

উত্তরাপথঃ ঠান্ডা জলে থাকা ঠান্ডা ভাব আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে মনে করছেন গবেষকরা। অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত শরীরকে ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে রাখলে এটি আপনার কোষগুলিকে চাপ এবং ক্ষতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন মাত্র এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ঠান্ডা জলে স্নানের পর,আমাদের কোষগুলি আরও ভালোভাবে পরিষ্কার এবং মেরামতের লক্ষণ দেখায়। এটি রোগ থেকে রক্ষা করতে এবং বার্ধক্যকে ধীর করতে সাহায্য করতে পারে।
ঠান্ডাা জল কীভাবে আপনার কোষকে প্রভাবিত করে
অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন যে ঠান্ডা জল কীভাবে আপনার কোষের ভিতরের ছোট অংশগুলিকে প্রভাবিত করে। তারা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন: ‘অটোফ্যাজি’ (একটি প্রক্রিয়া যেখানে আপনার শরীর কোষের ভিতরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলি পরিষ্কার করে) এবং ‘অ্যাপোপটোসিস’ (ভাঙা বা ক্ষতিগ্রস্ত কোষ অপসারণের প্রক্রিয়া)। গবেষণায় দেখা গেছে যে শরীরকে ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে আনা এই প্রাকৃতিক পরিষ্কার এবং মেরামতের প্রক্রিয়াগুলিকে উন্নত করতে পারে, সেইসাথে কোষগুলিকে চাপের প্রতি আরও স্থিতিস্থাপক করে তোলে।
কেলি কিং এবং অধ্যাপক গ্লেন কেনির নেতৃত্বে এই গবেষণাটি করা হয়েছিল। তারা দশজন সুস্থ যুবকের সাথে কাজ করেছিলেন। এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন, পুরুষরা প্রায় ১৪°C (৫৭.২°F) তাপমাত্রায় এক ঘন্টা ঠান্ডা জলে বসেছিলেন। প্রতিটি সেশনের আগে এবং পরে, বিজ্ঞানীরা তাদের কোষের ভিতরে কী ঘটছে তা দেখার জন্য রক্তের নমুনা নিয়েছিলেন।
অধ্যাপক কেনি বলেন, “আমাদের ফলাফল দেখায় যে বারবার ঠান্ডার সংস্পর্শে আসা অটোফ্যাজি বাড়ায়, যা কোষগুলিকে নিজেদের রক্ষা এবং মেরামত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এটি শরীরকে আরও ভালভাবে চাপকে মোকাবেলা করতে এবং সম্ভবত দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে পারে।”
গবেষকদের কথায় প্রথমে, শরীরকে ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে এনে কোষের উপর তাঁর প্রভাব বোঝা কঠিন ছিল এবং অটোফ্যাজি খুব ভালোভাবে কাজ করছিল না। কিন্তু প্রতিদিন এক সপ্তাহ ঠান্ডা জলে স্নানের পর, কোষগুলি মানিয়ে নিতে শুরু করে। অটোফ্যাজি আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং কোষের ভিতরে ক্ষতির লক্ষণ কমে যায়। এর অর্থ হল ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে আসার পর শরীর নিজেকে পরিষ্কার এবং মেরামত করতে আরও ভাল ভাবে সক্ষম হয়ে ওঠে।
কেলি কিং ব্যাখ্যা করেছেন, “সপ্তাহের শেষে, মানুষের কোষগুলি ঠান্ডা এবং চাপ মোকাবেলায় অনেক ভাল ছিল। এটি দেখায় যে শরীর ঠান্ডা জলে অভ্যস্ত হতে পারে এবং শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।”
শুধু ক্রীড়াবিদদের জন্য নয়
অনেকে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি বা ক্রীড়াবিদদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ঠান্ডা জলে স্নান করার পরামর্শ দেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে ঠান্ডা জলে স্নান রোগ প্রতিরোধ করতে এবং কোষগুলিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সুস্থ রেখে বার্ধক্য ধীর করতে সাহায্য করতে পারে।
অধ্যাপক কেনি আরও বলেন, “তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের শরীরকে কীভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তা বোঝা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যারা প্রায়শই চরম পরিবেশে থাকেন তাদের জন্য।”
কেলি কিং বলেন, “শরীর কত দ্রুত ঠান্ডা জলে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে তা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। ঠান্ডা জল আমাদের কোষগুলির স্বাস্থ্য দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে এবং আরও ভালভাবে কাজ করতে, তরুণ থাকতে এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।”
যদিও এই ফলাফলগুলি উত্তেজনাপূর্ণ, তবে এই সুবিধা কেবল তরুণ পুরুষদের মধ্যেই দেখা গেছে। মহিলাদের এবং অন্যান্য বয়সের মানুষদের জন্য একই সুবিধা পাওয়া যায় কিনা তা দেখার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
সূত্রঃ “The Effect of 7-Day Cold Water Acclimation on Autophagic and Apoptotic Responses in Young Males” by Kelli E. King, James J. McCormick and Glen P. Kenny, 27 November 2024, Advanced Biology.
DOI: 10.1002/adbi.202400111
আরও পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন