কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যে স্ক্রিন আসক্তির প্রভাব

উত্তরাপথঃ আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ এবং ভিডিও গেম কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।অধিকাংশ  কিশোর-কিশোরী দিনের বেশীরভাগ সময় কাটায় মোবাইল দেখে যা ধীরে ধীরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে স্ক্রিন আসক্তিতে।ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্ক্রিন আসক্তি একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা।কিশোর-কিশোরী থেকে তাদের অবিভাবক কেউই মুক্ত নয় এর প্রভাব থেকে।   

এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সমস্যাটি নিয়ে।কিভাবে আমরা বুঝব যে কে স্ক্রিন আসক্ত এবং এক্ষেত্রে আমরা কিভাবে সেই সমস্ত কিশোর-কিশোরীদের  এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারি।সেইসাথে , আমরা এটাতেও জোর দেব যে কেন স্ক্রিনের ব্যবহারের সময়ের চেয়ে ব্যবহারের ধরন বেশি গুরুত্বপূর্ণ

প্রথমেই আসা যাক স্ক্রিন আসক্তি কী এই প্রসঙ্গে। স্ক্রিন আসক্তি হল যখন কোনো কিশোর বা কিশোরী নিজের কাজের বাইরে অতিরিক্ত সময় ধরে মোবাইল, ট্যাব বা কম্পিউটারে ভিডিও দেখে, গেম খেলে বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে মগ্ন থাকে — এমনকি পড়াশোনা, ঘুম, খাওয়া বা পরিবারকে সময় দেওয়ার চেয়েও সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারে কিশোরদের মধ্যে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন সমস্যা । অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো এত ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে, তাই অনেক সময় আমরা প্রথমে বুঝতেই পারি না। কিন্তু একটু সচেতন হলে আপনি আপনার সন্তানের স্ক্রিন আসক্তির লক্ষণগুলো  খুব সহজেই চিহ্নিত করতে পারবেন। এখানে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেওয়া হলো:

আপনার ছেলেমেয়ে যদি—

  • সারাদিন ফোন নিয়ে বসে থাকে
  • বারবার রেগে যায় বা খিটখিটে ব্যবহার করে
  • খাবার টেবিলেও মোবাইল ছাড়তে চায় না
  • বাইরে খেলতে বা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে চায় না
  • চোখ লাল, ঘুম কম, মাথাব্যথা বা ক্লান্তি অনুভব করে

তাহলে বুঝবেন  সাবধান হওয়ার সময় এসেছে।

অনেকেই ভাবেন, “স্ক্রিনের সময় কমাতে হবে”। কিন্তু গবেষণা বলছে, সময়ের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কীভাবে স্ক্রিন ব্যবহার করছে:

  • যদি ওরা অনলাইনে পড়াশোনা করে বা কিছু শেখে, সেটি খারাপ নয়।
  • সমস্যা তখনই যখন সারা সময় শুধু রিল ভিডিও, গেম বা ইনস্টাগ্রামে সময় যায়।

কীভাবে সাহায্য করবেন?

১. মোবাইল ছাড়তে বলার আগে আপনি নিজেও স্ক্রিন ব্যবহার কম করুন। আপনার আচরণ দেখে ওরাও শিখবে।

২. প্রতিদিন অন্তত একবেলা একসঙ্গে খাওয়া, গল্প করা, হাঁটতে যাওয়া—এগুলো ওদের মন ভালো রাখবে।

৩. পড়াশোনা, খেলাধুলা, ঘুম, স্ক্রিন—সব কিছুর জন্য সময় নির্ধারণ করে দিন এবং তা আগে থেকে জানিয়ে দিন। আগে থেকে জানালে তাদের মানাতে সুবিধা হবে।

৪ পুরনো গল্পের বই, ছবি আঁকা, গান শেখা বা রান্নার কিছু শিখতে দিন। এতে মোবাইল ছাড়াও মজা পাবে।

৫. “স্ক্রিন ফ্রি ডে” পালন করুন—যেদিন বাড়ির সবাই মিলে স্ক্রিন ছাড়া দিন কাটান।

৬. ওদের মনের কথা শুনুন, ওরা কী ভাবছে জানুন। বোঝার চেষ্টা করুন যে ওদের দোষ নয়—এই আসক্তি একধরনের মানসিক চাপের ফল।

মোবাইল, ইন্টারনেট বা স্ক্রিন একেবারেই যে খারাপ তা নয়। তবে কিশোর বয়সে সঠিক গাইডলাইন না পেলে এটি আসক্তির রূপ নিতে পারে। মা ও অভিভাবকদের সহানুভূতি ও বুদ্ধিমত্তা ওদের সঠিক পথ দেখাতে পারে।যেমনটা আমাদের মায়েরা একসময় আমাদের হাত ধরে শিখিয়েছেন — আজকের দিনে আমাদেরও দরকার সে রকম ধৈর্য, বোঝাপড়া ও ভালোবাসা সহকারে সন্তানদের পাশে থাকা।

কিন্তু এরপরও যদি দেখেন স্ক্রিন  আসক্তির এই লক্ষণগুলো দিনের পর দিন বাড়ছে, এবং আপনি কিছুতেই সামলাতে পারছেন না, তখন একজন মনোবিশেষজ্ঞের (সাইকোলজিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্ট) পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top