

উত্তরাপথঃজাপান সবসময় তার পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলার জন্য সারা বিশ্বে প্রশংসিত। এবার সেই দেশেই পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে চালু হয়েছে এক অভিনব পাবলিক টয়লেট সার্টিফিকেশন সিস্টেম। এই ব্যবস্থা শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নয়, নিরাপত্তা, ব্যবহার উপযোগিতা এবং সহজলভ্যতার দিকেও বিশেষ নজর দিচ্ছে।
২০০৩ সালে পূর্ব জাপানের গুনমা প্রিফেকচারে প্রথম এই সার্টিফিকেশন প্রকল্প শুরু হয়। ২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত এখানে ২৫৯টি শৌচাগার এই স্বীকৃতি অর্জন করেছে। প্রতিটি শৌচাগারকে একটি ২৫-দফা মানদণ্ডে বিচার করা হয়, যার মধ্যে আছে—
- পরিচ্ছন্নতা
- নিরাপত্তা
- ব্যবহার-বান্ধবতা
- বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য সুবিধা
প্রত্যেকটি সার্টিফাইড শৌচাগারে ঝোলানো থাকে একটি বিশেষ ফলক, যেখানে রয়েছে প্রিফেকচারের জনপ্রিয় মাসকট “গুনমাচান”।
তাকাসাকি শহরের কান্নোইয়ামা ফ্যামিলি পার্ক সাতবার এই স্বীকৃতি পেয়েছে। এখানকার নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসাকো কোবায়াশি বলেন—
“আমরা প্রতিদিন মনোযোগ দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করি, যাতে ভ্রমণকারীরা নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন।”
পর্যটক বা স্থানীয়রা সহজেই এই সার্টিফাইড শৌচাগারগুলির অবস্থান খুঁজে নিতে পারেন একটি অনলাইন ম্যাপের মাধ্যমে। এমনকি প্রতিবন্ধী ভ্রমণকারীরাও তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন এই সার্টিফিকেশনের উপর নির্ভর করে। এটি কেবল একটি সাধারণ উদ্যোগ নয়, বরং ভ্রমণ-বান্ধব অবকাঠামো তৈরির বড় পদক্ষেপ।
এই উদ্যোগ এখন শুধু গুনমানেই সীমাবদ্ধ নয়।
- ২০১২ সাল থেকে কোচি প্রিফেকচার (পশ্চিম জাপান)
- ২০১৪ সাল থেকে নাগানো প্রিফেকচার (কেন্দ্রীয় জাপান)
নিজস্ব সংস্করণ চালু করেছে। নাগানো প্রিফেকচারের এক কর্মকর্তা বলেন—
“শৌচাগারও আতিথেয়তার একটি অংশ।”
জাপান টয়লেট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কোহেই ইয়ামামতো এ প্রকল্পকে “একটি অগ্রসরমান উদ্যোগ” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে এটি সারা দেশে জনসেবামূলক শৌচাগার উন্নয়নের মানদণ্ড হয়ে উঠবে।
আসলে শৌচাগারের মান শুধু পরিচ্ছন্নতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি দেশের সামাজিক দায়িত্ব, পর্যটন ব্যবস্থাপনা এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার প্রতিচ্ছবি। ভারতের মতো দেশে যদি এরকম একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড টয়লেট সার্টিফিকেশন সিস্টেম চালু হয়, তবে গ্রামীণ ও শহুরে উভয় অঞ্চলের পর্যটকবান্ধব অবকাঠামো আরও মজবুত হবে।জাপানের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে, ছোট পদক্ষেপও একটি দেশের পর্যটন শিল্প ও জনসেবার মান উন্নয়নে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে।
আরও পড়ুন
ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে
উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন