

দেবারতী দেঃ একটি ছোট্ট গ্রামে, যেখানে ধানখেতের সবুজ আর নদীর কলতান একে অপরের সঙ্গে মিশে যায়, সেখানে থাকতেন মাধুরী। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, কিন্তু তার চোখে এখনও জ্বলত সেই তরুণী মেয়েটির স্বপ্ন, যে একদিন শহরে গিয়ে নিজের ছেলে অমিতের জন্য একটা ভালো জীবন গড়ে দিতে চেয়েছিল। মাধুরী একজন মধ্যবয়সী মা, যার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল তার একমাত্র ছেলে অমিতকে ঘিরে।
অমিত ছিল মাধুরীর গর্ব। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনায় সে ছিল সেরা। মাধুরীর স্বামী মারা গিয়েছিলেন যখন অমিত মাত্র দশ বছরের। সেই থেকে মাধুরী একা হাতে ছেলেকে মানুষ করেছেন। দিনরাত খেটে, অন্যের বাড়িতে কাজ করে, ধানখেতে মজুরি করে তিনি অমিতের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতেন। অমিতও মায়ের ত্যাগের মর্যাদা রাখত। সে কলকাতার একটি নামী কলেজে পড়াশুনা করে , সে এখন শহরে একটি বড় কোম্পানিতে চাকরি করে।
কিন্তু মাধুরীর মন ছিল অস্থির। অমিত শহরে গেছে তিন বছর হয়ে গেল, কিন্তু বাড়ি ফিরেছে মাত্র একবার। ফোনে কথা হয়, কিন্তু সেই কথায় মাধুরীর মন ভরে না। “মা, আমি খুব ব্যস্ত। এবার পুজোয় আসব,” অমিত বলে। কিন্তু পুজো আসে, চলেও যায়। অমিতের দেখা মেলে না।
মাধুরী প্রতিদিন সকালে উঠে বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে দূরের রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যদি অমিতের ছায়া দেখা যায়! সে তার ছেলের পছন্দের মাছের ঝোল রান্না করে, তার পুরনো জামাটা সেলাই করে রাখে, যদি হঠাৎ সে চলে আসে। কিন্তু দিনগুলো কেটে যায়, আর মাধুরীর অপেক্ষা কেবল দীর্ঘ হয়।
একদিন গ্রামে খবর এলো, অমিত বিয়ে করেছে। শহরের একটি মেয়েকে, নাম রিয়া। মাধুরী খুশি হলেন, কিন্তু মনের কোণে একটা চাপা ব্যথা। অমিত তাকে বলেনি। সে শুধু ফোনে বলল, “মা, আমি রিয়াকে নিয়ে শীঘ্রই আসব।” মাধুরী হাসলেন, কিন্তু চোখের কোণে জল চিকচিক করছিল।
মাস কেটে গেল। এক সন্ধ্যায়, যখন মাধুরী বারান্দায় বসে তার পুরনো রেডিওতে ভাটিয়ালি গান শুনছিলেন, দূরে একটা গাড়ির আলো দেখা গেল। তার হৃৎপিণ্ড দ্রুত লাফিয়ে উঠল। গাড়িটা থামল, আর তা থেকে নামল অমিত। তার পাশে একটি সুন্দরী মেয়ে, রিয়া।
মাধুরী দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। “অমিত, তুই এসেছিস!” তার গলা ভারী হয়ে গেল। অমিত হাসল, কিন্তু তার চোখেও জল ছিল। “মা, আমি দেরি করে ফেলেছি। কিন্তু এবার আমি থাকব। আমি আর রিয়া এখানেই থাকতে চাই, তোমার কাছে।”
মাধুরীর বুকের ভেতরটা যেন হালকা হয়ে গেল। তিনি রিয়ার দিকে তাকালেন, যিনি লাজুক হাসি দিয়ে বললেন, “মা, আমি শুনেছি আপনার হাতের মাছের ঝোল নাকি অমিতের খুব পছন্দ। আমাকে শিখিয়ে দেবেন?” মাধুরী হেসে ফেললেন। তার অপেক্ষার দিনগুলো যেন সার্থক হয়ে উঠল।
সেই রাতে, ছোট্ট বাড়িটা হাসি, গল্প আর ভালোবাসায় ভরে উঠল। মাধুরী জানতেন, তার অপেক্ষা শেষ হয়েছে। তার ছেলে ফিরে এসেছে, তার সংসার আবার পূর্ণ হয়েছে।
আরও পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে
উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন