পেঁয়াজ কাটলেই চোখে জল? বিজ্ঞান যা বলছে, তা জানলে অবাক হবেন!

উত্তরাপথঃ রান্নাঘরে পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে চোখের জল পড়েনি—এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমরা অনেকেই ঠান্ডা জল ব্যবহার, পেঁয়াজ ফ্রিজে রাখা কিংবা সানগ্লাস পরার মতো ঘরোয়া টিপস মেনে চলেছি, কিন্তু তবুও চোখের জল থামানো যেন অসম্ভব! তাহলে এর আসল কারণ কী? সম্প্রতি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এক আকর্ষণীয় গবেষণায় দেখিয়েছেন, সমস্যার মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে আপনার ছুরির ধার ও কাটার কৌশলে।

পেঁয়াজ: ইতিহাসে ও পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এক উপাদান
পেঁয়াজ শুধু রান্নার উপাদান নয়, এটি হাজার হাজার বছর ধরে মানব সভ্যতার খাদ্যাভাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রাচীন মিশরীয়রা পেঁয়াজকে অনন্ত জীবনের প্রতীক মনে করত, এমনকি ফেরাউনদের সমাধিতেও রাখা হতো এই অদ্ভুত গন্ধওয়ালা সবজিটি! আজ আমরা জানি, পেঁয়াজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান এবং জরুরি পুষ্টিতে পরিপূর্ণ একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য।

কেন পেঁয়াজ আমাদের কাঁদায়?
পেঁয়াজ কাটলে চোখে জল আসে, কারণ এতে থাকা এক বিশেষ রাসায়নিক যৌগ—সিন-প্রোপেনেথিয়াল-এস-অক্সাইড—কাটার সময় বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এই গ্যাস চোখে গিয়ে অশ্রুগ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে, ফলে চোখ জল দিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়, যাতে এই জ্বালাময়ী পদার্থ ধুয়ে ফেলা যায়।

কর্নেলের গবেষণায় কী বেরিয়ে এসেছে?
এই সমস্যা নিয়ে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একটি অভিনব পরীক্ষা চালান। তারা একটি ছোট পেঁয়াজ “গিলোটিন” তৈরি করেন, যেখানে বিভিন্ন প্রকারের ব্লেড ব্যবহার করে আলাদা গতিতে পেঁয়াজ কাটা হয়। পেঁয়াজের প্রতিক্রিয়া আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য এগুলো কালো স্প্রে পেইন্টে রঙ করা হয়, যাতে কাটা অংশটিকে পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়।
তারা দেখতে পান:
• ধারালো ছুরি ব্যবহার করলে পেঁয়াজ কম বিকৃত হয়, ফলে কম গ্যাস নির্গত হয়।
• ভোঁতা ছুরি পেঁয়াজকে চাপ দিয়ে ফাটিয়ে ফেলে, যার ফলে হঠাৎ এক ধরনের “রাসায়নিক বিস্ফোরণ” ঘটে এবং ক্ষতিকর অ্যারোসল চোখে পৌঁছায়।
• দ্রুত কাটার ফলে আরও বেশি গ্যাস তৈরি হয়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, একটি ভোঁতা ছুরি ধারালো ছুরির তুলনায় ৪০ গুণ বেশি জ্বালাময়ী কণা তৈরি করতে পারে, এবং দ্রুত কাটার গতি সেই পরিমাণ চারগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে!

তাহলে করণীয় কী?
গবেষকরা বলছেন, যদিও গবেষণাটি এখনো পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে, তবুও প্রাথমিক ফলাফল সুস্পষ্ট:
👉 একটি ভালো ধারালো ছুরি ব্যবহার করুন
👉 ধীরে ধীরে এবং শান্তভাবে কেটে নিন
এই দুটি অভ্যাস পেঁয়াজ কাটার সময় চোখে জল আসার সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে।


পেঁয়াজ, এই নিরীহ মনে হলেও এটি একপ্রকার জৈব অস্ত্রের মতো! যদি আপনি তাড়াহুড়ো করে, ভোঁতা ছুরি দিয়ে এটিকে সামলাতে যান, তাহলে এটি আপনার চোখে সরাসরি ‘হামলা’ চালাবে। কিন্তু যদি আপনি ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে এগোন, তাহলে আপনি বিজয়ী হবেন।
পরের বার যখন পেঁয়াজ কাটবেন, মনে রাখবেন—সাবধানতাই বাঁচার উপায়!

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top