

উত্তরাপথঃ পৃথিবী এখন এমন এক সময়ের মধ্যে যাচ্ছে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন ও চরম আবহাওয়ার প্রভাব দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এই সংকটের মুখোমুখি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশ। বৈশ্বিক উষ্ণতা এত দ্রুত বেড়ে চলেছে যে, এখনই বড় কোনও পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।
জাতিসংঘের আওতাধীন ১৯৭টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ’ (COP30)। এর আগে, প্রতিটি দেশকে তাদের নতুন জলবায়ু পরিকল্পনা (National Climate Plans) জাতিসংঘে জমা দিতে হবে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিটি দেশ জানাবে, কীভাবে তারা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাবে এবং কীভাবে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করবে।
এই পরিকল্পনাগুলোর ভিত্তি হলো প্যারিস চুক্তি, যেখানে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে, বিশ্বের তাপমাত্রা যেন প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে।কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫টি দেশ তাদের ‘ন্যাশনালি ডিটারমিন্ড কন্ট্রিবিউশনস’ (NDCs) জমা দিয়েছে, যা মোট বৈশ্বিক নির্গমনের মাত্র ২০% প্রতিনিধিত্ব করে। আফ্রিকার মধ্যে সোমালিয়া, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে এই তালিকায় আছে। এর মানে, এখনও ১৭২টি দেশ তাদের পরিকল্পনা জমা দেয়নি।
এই পরিকল্পনাগুলো শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়, উন্নয়নের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা বলছে, যদি জলবায়ু পরিকল্পনাগুলোকে উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তবে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা প্রায় ১৭৫ মিলিয়ন মানুষ এর উপকার পেতে পারে।
সম্প্রতি Earth System Science Data জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মানবসৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট উষ্ণতা মিলিয়ে এই পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে গড়ে ১.৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এটি প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
রিপোর্টটি সতর্ক করে বলেছে, বর্তমানে বিশ্বের কার্বন বাজেট (যতটুকু নির্গমন আর করা যায়) এত দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে যে, এই হারে চলতে থাকলে আগামী তিন বছরের মধ্যেই বাজেট শেষ হয়ে যাবে।
আফ্রিকায় গত এক দশকের সবচেয়ে বড় জলবায়ু সংকট চলছে। উষ্ণতা, খরা, অতিবৃষ্টি, সাইক্লোন—এসব পরিবেশগত বিপর্যয় মানুষের জীবন, জীবিকা এবং অর্থনীতিকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
একইসঙ্গে সমস্যাটা হচ্ছে, সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত ও দ্রুত প্রাপ্ত তথ্যের অভাব। যদি জলবায়ুর তথ্যকে শেয়ার বাজারের মতো গুরুত্ব দিয়ে প্রতিদিন বিশ্লেষণ করা হতো, তাহলে প্রতিটি খারাপ আপডেটেই দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন পড়ে যেত।
কী করা উচিত এখন?
১. বিশ্বের প্রতিটি দেশকে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য জলবায়ু তথ্য পেতে হবে।
২. জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে আন্তঃদেশীয় সমন্বয় জরুরি, যাতে ন্যায্যতা বজায় থাকে।
৩. উন্নত দেশগুলোকে স্বীকার করতে হবে যে, তাদের নির্গমন বেশি এবং সেই অনুযায়ী তারা যেন কার্বন হ্রাসে ব্যবস্থা নেয় এবং দরিদ্র দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা করে।
জি-২০ গোষ্ঠীর মধ্যে মাত্র পাঁচটি দেশ (কানাডা, ব্রাজিল, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য) ২০৩৫ সালের জন্য তাদের জলবায়ু পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। অথচ এই গোষ্ঠী বিশ্বব্যাপী নির্গমনের প্রায় ৮০% অংশের জন্য দায়ী।
এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে বর্তমান G20 সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সহায়তা নিশ্চিত করতে।
আরও হতাশাজনক বিষয় হলো, নতুন যে ২৫টি দেশ পরিকল্পনা জমা দিয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ১০টি দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার কথা বলেছে। চীন ও ভারতের পরিকল্পনা এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী নয় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য পূরণে।
এই রিপোর্টটি শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতের চিত্রও স্পষ্ট করছে। COP30-এর আগেই যদি দেশগুলো বাস্তবমুখী এবং সাহসী পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তাহলে জলবায়ু সংকট মোকাবিলার পথে একটা বড় পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
আরও পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন