কাঁওয়ার যাত্রা ২০২৫: প্রেম, বিশ্বাস আর স্বপ্নের এক পথচলা

উত্তরাপথঃ কাঁওয়ার যাত্রা ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় আয়োজন। শ্রাবণ মাস এলেই লক্ষ লক্ষ ভক্ত গঙ্গাজল নিয়ে , খালি পায়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে তা শিবমন্দিরে অর্পণ করেন। ভক্তির এই যাত্রা কেবল আধ্যাত্মিকতার নয়, এটি এক ধরনের মানসিক শক্তির উৎসওকিন্তু এ বছরের যাত্রায় বিশেষ আলোচনায় উঠে এসেছেন দিল্লির যুবক রাহুল কুমার। তার গল্প সাধারণ ভক্তির নয়, বরং ভালোবাসা আর প্রতিশ্রুতির এক বিরল উদাহরণ

রাহুল টানা ২২০ কিলোমিটার হেঁটেছেন, কাঁধে নিয়ে ১২১ লিটার গঙ্গাজল। উদ্দেশ্য একটাই—তার প্রিয় বান্ধবী যেন আইপিএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। এটাই তার চতুর্থ কাঁওয়ার যাত্রা। গত বছর তিনি বহন করেছিলেন ১০১ লিটার জল, এবার তা আরও বাড়িয়েছেন। এই পদক্ষেপ কেবল ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা নয়, বরং বান্ধবীর প্রতি অটল আস্থার প্রতীক।

সরকারি হিসেবে প্রতি বছর প্রায় ৪-কোটি মানুষ এই যাত্রায় অংশ নেন। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ। তবে, এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে—কেন তরুণ সমাজ এই যাত্রায় এত গভীরভাবে যুক্ত হচ্ছে?

  • একদিকে আছে ভক্তি ও বিশ্বাস,
  • অন্যদিকে আছে ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও প্রতিজ্ঞা।

রাহুলের পদক্ষেপ দেখাচ্ছে, ধর্মীয় বিশ্বাস কিভাবে ব্যক্তিগত স্বপ্নের সঙ্গে মিশে যেতে পারে।

এই দীর্ঘ পথচলায় রাহুল একা নন।সঙ্গে রয়েছে তার বন্ধু নন্দলাল, যিনি বাইকে করে পাশে থেকেছেন, জল-খাবার জুগিয়েছেন। এর মধ্যেও রয়েছে এক সামাজিক শিক্ষা—বন্ধুত্ব কেবল আনন্দে নয়, কঠিন সময়েও সত্যিকার শক্তি জোগায়।

রাহুলের কাহিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বলছেন—

  • “আজকের দিনে এমন ভালোবাসা বিরল।”
  • “এটা সিনেমার গল্পের মতো।”
  • “ভক্তি, আশা আর ভালোবাসার সুন্দর মিলন।”

কিন্তু এই ভাইরাল গল্প আমাদের আরেকটা প্রশ্নও তুলে দেয় —আজকের তরুণরা কি ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য কেবল নিজে লড়বে, নাকি প্রিয়জনের জন্যও এতটা ত্যাগ স্বীকার করবে?

আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যখন ভালোবাসা ও প্রতিশ্রুতি প্রায়ই ক্ষণস্থায়ী বলে মনে হয়। সেখানে রাহুলের পদযাত্রা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—

  • ভক্তি কেবল মন্দিরের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়,
  • ভালোবাসা কেবল ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়,
  • আর প্রতিশ্রুতি কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

রাহুল দেখিয়েছেন, প্রার্থনা যখন বিশ্বাসের সঙ্গে মেশে আর বিশ্বাস যখন ভালোবাসার সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন তা হয়ে ওঠে এক অসাধারণ শক্তি।

তার পদযাত্রা হয়তো বান্ধবীর পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণ করবে না, কিন্তু সমাজকে মনে করিয়ে দিল—ভালোবাসা এখনো আছে, প্রতিশ্রুতি এখনো শক্তিশালী, আর বিশ্বাস এখনো মানুষের পথ দেখায়।

রাহুলের এই গল্প আমাদের ভাবতে বাধ্য করে—আমরা কি জীবনে শুধু নিজের স্বপ্ন নিয়েই ব্যস্ত, নাকি প্রিয়জনের স্বপ্নকেও সমান গুরুত্ব দিতে পারি?

কাঁওয়ার যাত্রার মতো ধর্মীয় আচার হয়তো বাইরের চোখে কেবল ভক্তির উৎসব, কিন্তু রাহুল দেখিয়েছেন এটি হতে পারে ভালোবাসারও উৎসব। তিনি প্রমাণ করেছেন, ত্যাগ মানে কেবল কষ্ট সহ্য করা নয়, বরং অন্যের জন্য নিজের সীমা অতিক্রম করার সাহস।

সমাজে যদি আরও অনেক রাহুল জন্ম নেয়—যারা প্রিয়জনের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য নিজের সাধ্যমতো কিছু করতে চায়—তাহলেই তো ভক্তি, ভালোবাসা আর প্রতিশ্রুতি সত্যিকার অর্থে অর্থবহ হবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে

উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে   ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি  গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ  ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top