

প্রীতি গুপ্তাঃ মহালয়া সনাতন ধর্মে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন, যা নবরাত্রির ঠিক পূর্বে পালিত হয়। এই দিনটি দেবী দুর্গার পৃথিবীতে আগমনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। হিন্দু পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, মহালয়ার দিনে মা দুর্গা স্বর্গলোক থেকে পৃথিবীতে আসেন এবং তাঁর পূজার মাধ্যমে ভক্তরা তাঁকে স্বাগত জানান। এই দিনটি শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বাঙালি সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
মহালয়া হল পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনা। পিতৃপক্ষের শেষ দিনে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয়, এবং এরপর শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনার প্রস্তুতি। পুরাণ অনুসারে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আগমন করেন এবং তাঁর পূজার মাধ্যমে ভক্তরা তাঁর কৃপা লাভের জন্য প্রার্থনা করেন। এই দিনে দেবীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজা করা হয় এবং বিশেষ মন্ত্র ও আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর আগমন উদযাপিত হয়।
বাঙালির কাছে মহালয়া শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি দুর্গাপূজার প্রস্তুতির আনুষ্ঠানিক সূচনা। এই দিনে ভোরবেলা বাঙালি পরিবারগুলোতে রেডিও বা টেলিভিশনে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের অমর কণ্ঠে “মহিষাসুরমর্দিনী” শ্রবণের রীতি প্রচলিত। এই অনুষ্ঠানটি বাঙালির হৃদয়ে এক অমোঘ স্থান দখল করে আছে। দেবী দুর্গার মহিমা ও তাঁর মহিষাসুর বধের কাহিনী এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
মহালয়ার এই দিনটি বাঙালির মনে দুর্গাপূজার উৎসাহ ও উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। পূজার মণ্ডপ তৈরি, প্রতিমা নির্মাণ, এবং উৎসবের প্রস্তুতি এই সময় থেকেই শুরু হয়। এটি একটি সময় যখন পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়, এবং সমাজে একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়।
মহালয়ার দিনে অনেকে পবিত্র নদীতে স্নান করে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন। এছাড়াও, মন্দিরে বা বাড়িতে দেবী দুর্গার পূজার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কোথাও কোথাও এই দিনে বিশেষ হোম বা পূজার আয়োজন করা হয়। ভক্তরা মনে করেন যে, এই দিনে দেবীকে পূজা করলে তিনি তাঁদের জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও শক্তি প্রদান করেন।
মহালয়া কেবল একটি ধর্মীয় দিন নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আবেগের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই দিনে দেবী দুর্গার আগমনের মাধ্যমে ভক্তদের মনে আনন্দ ও শক্তির সঞ্চার হয়। মহালয়া আমাদের সকলের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও ঐক্যের বার্তা নিয়ে আসে। মহালয়া আমাদের মনে করিয়ে দেয়—অশুভ শক্তি যতই প্রবল হোক না কেন, শুভ শক্তির জয় অবশ্যম্ভাবী। এটি কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং শুভ শক্তির উদযাপন, আশা ও আনন্দের সূচনা।
আরও পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন