আপনার অনিয়মিত ঘুম কি আপনাকে অসুস্থ করে তুলছে?

অনিয়মিত ঘুম ও সময় । গ্রাফিক্স – উত্তরাপথ

উত্তরাপথঃঅনিয়মিত ঘুম এর সময়সূচী কি আপনাকে অসুস্থ করে তুলছে? আমরা সকলেই জানি যে একটি ভাল রাতের ঘুম আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য অত্যাবশ্যক।সম্প্রতি দ্য ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা অনিয়মিত ঘুম -এর ধরণ এবং ক্ষতিকারক অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে একটি আশ্চর্যজনক সংযোগ উন্মোচিত করেছে।বিজ্ঞানীদের বক্তব্য কাজের দিন এবং ছুটির দিনগুলির মধ্যে ঘুমের ধরণে পরিবর্তন হলে , এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ শরীরের কার্যকলাপেও পরিবর্তন ঘটায়।যা আমাদের শরীরে ওজন বৃদ্ধি, হার্টের সমস্যা এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম বলতে ট্রিলিয়ন ব্যাকটেরিয়াকে বোঝায় যা আমাদের পাচনতন্ত্রে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, হজমে সহায়তা করতে, ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করতে  এমনকি আমাদের মানসিক সুস্থতাকেও প্রভাবিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি সুষম এবং বৈচিত্র্যময় অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম সর্বোত্তম স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত ঘুম অপরিহার্য।

এছাড়াও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমে অনিয়মিত ঘুম -এর ধরণগুলির প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষণায় সুস্থ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল । গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বিশ্লেষণ করা হয়েছে । গবেষণায় একটি দল যারা বিভিন্ন ঘুমের সময়সূচী অনুসরণ করেছে , আর অন্য দলটি যার মধ্যে অনিয়মিত ঘুমের ধরণের সদস্যরা ছিল।পর্যবেক্ষণে গবেষকরা অনিয়মিত ঘুম এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমে ভারসাম্যহীনতার মধ্যে একটি সম্পর্ক আবিষ্কার করেছেন। যেখানে অনিয়মিত ঘুম ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া হ্রাসের সাথে যুক্ত।

এই গবেষণার ফলাফলগুলি অনিয়মিত ঘুমের ধরণগুলির সাথে যুক্ত স্বাস্থ্যের উপর তার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমে ভারসাম্যহীনতা স্থূলতা, ডায়াবেটিস, প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাধি সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যের অবস্থার সাথে যুক্ত। অতএব, অনিয়মিত ঘুম এই অবস্থার বিকাশ বা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।

আমাদের দেহ একটি প্রাকৃতিক অভ্যন্তরীণ ঘড়িতে কাজ করে যা সার্কাডিয়ান রিদম নামে পরিচিত, যা ঘুম-জাগরণ চক্র সহ বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। অনিয়মিত ঘুমের ধরণ দ্বারা এই ছন্দে ব্যাঘাত ঘটানো, যেমন অসময়ে ঘুম এবং ঘুমের সময়সূচীতে ঘন ঘন পরিবর্তন, আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে ।

একটি স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্য, একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘুমের সময়সূচী স্থাপন এবং বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি স্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিন অর্জনের জন্য এখানে কয়েকটি টিপস দেওয়া হল-

 বিছানায় ঘুমতে যাওয়ার এবং প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন, এমনকি সপ্তাহান্তেও। এটি আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদম নিয়ন্ত্রিত করতে সাহায্য করে এবং ভাল ঘুমের গুণমানকে উন্নত করে।

 আপনার শোবার ঘর অন্ধকার, শান্ত এবং আরামদায়ক তাপমাত্রায় রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। নীল আলো নির্গত ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি সরান, কারণ এটি আপনার ঘুমের প্রক্রিয়াতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

ঘুমের আগে একটি রুটিন তৈরি করুন যাতে বই পড়া বা ধ্যান অনুশীলনের মতো কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই ক্রিয়াকলাপগুলি আপনার শরীরকে সংকেত দিতে সহায়তা করতে পারে যে এটি ঘুমের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়।

 ঘুমানোর সময় ক্যাফিন, নিকোটিন এবং অ্যালকোহল খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো ঘুমের ধরণকে ব্যাহত করতে পারে এবং আপনার বিশ্রামের গুণমানকে প্রভাবিত করতে পারে।

এরপরও আপনি যদি ক্রমাগত ঘুমের সমস্যা বা অনিয়মের সম্মুখীন হন, তাহলে একজন  চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী ।

একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘুমের সময়সূচী বজায় রাখা শুধুমাত্র বিশ্রামের ঘুমের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি একটি স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনিয়মিত ঘুম এর ধরণ অন্ত্রের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলির সাথে যুক্ত। সাম্প্রতিক গবেষণায় আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে

উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি।  ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে।  আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি।  এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।  সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে।  এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top