চাক্কাক্কুট্টম: কেরালার কাঁঠাল শিল্পে বিপ্লবের এক নাম

উত্তরাপথ: বিগত কয়েক বছর ধরে, চক্কাক্কুট্টম নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ কেরালায় কাঁঠাল শিল্পে বিপ্লব ঘটাচ্ছে । প্রথমে এটি কাঁঠাল রান্নার রেসিপি এবং টিপস শেয়ার করার জন্য একটি সহজ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে  শুরু হয়েছিল তা এখন একটি পূর্ণাঙ্গ কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়েছে। আজ আমরা চক্কাক্কুট্টমের যাত্রা এবং কেরালার কাঁঠাল শিল্পে এর অবদান নিয়ে আলোচনা করব।

নারকেল ও মশলার দেশ হিসেবে পরিচিত কেরালাতে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল পাওয়া যায়। এর সহজলভ্যতা সত্ত্বেও, সচেতনতা এবং সঠিক ব্যবহারের অভাবের কারণে ফলটি প্রায়শই নষ্ট হয়ে যেত। এখানে প্রায় বছরে ৬০ কোটি কাঁঠাল উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে ২০ কোটিরও কম ফল ব্যবহৃত হত । চাক্কাক্কুত্তম এই সমস্যাটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং কাঁঠাল সম্পর্কে ধারণাকে শুধুমাত্র বাড়ির উঠোনের ফল থেকে একটি মূল্যবান পণ্যে পরিবর্তন করে কাঁঠাল শিল্পে বিপ্লব ঘটাচ্ছে।

চক্কাক্কুত্তম প্রাথমিকভাবে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ হিসাবে কাঁঠাল উৎসাহীদের একটি গ্রুপ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।শুরুর দিকে সদস্যরা রেসিপি, সংরক্ষণের কৌশল এবং কাঁঠাল সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য শেয়ার করতেন। গোষ্ঠীটি প্রথমে ১০ জন সদস্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং দ্রুত সেটি জনপ্রিয়তা লাভ করে, সমগ্র কেরালা এবং এমনকি বিদেশ থেকেও বহু লোক এই  সদস্যদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটির সদস্য হন । কাঁঠালের সম্মিলিত আবেগ তাদেরকে আরও একধাপ এগিয়ে চক্ককুট্টমকে একটি নিবন্ধিত কোম্পানিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করেছে।

চক্কাক্কুট্টমের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন ভাবে কাঁঠাল ব্যবহার করা এবং ধীরে ধীরে তাকে উদ্যোগে পরিণত করা।প্রচেষ্টার অঙ্গ হিসাবে চাক্কাক্কুত্তম সক্রিয়ভাবে কর্মশালা, সেমিনার এবং সচেতনতা প্রচারের মাধ্যমে কাঁঠালের পুষ্টিগত উপকারিতা এবং বহুমুখীতা প্রচার করে। তারা কৃষক, উদ্যোক্তা এবং সাধারণ জনগণকে শিক্ষিত করে এটিকে কিভাবে দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায় এবং লাভজনক ফসল হিসাবে এর সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করা যায় সেই ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়।

চক্কাক্কুট্টম কোম্পানি হিসেবে  কাঁঠাল-ভিত্তিক নিত্যনতুন পণ্য বিকাশে মনোযোগ দেয়। তারা কাঁঠালের চিপস, জ্যাম, আচার এবং এমনকি কাঁঠালের ময়দার মতো পণ্যের একটি পরিসর চালু করেছে, যা তারা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় বাজারেই সরবরাহ করা শুরু করেছে। এছাড়া চাষাবাদের পদ্ধতি উন্নত করতে, প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান এবং তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে চাক্কাক্কুট্টম কৃষকদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এছাড়াও তারা কৃষকদের সঙ্গে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে।

চাক্কাক্কুট্টমের প্রচেষ্টা কেরালার কাঁঠাল শিল্পে বিপ্লব ঘটাচ্ছে । চক্কাক্কুট্টম কৃষক, উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য আয়ের নতুন পথ তৈরি করেছে। এতে যেমন কাঁঠালের অপচয় কমান গেছে তেমনি এটি স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করেছে।

বেশী মাত্রায় শিল্পে কাঁঠালের ব্যবহার কেরলে খাদ্য বর্জ্য হ্রাস করতে সাহায্য করছে ।কাঁঠালের অধিক পরিমাণে ব্যবহার স্থানীয় কৃষকদের আরও বেশী উৎপাদনে উৎসাহিত করছে । সেই সাথে একটি পরিবেশ বান্ধব শিল্পও গড়ে উঠছে।

চাক্কাক্কুত্তমের উদ্যোগগুলি রন্ধনসম্পর্কিত অন্বেষণকে উৎসাহিত করেছে, যার ফলে নিত্য-নতুন কাঁঠালের রেসিপি এবং স্বাদ আবিষ্কার হচ্ছে। যা  স্থানীয় এবং বিশ্বের খাদ্য উৎসাহীদের আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।

চক্কাক্কুট্টম, একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ-প্রতিষ্ঠান যা কেরালার কাঁঠাল শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ তাদের উৎসাহ এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে, তারা কাঁঠালকে একটি অব্যবহৃত ফল থেকে একটি মূল্যবান পণ্যে রূপান্তরিত করেছে।সেই সাথে চাক্কাক্কুট্টম বহু কৃষক থেকে শ্রমজীবি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সেই সাথে কেরালার পরিবেশ রক্ষার্থে এবং রন্ধনসম্পর্কিত অন্বেষণেও অবদান রেখেছে।কেরালার স্থানীয় সম্পদকে কাজে লাগিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে অন্যান্য সম্প্রদায় এবং গোষ্ঠীর জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করছে

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


১ কোটি টাকার মানহানির মামলা প্রাক্তন CJI রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে

উত্তরাপথ: গুয়াহাটির একটি স্থানীয় আদালতে আসাম পাবলিক ওয়ার্কসের (এপিডব্লিউ) সভাপতি অভিজিৎ শর্মার রাজ্যসভার সাংসদ এবং ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে ১কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছে।  অভিজিৎ শর্মার অভিযোগ রঞ্জন গগৈ তার আত্মজীবনী জাস্টিস ফর এ জাজে  তার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর এবং মানহানিকর বিবৃতি প্রকাশ করেছে । তাই তিনি প্রকাশক গগৈ এবং রুপা পাবলিকেশন্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন  এবং কোনও বই প্রকাশ, বিতরণ বা বিক্রি করা থেকে বিরত রাখার জন্য অন্তবর্তী .....বিস্তারিত পড়ুন

ইঞ্জিনিয়ারড ব্যাকটেরিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে

উত্তরাপথ: লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এবং ইউসি বার্কলে এর সহযোগিতামূলক গবেষণায় গবেষকরা একটি অভিনব ব্যাকটেরিয়া ইঞ্জিনিয়ারড করেছেন যা জ্বালানি, ওষুধ এবং রাসায়নিক উত্পাদনের সময় উত্পন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে ডিকার্বনাইজশন এর মাধ্যমে। সম্প্রতি Nature জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই আবিষ্কারটি । আর এটি "Carbene Transfer Chemistry in Biosynthesis" নামে পরিচিত । একটি অভিনব প্রতিক্রিয়ার সাথে প্রাকৃতিক এনজাইমেটিক বিক্রিয়াকে সংহত করতে ব্যাকটেরিয়াকে কাজে লাগায়। আর যা সাধারণত জীবাশ্ম .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top