

উত্তরাপথঃ বিজ্ঞানীরা একটি রঙিন নতুন পেইন্ট ডিজাইন করেছেন যা আপনার বিদ্যুৎ বিল কামাতে পারে। আমরা বিশ্বে এমন এক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যেখানে শক্তি সংরক্ষণ ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, বিজ্ঞানীদের দ্বারা তৈরি এই যুগান্তকারী উদ্ভাবন আমাদের বিদ্যুৎ খরচ কম করার চেষ্টাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে।স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা একটি নতুন পেইন্ট ডিজাইন করেছেন যা এয়ার কন্ডিশনার এবং হিটারের উপর আমাদের ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিজ্ঞানীদের তৈরি এই নতুন রঙিন পেইন্ট,শুধুমাত্র নান্দনিকতা বাড়াবে তা নয়,এটি আমাদের বিদ্যুৎ বিলের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে।
রঙ সবসময় আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, আমাদের মেজাজ, আবেগ এবং উপলব্ধিকে প্রভাবিত করে। গবেষকরা প্রকৃতিতে পাওয়া অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করে এমন একটি পেইন্ট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যা পেইন্টের এই ধারণাটিকে নান্দনিকতার বাইরে নিয়ে গেছেন।এর ফর্মুলেশনে বিশেষ কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এই উদ্ভাবনী পেইন্টটি এমনভাবে আলোকে প্রতিফলিত এবং শোষণ করতে পারে যে এটি অদ্ভুতভাবে কৃত্রিম আলোর প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে। পেইন্টটি সূর্যের মধ্য-ইনফ্রারেড আলোর ৮০ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিফলিত করতে সক্ষম, যা প্রচলিত রঙিন রঙের তুলনায় ১০ গুণ বেশি প্রতিফলন করে।
এই পেইন্টটি গ্রীষ্মে ঘর ঠান্ডা রাখে এবং শীতকালে ঘর উষ্ণ রাখে। তাই এই পেইন্টগুলি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং ঘর গরম করার বিকল্প হিসাবে কাজ করতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনে ব্যাপকভাবে অবদান রাখে। প্রসিডিংস অফ ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস- এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন পেইন্টগুলির ব্যবহারের উপর একটি সমীক্ষা চালান হয়েছে তাতে দেখানো হয়েছে এয়ার কন্ডিশনারে সারা বিশ্বের ১৩ শতাংশ শক্তি ব্যবহার হয় এবং এটি ১১ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে অবদান রাখে। তবে নতুন পেইন্টের ব্যবহার ঘর শীতল করার জন্য ব্যবহৃত মোট শক্তি প্রায় ২১ শতাংশ কমিয়ে দেয়। বিজ্ঞানীদের এই নতুন আবিষ্কার এয়ার কন্ডিশনার এবং হিটিং প্রতিস্থাপন করতে পারে, এবং বিদ্যুৎ বিল কামাতে পারে। নতুন উদ্ভাবন অধ্যয়ন করার জন্য, বিজ্ঞানীরা একটি কৃত্রিমভাবে উষ্ণ পরিবেশে পেইন্টটি পরীক্ষা করেছেন। অ্যাপার্টমেন্টের দেয়াল এবং ছাদে এই পেইন্ট ব্যবহার করা হয়েছিল,তাতে বিজ্ঞানীরা দেখেন হিটার এবং এয়ার কন্ডিশনা বাবদ বিদ্যুতের ব্যবহার এক বছরে ৭.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
মধ্য-ইনফ্রারেড আলো সাধারণত বিল্ডিং পৃষ্ঠের তাপের শোষক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যখন একটি বিল্ডিংয়ের বাইরে ব্যবহার করা হয়, তখন পেইন্টটি তাপকে দূরে রাখে এবং তাপ ধরে রাখতে এটি ভিতরে ব্যবহার করা যেতে পারে। পেইন্টটি সূর্যের মধ্য-ইনফ্রারেড আলোর ৮০ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিফলিত করতে সক্ষম, যা প্রচলিত রঙিন রঙের তুলনায় ১০ গুণ বেশি প্রতিফলন।পেইন্টের আবিষ্কর্তাদের মতে, এটি একটি “বছরব্যাপী শক্তি-সাশ্রয়ী সমাধান”, যা বিভিন্ন জলবায়ুতে ব্যবহার করা যেতে পারে। কৃত্রিমভাবে উষ্ণ অবস্থায় পরীক্ষা করা হলে, পেইন্টটি আবদ্ধ স্থানকে শীতল করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির পরিমাণ প্রায় ২১ শতাংশ কমিয়ে দেয়। আবার কোনও ঠান্ডা স্থানকে গরম করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির ব্যবহার ৩৬ শতাংশ কমিয়েছে।
যেহেতু আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি, তাই আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান গ্রহণ করা অপরিহার্য। এই রঙিন পেইন্ট শুধুমাত্র বিদ্যুৎ শক্তি সংরক্ষণ করে না বরং এটি পরিবেশে গ্রীন হাউস গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। এই পেইন্টটির ব্যবহার আমাদের সবুজ ভবিষ্যতের দিকে এক ছোট পদক্ষেপ।এই রঙিন পেইন্টের আবিষ্কার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের সন্ধানে বিশ্ববাসীর সামনে এক আশা নিয়ে আসে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে উদ্ভাবনের কোন সীমা নেই। বর্তমানের এক ছোট আবিষ্কারও ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এই নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন আমাদের বিদ্যুৎ বিল কামাতে পারে তেমন,এর মাধ্যমে আমরা একটি উজ্জ্বল, আরও পরিবেশ সচেতন ভবিষ্যতের জন্য অবদান রাখতে পারি।
Ref- The study was published in PNAS
আরও পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন