সম্পাদকীয়- যখন ডিগ্রিগুলি তাদের মূল্য হারায়

আমরা এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যেখানে উচ্চশিক্ষাকে সাফল্যের সোনালী সিঁড়ি হিসাবে দীর্ঘকাল ধরে করা ঘোষণা প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।আগে যেখানে কলেজের , ডিগ্রীগুলিকে আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং কর্মজীবনের অগ্রগতির একটি গেটওয়ে হিসাবে দেখা হত ,আজ সেই ডিগ্রীগুলিকে  কখনও কখনও কেবল কাগজের টুকরো বলে মনে হয় । যখন দেখি আমাদের আশেপাশে একটা বিরাট সংখ্যক শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়ে সামান্য একটা চাকরির আশায় ঘুড়ে বেড়াচ্ছে । এদের মধ্যে একটা বিরাট সংখ্যা পারিবারিক বাধ্য বাধকতার কারণে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।

যা একসময় সমৃদ্ধির সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত পথ ছিল তা এখন অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বার বার কলেজ ডিগ্রির মূল্য প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।চাকরির বাজারের পরিবর্তন এবং নিয়োগকর্তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কঠোর আলোতে যাচাই করা হচ্ছে  কর্ম প্রার্থীদের । আজ ডিগ্রী তার দীপ্তি হারিয়েছে, প্রাথমিক কারণগুলির মধ্যে একটি হল ডিগ্রীধারীদের সাথে চাকরির বাজারের অনুপাত।আজ যে সংখ্যক ব্যক্তি কলেজ ডিগ্রি অর্জন করেছে, সেই অনুপাতে চাকরির বাজার সীমিত। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিযোগিতা বেড়েছে।যেহেতু নিয়োগকর্তারা একটি পদের বিপরীতে প্রচুর যোগ্য প্রার্থীর আবেদন পাচ্ছেন তাই তাদের কাছে ডিগ্রির মর্যাদা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে।

আমরা যখন এই সমস্যার জটিলতার দিকে তাকাই, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তিরই একটি উল্লেখযোগ্য সংস্কারের প্রয়োজন।কারণ ঐতিহ্যগত ডিগ্রীগুলি যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হয়ে  অনলাইন কোর্স, কোডিং সহ বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলির কাছে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে।সময় এসেছে দ্রুত পরিবর্তনশীল চাকরির বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে বিকল্প শিক্ষার পথ গ্রহণ করার।সেইসাথে প্রয়োজন ঐতিহ্যগত একাডেমিক শিক্ষাব্যবস্থা পুনঃমূল্যায়নের।

যদিও শিক্ষার অন্তর্নিহিত মূল্য উচ্চ রয়েছে,তবু এটা স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে ডিগ্রিগুলি তাদের দীপ্তি হারাচ্ছে। তবে, এটি শিক্ষার সমাপ্তির সংকেত দেয় না; বরং, এটি শেখার এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নমনীয় পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার কথা বলে। তাই বিকল্প শিক্ষাগত পথগুলিকে গ্রহণ করার মাধ্যমে, আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে কেবল ডিগ্রী দিয়েই নয়, আধুনিক অর্থনীতিতে উন্নতির জন্য প্রয়োজন কোনও বিষয়ে দক্ষতা এবং জ্ঞান । এটি করার মাধ্যমে, আমরা একটি ভবিষ্যত তৈরি করতে পারি যেখানে শিক্ষা সাফল্যের পথে নিছক চেকবক্সের পরিবর্তে সুযোগের জন্য একটি সত্যিকারের অনুঘটক হিসাবে কাজ করবে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top