বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হওয়া সত্বেও ভারতের অলিম্পিক পারফরম্যান্স কেন হতাশা জনক?

উত্তরাপথঃ ১.৪১ বিলিয়ন জনসংখ্যা সহ ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। এত বিশাল জনসংখ্যা থাকা সত্বেও সদ্য সমাপ্ত অলিম্পিকের ফলাফল  দেশের জন্য একটি হতাশাজনক ব্যাপার । দেশের কিশোর – কিশোরীদের মধ্যে খেলাধুলায় ক্রমবর্ধমান আগ্রহ সত্ত্বেও, ২০২৪ অলিম্পিক গেমসে ভারতের পারফরম্যান্স দুর্বল ছিল, দেশ একটি রৌপ্য এবং পাঁচটি ব্রোঞ্জ সহ মাত্র ছয়টি পদক জিতে। এই ফলাফলটি অনেক ভারতীয়কে নতুন করে ভাবাচ্ছে আমাদের কি ভুল হয়েছে এবং ভবিষ্যতে দেশের বিশ্বস্তরীয় খেলা প্রতিযোগিতায় পারফরম্যান্স উন্নত করার জন্য কী করা দরকার।

ভারতীয় কুস্তিগীর ভিনেশ ফোগাট, যিনি একটি পদকের জন্য দেশের অন্যতম সেরা বাজি হিসাবে ছিলেন। ভিনেশ ফোগাট মহিলাদের ৫০ কেজি ফাইনালে পৌঁছেছিলেন কিন্তু তার স্বর্ণপদক ম্যাচের আগে ১০০ গ্রাম ওজনের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। একটি শক্তিশালী লাইনআপ থাকা সত্ত্বেও, তিনি পদক আনতে ব্যর্থ হন। একইভাবে, ভারতীয় শ্যুটার মনু ভাকের, যিনি অলিম্পিকের আগে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পদক জিতেছিলেন,এবারের অলিম্পিকে তিনি ২টি ব্রোঞ্জে পদক পান।এছাড়াও নীরজ চোপড়া, সরবজোত সিং, স্বপ্নিল কুসলে ও আমান সেহরাওয়াত পদক পান।এবারের পদক তালিকায় ভারতের স্থান ৭১।

অলিম্পিকে ভারতের দুর্বল পারফরম্যান্সের প্রাথমিক কারণগুলির মধ্যে একটি ছিল আমাদের প্রতিযোগীদের মধ্যে গভীরতার অভাব। ভারত যদিও কুস্তি এবং শ্যুটিং-এর মতো কিছু বিষয়ে কিছু প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ তৈরি করছে, এই ক্রীড়াবিদদের জন্য দেশের প্রস্তুতি এবং সহায়তার পরিকাঠামো প্রায়শই অপর্যাপ্ত।

অলিম্পিকে ভারতের দুর্বল পারফরম্যান্সে অবদান রাখা আরেকটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হল তার ক্রীড়াবিদদের জন্য পর্যাপ্ত সমর্থন পরিকাঠামোর অভাব। যদিও ভারত বছরের পর বছর ধরে ক্রীড়া পরিকাঠামোতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, তবু বিশ্বস্তরে উন্নত দেশগুলির মানের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, ভারতের ক্রীড়াবিদরা প্রায়শই মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ সুবিধা, কোচিং এবং চিকিৎসা সহায়তা পাওয়ার জন্য লড়াই করে। যা তাদের পক্ষে অন্যান্য দেশের ক্রীড়াবিদদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করা কঠিন করে তুলতে পারে যাদের কাছে আরও ভাল সংস্থান রয়েছে। উপরন্তু, ভারতের ক্রীড়া কর্তৃপক্ষ প্রায়ই আন্তর্জাতিক ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ক্রীড়াবিদদের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়, যা তাদের পক্ষে তাদের সেরা পারফর্ম ধরে রাখা কঠিন করে তুলতে পারে।

নির্বাচনের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা হল আরেকটি ক্ষেত্র যেখানে আমাদের দেশ সংগ্রাম করেছে। আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলির জন্য আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রায়শই অসঙ্গতিপূর্ণ এবং অপ্রত্যাশিত হওয়ার জন্য সমালোচিত হয়। এটি ক্রীড়াবিদ, কোচ এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা এবং বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত তাদের কর্মক্ষমতা প্রভাবিত করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, অলিম্পিকের জন্য ভারতের নির্বাচক কমিটি তার স্কোয়াডে শেষ মুহূর্তের পরিবর্তন করার জন্য সমালোচিত হয়েছিল, যা ক্রীড়াবিদদের মধ্যে বিভ্রান্তি  সৃষ্টি করেছিল। এই ধরনের অসঙ্গতি একজন ক্রীড়াবিদদের আত্মবিশ্বাস এবং প্রস্তুতিকে ক্ষুন্ন করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত অলিম্পিকে তাদের পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করতে পারে।

তাহলে, ভারতের অলিম্পিক পারফরম্যান্সের উন্নতির জন্য কী করা দরকার? এখানে কয়েকটি পরামর্শ রয়েছে:

১। আমাদের দেশে প্রশিক্ষণ সুবিধা, স্টেডিয়াম এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সহ ক্রীড়া পরিকাঠামোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। এটি ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের অন্যান্য দেশের সাথে আরও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সাহায্য করবে।

২। ভারতের ক্রীড়া কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ক্রীড়াবিদদের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে মানসম্পন্ন কোচিং, প্রশিক্ষণ সুবিধা এবং চিকিৎসা সহায়তার অ্যাক্সেস প্রদান।

৩। আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলির জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং স্বচ্ছ হতে হবে। এটি ক্রীড়াবিদ এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা এবং বিভ্রান্তি কমাতে সাহায্য করবে। ৪।ভারতকে যুব উন্নয়ন কর্মসূচীর উপর আরও বেশি ফোকাস করতে হবে যা অল্প বয়স থেকেই প্রতিভাবান তরুণ ক্রীড়াবিদদের সনাক্ত এবং বিকাশ করতে পারে। এটি দেশকে প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে সাহায্য করবে যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top