

উত্তরাপথঃ ভাবুন তো, যদি আপনাকে যদি বলা হয় আপনি দিনে মাত্রদুই ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবেন—কেমন লাগবে? হয়তো প্রথমেই মনে হবে, এ তো অসম্ভব! কিন্তু জাপানের আইচি প্রদেশের ছোট্ট শহর টয়োয়াকে এবার এমনই এক অভিনব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় এসেছে।জাপানের টয়োয়াকে শহরের স্থানীয় সরকার একটি অভিনব প্রস্তাব নিয়ে এসেছে—নাগরিকদের প্রতিদিন মাত্র দুই ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রস্তাবটি আইনি বাধ্যবাধকতা নয়, বরং একটি স্বেচ্ছাসেবী নির্দেশিকা, যা মানুষকে তাদের স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের ব্যবহার কমাতে উৎসাহিত করবে। বিবিসি’র খবর অনুযায়ী, এই প্রস্তাবটি আগামী অক্টোবর থেকে কার্যকর হতে পারে।
টয়োয়াকে শহরের মেয়র মাসাফুমি কোকি বলেছেন, “দুই ঘণ্টার সীমা কেবল একটি নির্দেশিকা, যা নাগরিকদের তাদের স্মার্টফোনের ব্যবহার নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করবে। এটি কোনওভাবেই নাগরিকদের অধিকার সীমিত করা বা বাধ্যবাধকতা আরোপ করার উদ্দেশ্যে নয়।” তিনি আরও বলেন, “আমি আশা করি, এটি প্রতিটি পরিবারের জন্য তাদের স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় এবং সময়সীমা নিয়ে আলোচনার সুযোগ করে দেবে।”
মেয়র স্বীকার করেছেন যে স্মার্টফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত উপকারী এবং অপরিহার্য। কিন্তু তিনি উল্লেখ করেছেন যে এটি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সমস্যা এবং শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের সুস্থ ঘুমের ধরনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। জুলাই মাসে Journal of Human Development and Capabilities-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে স্মার্টফোনের ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। এছাড়াও, ২০২৩ সালে মার্কিন সার্জন জেনারেল ভিভেক মূর্তি সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ জারি করেছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে এটি শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য এটি “গভীর ঝুঁকি” তৈরি করতে পারে।
প্রস্তাবিত এই নির্দেশিকায় ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের রাত ৯টার পর এবং কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের রাত ১০টার পর স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবটি শহরের নাগরিকদের মধ্যে ইতিমধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। The Mainichi পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ২১ থেকে ২৫ অগাস্টের মধ্যে স্থানীয় সরকার ৮৩টি ফোন কল এবং ৪৪টি ইমেল পেয়েছে, যার প্রায় ৮০% ছিল নেতিবাচক মতামত।
অনেক নাগরিক এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ। একজন বাসিন্দা বলেন, “স্মার্টফোন আমাদের জীবনের একটি অংশ। এটি সীমিত করা বাস্তবসম্মত নয়।” অন্যদিকে, কেউ কেউ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন, বিশেষ করে অভিভাবকরা যারা তাদের সন্তানদের স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত।
বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ইউনেস্কো’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার শিশুদের মনোযোগ, সৃজনশীলতা এবং সামাজিক মেলামেশার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। জাপানের মতো উন্নত দেশগুলোতে, যেখানে প্রযুক্তি জীবনের অঙ্গ, এই ধরনের উদ্যোগ নতুন বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।
টয়োয়াকে শহরের এই প্রস্তাবটি কেবল একটি স্থানীয় উদ্যোগ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন ব্যবহারের সংস্কৃতি নিয়ে নতুন আলোচনার সূচনা করতে পারে। এই প্রস্তাব পাস হলে, এটি অন্যান্য শহর হিসাবে দেশের জন্য একটি নজির হয়ে উঠতে পারে।সেই সাথে এই প্রস্তাব আমাদের সকলকে ভাবিয়ে তুলতে পারে—আমরা কি স্মার্টফোনকে নিয়ন্ত্রণ করব, নাকি স্মার্টফোন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে? টয়োয়াকের উদ্যোগ হয়তো বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু এটি সবার জন্য এক বড় সতর্কবার্তা। পরিবারে বসে যদি আমরা নিজেরাই আলোচনা করি, এটি কি আমাদের জীবনকে সহজ করছে, নাকি আমাদের সময় ও মানসিক শান্তি কেড়ে নিচ্ছে? টয়োয়াকে শহরের এই উদ্যোগ হয়তো আমাদের সবাইকে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে।
আরও পড়ুন
World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়
উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে। সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন