেরাপি পদ্ধতিটির একটি বড় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে: কিছু ক্যান্সার চতুরতার সাথে নিজেদের ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে বা এমন এক পরিবেশ তৈরি করতে পারে যা প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দমন করে, এই সব ক্ষেত্রে চিকিৎসার এই পদ্ধতিকে কার্যকরভাবে কাজে লাগানো কঠিন করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, মেলানোমা রোগীদের অর্ধেকেরও বেশি বর্তমানে ইমিউনোথেরাপির থেকে খুব কম বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন সুবিধা পান না।
কেন কিছু ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কার্যকর ভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না? তা খুঁজে বের করার জন্য, গবেষকরা ক্যান্সার কোষ এবং ইমিউন কোষের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। আইএমপি-তে আনা ওবেনাফের নেতৃত্বে, একটি প্রতিভাবান দল আমাদের ইমিউন সিস্টেম কীভাবে ক্যান্সারের আরও ভালভাবে মোকাবিলা করতে পারে সে সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচন করতে মাউস মডেল এবং বিশদ সিকোয়েন্সিং টুলের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে।
‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত তাদের গবেষণায় টিউমারের অভ্যন্তরে টি কোষ পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রদাহজনক মনোসাইটকে অপরিহার্য বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই আবিষ্কারটি ইমিউনোথেরাপির উন্নতি এবং আরও ক্যান্সার রোগীদের সাহায্য করার জন্য উদ্ভাবনী কৌশলগুলির দিকে নিয়ে যেতে পারে।


ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা চক্র বোঝা
গবেষকরা প্রায়ই একটি “ক্যান্সার অনাক্রম্যতা চক্র” উল্লেখ করে যেটি রূপরেখা দেয় কিভাবে ইমিউন কোষ ক্যান্সার কোষ সনাক্ত করে এবং ধ্বংস করে। এই চক্রের প্রধান হল টি কোষ – যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা। সুতরাং টি কোষগুলির কার্যকলাপ শুরু করার জন্য অন্যান্য ইমিউন কোষ, বিশেষ করে অ্যান্টিজেন-প্রেজেন্টিং সেল (এপিসি) থেকে সাহায্যের প্রয়োজন।
ইমিউন চক্রটি শুরু হয় যখন ক্যান্সার কোষগুলি অ্যান্টিজেন নামে পরিচিত প্রোটিনের টুকরো ছেড়ে দেয়। APC গুলি এই অ্যান্টিজেনগুলিকে ধরে টি (T) কোষগুলিতে উপস্থাপন করে, তাদের সক্রিয় করে যাতে তারা ক্যান্সার কোষগুলি খুঁজে বের করতে এবং মেরে ফেলতে পারে। একবার টি কোষগুলি কার্যকর হলে, তারা নতুন অ্যান্টিজেন তৈরি করে যা ইমিউন চক্র পুনরায় চালু করতে সহায়তা করে।
গবেষণার একজন সহ-লেখক, আনাইস এলিওয়াট, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করেছেন: “আমরা দেখেছি যে টি কোষগুলি টিউমারে পৌঁছানোর পরে অন্যান্য প্রতিরোধক কোষের মত অত সক্রিয় ন্য,তাদের আরও সক্রিয়করণের প্রয়োজন।” এর মানে ইমিউন প্রক্রিয়া আগের মত সহজবোধ্য নয়।
অনাক্রম্যতা চক্রে কী অনুপস্থিত তা দেখার জন্য তাদের অনুসন্ধানে, গবেষকরা দুটি মেলানোমা মাউস মডেল তৈরি করেছেন। একটি মডেল চিকিৎসার জন্য ভাল সাড়া দেয়, অন্যটি দেয় না। এই দ্বৈত-মডেল পদ্ধতিটি বিজ্ঞানীদের প্রতিরোধী ক্যান্সারগুলিকে আগামী দিনে ইমিউনোথেরাপির জন্য আরও কার্যকর করার নতুন উপায় খুঁজে বের করার রাস্তা দেখাবে।
সংক্ষেপে, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ইমিউন প্রতিক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে প্রদাহজনক মনোসাইটের আবিষ্কার চিকিৎসার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ নতুন পথ খুলে দেয়। এটি নতুন এক থেরাপির দিকে পরিচালিত করতে পারে, যা ক্যান্সারের সাথে লড়াই করা অনেক রোগীর জন্য নতুন আশা প্রদান করে।
সূত্রঃ “Cancer cells impair monocyte-mediated T cell stimulation to evade immunity” by Anais Elewaut, Guillem Estivill, Felix Bayerl, Leticia Castillon, Maria Novatchkova, Elisabeth Pottendorfer, Lisa Hoffmann-Haas, Martin Schönlein, Trung Viet Nguyen, Martin Lauss, Francesco Andreatta, Milica Vulin, Izabela Krecioch, Jonas Bayerl, Anna-Marie Pedde, Naomi Fabre, Felix Holstein, Shona M. Cronin, Sarah Rieser, Denarda Dangaj Laniti, David Barras, George Coukos, Camelia Quek, Xinyu Bai, Miquel Muñoz i Ordoño, Thomas Wiesner, Johannes Zuber, Göran Jönsson, Jan P. Böttcher, Sakari Vanharanta and Anna C. Obenauf, 27 November 2024, Nature.
DOI: 10.1038/s41586-024-08257-4
আরও পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন