“ দিনে প্রকৃতপক্ষে কত পা-হাঁটা উচিত ?” – সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে লেখা

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্মার্টফোন ও ওয়্যারেবল ডিভাইসে স্টেপ কাউন্টিং জনপ্রিয় হলেও, প্রশ্ন থেকে যায়: প্রাত্যহিক কতগুলো ধাপ হাঁটা প্রকৃতভাবে স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন? এই প্রবন্ধে সমসাময়িক গবেষণা ও বিশ্লেষণগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

১. ১০,০০০ ধাপ: একটি ভুল ধারনা

– ১৯৬০-এর দশকে জাপানে পণ্যের প্রচারের  উদ্দেশ্যে ১০,০০০ ধাপ নির্ধারণ করা হয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয় (Financial Times, New York Post)।
– সংস্করণ-ভিত্তিক গবেষণা দেখায়, ৭,০০০ ধাপেই গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যের সুবিধা পাওয়া যায়, এবং ১০,০০০ এর উপরে গিয়ে লাভের হার কম হয় (The Times of India, The Guardian)।

২. স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ধাপের সংখ্যা

৭,০০০ ধাপ/দিন হলে:

  • সামগ্রিক মৃত্যুহার প্রায় ৪৭% কমে যায়,
  • হৃদরোগ ঝুঁকি ২৫% কমে,
  • ক্যান্সার ৩৭%, ডায়াবেটিস ১৪%, মস্তিষ্কের রোগ (ডিমেনশিয়া) ৩৮%, বিষণ্নতা ২২%, পড়ে গিয়ে আহত হওয়া ঝুঁকি ২৮% কমে (New York Post, The Guardian)।

– মাত্র ২,০০০–৪,০০০ ধাপ দিনে হাঁটলেও মৃত্যুহার ও হৃদরোগের ঝুঁকি নিম্ন পর্যায়ে আসে; গবেষণায় দেখা গেছে ২,০০০ ধাপ হাঁটলেও কিছুটা লাভ হয় (New York Post, The Times of India, Harvard Health)।

– ধাপ বাড়ানোর হারও গুরুত্বপূর্ণ: প্রতি ১,০০০ ধাপ বাড়লে মোট মৃত্যুহার প্রায় ১৫% কমে যায়, এবং প্রতি ৫০০ ধাপ বাড়লে হৃদরোগ ঝুঁকি ৭% কমে যায় (Harvard Health)।

৩. বয়সভিত্তিক ধাপ গাইডলাইন

৬০ বছর বা তার বেশি বয়স: ৬,০০০–৮,০০০ ধাপ/দিনে স্বাস্থ্যের সুবিধা পাওয়া যায়; এই পরিমাণেই মৃত্যু ও হৃদরোগ ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় (PMC, Reddit)।
৬০ বছরের  নীচে থাকা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সুপারিশ: ৮,০০০–১০,০০০ ধাপ।

– বিশিষ্ট একটি কোহর্ট‑স্টাডিতে দেখা গেছে, ৬০০০–৯০০০ ধাপ দিনে হাঁটলে ≥৬০ বছরের নীচে থাকা  ব্যক্তিদের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ৪০‑৫০% পর্যন্ত কমে যায়।

৪. ধাপের গতি কি গুরুত্বপূর্ণ?

– জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (NIH) গবেষণায় দেখা গেছে, মোটধাপের সংখ্যা (step count) ধাপের গতি (intensity) থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ; অর্থাৎ গতি কম হলেও ধাপ বেশি হলে স্বাস্থ্য উপকার পাওয়া সম্ভব (National Institutes of Health (NIH), NHLBI, NIH)।
– তবে বয়স্কদের উপর করা কিছু গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতি মিনিটে ধাপের বৃদ্ধি (cadence ১৪ স্টেপ/মিনিট) হলে শারীরিক কার্যক্ষমতা উন্নত হয়; বিশেষ করে ৭৯ বছর বয়স্ক মানুষদের মধ্যে (The Washington Post)।

৫. কেন ৭,০০০ ধাপই বাস্তবসম্মত ও উপযুক্ত

– Lancet Public Health‑এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৭,০০০ ধাপে রোগ ও মৃত্যু ঝুঁকি ক্রমাগত কমে—কিন্তু পরবর্তীতে উপকার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং ১০,০০০–১২,০০০ ধাপে গিয়ে পরিসর সীমিত হয় (Financial Times, The Times of India)।
– বিশেষজ্ঞদের এক বড় অংশের মতে  ১০,০০০ ধাপ করলে ক্ষতি হবে না বললেও অর্থাৎ , “more is better”‑এর দর্শন প্রযোজ্য হলেও, সর্বাধিক সুবিধা ৭,০০০ ধাপেই পাওয়া যায় এবং সেটা অধিক বাস্তবায়নযোগ্য (The Guardian, New York Post)।

৬. ধাপে-বৃদ্ধির জন্য সহজ উপায়

পরামর্শে বলা হয়েছে:

  • কাজের বিরতির সময় হাঁটা (walk breaks),
  • লাঞ্চের পর  হালকা হাঁটা,
  • মিটিং চলাকালীন হাঁটাচলা করা,
  • বেশী পরিমাণে জল পান করে বারবার ওঠা‑বসা,
  • সিঁড়ি ব্যবহার করা ইত্যাদি (PMC)।
  • তবে প্রাথমিকভাবে, যাদের খুবই কম হাঁটা হয়, তারা ২,০০০–৪,০০০ ধাপ দিনে দিয়ে শুরু করতে পারেন।৬০ বছরের নিচে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৮,০০০–১০,০০০ ধাপ/দিন উপযুক্ত; কম হলেও স্বাস্থ্যে বড় ক্ষতি হয় না।৬০ বছরের বেশি বয়সীরা ৬,০০০–৮,০০০ ধাপ/দিন বজায় রাখলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।
  • ৭,০০০ ধাপ/দিন সব ধরনের মানুষের জন্য সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত “sweet spot” যেখানে স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য সুবিধা পাওয়া যায়, এতে অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন কমে এবং বাড়তি সময় ব্যয়ও কম হয়।



খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে

বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে

উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top