রম্যরচনা- হলুদ পাখী ও বউ এর গল্প

অসীম পাঠকঃ লেখার মাঝে মহারানী ভিক্টোরিয়ার ডাক, শোনো না , আম গাছের মগডালে একটা হলুদ মুনিয়া পাখী বসে আছে।
তুমি জানালা থেকে দেখছো আর আমি একমনে টাইপ করছি পূজো সংখ্যার উপন্যাস, তুমি অস্থির হয়ে ডাকলে , আমি ঈষৎ বিরক্তি নিয়ে কাজ ফেলে তোমার পাশে দাঁড়ালাম , তুমি আমগাছ হলুদ পাখি নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর অনতিদূরে জনবহুল রাস্তায় গাড়ি চলাচল দেখছো , আমি লেখাটার মধ্যে ডুবে ছিলাম , তাই আমার চোখের ধূসর ক্যানভাসে এসব কিছুই নেই , শুধু তোমাকে দেখছি , তোমার মুখের প্রশান্তি দেখছি। অনন্ত নীলিমায় কি অদ্ভুত সারল্য‌, শিশু সুলভ দুষ্টুমিতে ঠিক তখনই তুমি বললে , আমার ওই পাখিটা চাই। আমি অবাক , বউ এর আব্দার বলে কথা , কিন্তু এ যে আকাশের চাঁদ চেয়ে বসার মতো। বাচ্চা চাঁদ চাইলে তাকে থালার উপর জল দিয়ে চাঁদের ছায়ায় ভোলানো যায় , পাখী চাইলে মেলা থেকে রঙ করা পাখী কিনে এনে ভোলানো যায় …. আর তোমাকে আমি কি দিয়ে ভোলাবো ?
একটু হেসে তোমার গালে আদর করতে গেলাম , তুমি কপট রাগে সরে দাঁড়ালে , বুঝলাম জীবনের গোধূলি বেলায় আম গাছে উঠে একটা কান্ড বাধবে , লঙ্কা কান্ডের সমতুল্য আর কি …..
কিন্তু গাছে উঠলেই কি পাখীটা ধরতে পারবো , না সে কি বুঝবে আমার মনের কথা , আমার বউ এর অভিমান ….. আমার নীল পাঞ্জাবি আর চশমাটা বউ এর হাতে ধরিয়ে দোতলা থেকে নেমে এলাম নীচে , বাড়ির সামনের ওই আমগাছ টাতে । পাখী না পাই চেষ্টা করতে হবে , অন্ততঃ বউ জানবে আমি বাধ্য স্বামী , আসামী নই রে বাবা।
এদিকে আমি রাস্তায় দেখছি , আমাকে কেউ দেখছে কিনা , মানে হাসির খোরাক হচ্ছি না তো আধুনিক প্রজন্মের কাছে। এবার গাছে ওঠার চেষ্টা , ওমা পেটটা বেড়েছে , ওজন কমাতে হবে। কষ্ট করে হাত পাঁচেক উঠে প্রথম ডালে পা রেখে হলুদ মুনিয়া খুঁজছি, ওদিকে হলুদ মুনিয়া ফুড়ুৎ …. বউ যেনো এতোক্ষণ নাটক দেখছিলো , নীচে নেমে আমাকেই ঝাড় দিচ্ছে, আরো দু চারজন পথচারী জমা এসবে। হুলুস্থুল কান্ড। আমি কোনরকমে লাফ দিয়ে নামতেই ডান পায়ে ব্যাথা অনুভব করলাম , মচকে গেছে। আমার মহারানী ততক্ষণে আমাকে যেনো পারলে ভস্মিভূত করে দেন। তার অগ্নিদৃষ্টি আর মুখে অমৃত বানী বর্ষন হচ্ছে , আমার কোন বুদ্ধি নেই , কখন যে আমার বোধ হবে …. এসব আরো কত । আমাকে দিয়ে যদি একটা কাজ হয়। কবিতা গল্প লেখা মগজে কি এতো ধার আছে যে বউ এর মন বুঝবো। আরে দেবতারাও পারেনি আমি কোন ছার। মুনীর ঋষি রা দীর্ঘ সাধনা করেও স্ত্রী চরিত্র বুঝতে অপারগ।
যাক বাবা ঘরে এসে বসতে বউ এক গ্লাস গরম দুধ এনে দিলো , আমি বাবা আরো নাজেহাল, ব্যাথা পায়ে তার উপর চা কফি আরেকটা জিনিষ ওটা পেলে ব্যাথা গায়েব হতো , সেই সোমরস, সে না হয় জুটবে না জানি … তা সেসব না দিয়ে গরম দুধ , কিছু বলার উপায় নেই , আমি এখন অপরাধী। একটু একটু করে গরম দুধে চুমুক দিচ্ছি আর আমার নূরজাহান আমার পায়ে আইস মেসেজ করছে , উপরে গরম নীচে ঠান্ডা, বুঝতে ইচ্ছে করছে হৃদয়টা কি আমার এখন নাতিশীতোষ্ণ! কিছু একটা যেনো কাছে পেতে ইচ্ছে করছে‌। এই আইস মেসেজের হাতগুলো নিজের হাতে নিয়ে বুকে টানতে ইচ্ছে করছে আমার মহারানীকে।
দুধের গ্লাস নামিয়ে এক ঝটকায় কাছে আনতেই
সেই আদি অকৃত্রিম লজ্জা নিয়ে সে বলে উঠলো , কি যে করো , এই ছাড়ো না। পায়ের ব্যাথাটা মোচড় দিয়ে ঊর্ধ্বগামী যেনো। বউ বললো হলুদ মুনিয়া পাখী আনতে উনি ছুটলেন , বলি কোনদিকে বুড়ো হচ্ছো , আমি বললাম আমার ওই পাখীটা চাই , আরে মোবাইলটা তো তোমার টেবিলেই ছিলো , তার বীরপুরুষ পাখীর ছবি না তুলে , ছুটলে পাখী ধরতে। কপাল আমার , সারাজীবন এই হাঁদারামকে বুঝিয়েও আর মানুষ করতে পারলাম না।
আমার তখন মনে হচ্ছে মানুষ না গো জানোয়ার হয়েই থাকি তোমার আঁচলে। কথা না বাড়িয়ে বুকের গভীরে মিশিয়ে নিলাম আমার নীলাঞ্জনাকে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top