১লা ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সম্পাদকীয়- নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি কি জন কল্যাণের জন্য , নাকি ভোট সংগ্রহের জন্য ‘উৎকোচ ‘?

আমরা এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যখন  সরকারের ক্ষমতা নেই  সমস্ত বেকার ছেলে-মেয়েদের চাকরি দেওয়ার। তাই নির্বাচন এলেই স্টক ক্লিয়ারেন্স সেলের মত শুরু হয়ে যায় সস্তায় সবকিছু পাইয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে ,বর্তমানে নির্বাচনের পর অধিকাংশ দল সরকার গঠনের সাথে সাথে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে শুরু করে। কয়েক দশক আগে দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে শুরু হওয়া এই প্রবণতা এখন প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো প্রতিটি দলই এ ধরনের প্রতিশ্রুতিা দেয়, তা সত্বেও একে অপরের দিকে আঙুল তোলার কোনো সুযোগ তারা হাতছাড়া করে না।

খুব সম্প্রতি দিল্লীতে এবং এরপর বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। আমআদমি পার্টি আগামী নির্বাচনকে  সামনে রেখে তাদের বেশকিছু গ্যারান্টি ঘোষণা করেছে । আমআদমি প্রধান কেজরিবালের এই বক্তব্যে কারো কি আপত্তি থাকতে পারে? যে শুনবে সে বলবে এটা একটা বুদ্ধিমানের কাজ, সব রাজনৈতিক দলগুলোরও তাই করা উচিত। কিন্তু রাজনীতি এভাবে চলে না। বিজেপি বিষয়টি নিয়ে মাঠে নেমেছে এবং কেজরিবাল সরকারর বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এনেছে যদিও বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে আমআদমি পার্টির পক্ষ থেকে। অন্যদিকে তারাও খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে সেইসাথে তারা নির্বাচনের আগে যৌতুক বিতরণের অভিযোগ এনেছে। তাই স্বাভাবিক ভাবে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি কি জনগণের কল্যাণের জন্য নাকি সেগুলি ভোট সংগ্রহের জন্য ‘উৎকোচ ‘ বিতরণের অনুশীলন?

এর আগে মহারাষ্ট্র নির্বাচনের জন্য মহাবিকাশ আঘাদি, অর্থাৎ কংগ্রেস জোটের পক্ষ থেকেও পাঁচটি গ্যারান্টি ঘোষণা করা হয়েছিল। রাহুল গান্ধী নিজেই নারীদের জন্য তিন হাজার টাকা ঘোষণা করেন।এর আগে একই ধরনের রাজনৈতিক  ঘোষণা  বিজেপি থেকে তৃণমূল কংগ্রেস সবাই করে এসেছে। এগুলি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি  না উৎকোচ এই প্রশ্নটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু’বছর আগে উত্থাপন করেছিলেন, যখন কংগ্রেস কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা এবং হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনে মহিলা এবং যুবকদের জন্য একই রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।সেই সময় তিনটি স্থানেই নারী ও যুবকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রতি মাসে তাদের ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এতে দলটিও লাভবান হয়েছিল বলা যায়।অন্যদিকে সেই নির্বাচনে তেলেঙ্গানায় কেসিআর এবং অন্ধ্রের জগন মোহন রেড্ডি তাদের সরকারের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি দেখিয়ে ভোটারদের সমর্থন আদায় করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভোটাররা তাদের সমর্থন করেননি।

যদিও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি  দিয়ে ভোটারদের মন জয় করার এই জাতীয় পরিকল্পনা মধ্যপ্রদেশে বিজেপির জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের লক্ষ্মী ভান্ডার সহ একাধিক প্রকল্প সেখানকার নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করেছে সন্দেহ নাই। এমনকি রাজ্য নির্বাচনকে বাদ দিয়েও, কিষাণ সম্মান যোজনা, বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস, বিনামূল্যে শৌচাগার, বিনামূল্যে বাড়ি এবং বিনামূল্যে শস্য প্রকল্প দেশের জাতীয় রাজনীতিতে যে ভূমিকা পালন করেছে তা আমরা কীভাবে উপেক্ষা করতে পারি?

এমনকি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদরাও এখন বলছেন যে আগামী দিনে সরকারের পক্ষে পর্যাপ্ত কাজ তৈরি করা সম্ভব হবে না, এমন পরিস্থিতিতে সরকারগুলিকে কেবল দরিদ্রদের সাহায্য করলে হবে না, তাদের আত্মসম্মানে আঘাত না করে সাহায্যের ব্যবস্থাও করতে হবে। আমরা যদি কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারগুলির অবস্থা দেখি, তারাও এই পরিস্থিতি উপলব্ধ করে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার্থে এটিকে পরিচালনা করছে।সুতরাং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি  না উৎকোচ এই বিতর্কগুলি এখন অবান্তর।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন