কৃষি ও শিল্পের এক অসাধারণ মেলবন্ধন: এক গাছে ৪০ রকম ফল

উত্তরাপথঃ ভালোবাসার শহর ফিলাডেলফিয়ায় এক অভিনব প্রকল্পে একসাথে কাজ করছে কৃষি ও শিল্প। সমসাময়িক শিল্পী স্যাম ভ্যান অ্যাকেন তাঁর বিস্ময়কর শিল্পকর্ম “Tree of 40 Fruit” বা ৪০ রকম ফলের গাছ নিয়ে হাজির হয়েছেন টেম্পল ইউনিভার্সিটির মূল ক্যাম্পাসে।

এই প্রকল্পে একটি মাত্র গাছে গ্রাফটিং বা অঙ্গ সংযোজনের মাধ্যমে উৎপন্ন হচ্ছে ৪০ প্রজাতির ফল — যেমন এপ্রিকট, চেরি, পিচ, প্লাম ও অন্যান্য স্টোন ফ্রুট। আগামী দুই বছরে শিক্ষার্থীরা এই গাছের মাধ্যমে কৃষি ও শিল্পের মেলবন্ধন সম্পর্কে জানতে পারবে, এবং অ্যাকেন আরও একটি এমন গাছ রোপণ করবেন টেম্পলের অ্যাম্বলার আর্বোরেটামে।

শুধু ফল নয়, এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে ফিলাডেলফিয়া অঞ্চলের ফলের সাংস্কৃতিক ইতিহাস — দেশীয় ও বিদেশি প্রজাতির মিশ্রণে গড়া এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য।

এক সাম্প্রতিক বক্তৃতায় ভ্যান অ্যাকেন বলেন, “গ্রাফটিং প্রযুক্তির ইতিহাস ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পুরনো। এটি এমন এক পদ্ধতি, যা এক গাছের ফুল বা ফলের বৈশিষ্ট্যকে অন্য একটি শক্তিশালী ও সহনশীল গাছের মূলের সাথে সংযুক্ত করে।”

নিউ হ্যাম্পশায়ার ইউনিভার্সিটি এক্সটেনশনের মতে, দুটি মূল কারণে এই পদ্ধতির প্রয়োগ: এক, অধিকাংশ ফল গাছ বীজ থেকে সহজে উৎপন্ন হয় না। যেমন, ম্যাকিনটোশ আপেলের বীজ থেকে একই প্রজাতির গাছ হয় না। দুই, কাটিং থেকে গাছ গজানো বেশ কঠিন। তাই গ্রাফটিংই একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপায়। এটি এক জটিল, কিন্তু অসাধারণ দক্ষতার কাজ।

ভ্যান অ্যাকেন বলেন, “এই ঐতিহ্যবাহী ফলগুলো কেবল কৃষিপণ্য নয়। এগুলো আমাদের সংস্কৃতির অংশ — এর পেছনে আছে ইতিহাস, স্বাদ, পুষ্টি ও সভ্যতার দীর্ঘ পথচলা।”

বক্তৃতা চলাকালীন শিক্ষার্থীরা নিজের হাতে গ্রাফটিং করে নতুন জীবন সৃষ্টির এই সূক্ষ্ম কলা অনুশীলন করার সুযোগ পায়।

টেম্পল ইউনিভার্সিটির উদ্যানবিদ্যা বিভাগের প্রধান সাশা আইজেনম্যান বলেন, “এই উদ্যোগে একজন শিল্পীকে ক্যাম্পাসে horticulture বা উদ্যানবিদ্যার মাধ্যমে আনার সুযোগটা অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ। এতে শিক্ষার্থীরা দেখতে পাচ্ছে কীভাবে শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রকৃতি একসাথে মিলে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।”

এই শিল্প-শিক্ষার আরেক ধাপে ভ্যান অ্যাকেন পরিচালনা করেন বোটানিকাল সায়ানোটাইপ ওয়ার্কশপ — যেখানে প্রাকৃতিক আলো ও ইউভি রশ্মির মাধ্যমে তৈরি হয় নীল রঙের চিত্র। শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে কাপড় ও কাগজে এই ছবি তৈরি করে।

জুনিয়র ফটোগ্রাফি মেজর জামি ডেলুকা বলেন, “আমি ক্লাসে কয়েক মাস ধরে সায়ানোটাইপ নিয়ে কাজ করছি, কিন্তু স্যামের মতো দক্ষ কারও কাজ দেখা একেবারেই আলাদা অভিজ্ঞতা। ও যেন একজন উদ্ভিদ-গবেষক — দুর্লভ গাছ খুঁজে, তার ইতিহাস জানে, এবং সেগুলো সংরক্ষণ করে তাঁর শিল্পের মাধ্যমে।”

এই ৪০ ফলের গাছ তৈরি সহজ নয়। একটি গাছ সম্পূর্ণ ফল দিতে নিতে পারে আট বছর পর্যন্ত। প্রতিটি গ্রাফটেড শাখা আলাদা রঙ, আকার ও বৈশিষ্ট্য বহন করে।

ভ্যান অ্যাকেন NPR-কে বলেন, “প্রতিটি গাছ তৈরিতে প্রায় আট বছর লাগে। প্রতিটি প্রজাতির একটি বিশেষ রঙ, আকার ও গঠন থাকে, যা পুরো গাছটিকে এক চলমান শিল্পকর্মে পরিণত করে।”

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top