

উত্তরাপথঃ ঘুম মানবদেহের জন্য এক অত্যাবশ্যক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ঘুমের অভাব ক্লান্তি, মানসিক চাপ, হৃদ্রোগের ঝুঁকি, এমনকি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যাভ্যাস ঘুমের মানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজ আমরা খাদ্য ও ঘুমের সম্পর্ককে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করব।
কখনও কি ভেবে দেখেছেন যে আপনি যা খাচ্ছেন তা আপনার ঘুমের উপর প্রভাব ফেলতে পারে? আমরা অনেকেই জানি যে পেট ভরে খেয়ে ঘুমাতে গেলে ঘুম ভালো হয় না এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লান্ত বোধ হয়। এর একটি বড় কারণ হলো রাতে বেশি খাওয়া। অতিরিক্ত খাবার হজম করতে শরীরের অতিরিক্ত শক্তি লাগে, যা আমাদের পাকস্থলীর উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং রাতের ঘুমকে ব্যাহত করে।এক্ষেত্রে ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ও পানীয় আমাদের রাতের ঘুম কমিয়ে দেয়।
আবার অন্যদিকে এমন কিছু খাবার আছে যা আমাদের রাতের ঘুমকে আরও গভীর করে তুলতে পারে।এই আলোচনায় সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক গবেষণা (২০২১–২০২৪) থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষভাবে যেসব খাদ্য উপাদান যেগুলি মেলাটোনিন ও ট্রিপটোফ্যান উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, সেগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
গবেষণার ফলাফলগুলো থেকে দেখা যায়—
১। মেলাটোনিনসমৃদ্ধ খাদ্য: ডিম, মাছ, বাদাম, বীজ এবং টক চেরির রস শরীরে মেলাটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে ঘুম উন্নত করে।
২। ট্রিপটোফ্যানসমৃদ্ধ খাদ্য: দুধ, পূর্ণশস্য, ডাল, শাকসবজি ও ফল ট্রিপটোফ্যান সরবরাহ করে, যা থেকে শরীরে সেরোটোনিন এবং পরবর্তীতে মেলাটোনিন তৈরি হয়।
৩। কিউই ফল ও টক চেরির রস: ছোট আকারের পরীক্ষায় দেখা গেছে, এগুলো রাতে ঘুমের সময়কাল বৃদ্ধি ও মান উন্নত করে।
৪। ম্যাগনেশিয়াম: শাকসবজি, বাদাম, ডাল ও পূর্ণশস্যে থাকা ম্যাগনেশিয়াম কর্টিসল উত্তেজনা কমিয়ে স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ম্যাগনেশিয়াম সাপ্লিমেন্ট গভীর ঘুম (deep sleep) ও স্বপ্নঘুম (REM sleep) বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৫। খাওয়ার সময়: শোবার অন্তত ২–৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করা এবং প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া ঘুমের জৈব-ঘড়ি (circadian rhythm) সুসংহত রাখে।
খাদ্যাভ্যাস ও ঘুমের সম্পর্ক জটিল হলেও স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে সুষম খাদ্য ঘুমের মান উন্নত করে। মেলাটোনিন ও ট্রিপটোফ্যানসমৃদ্ধ খাবার সরাসরি প্রভাব ফেলে, তবে শুধু একটি খাবার নয়—দিনভর সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখাই সবচেয়ে কার্যকর। এছাড়া ম্যাগনেশিয়াম, আঁশ, ও উদ্ভিজ্জ খাদ্যে থাকা পলিফেনল শরীরের প্রদাহ কমিয়ে ঘুমে সাহায্য করে। খাদ্যের পাশাপাশি খাওয়ার সময়, আলো ও অন্ধকারে শরীরের সংস্পর্শ, এবং দৈনন্দিন শারীরিক কার্যকলাপও ঘুমের মান নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।
উদ্ভিজ্জভিত্তিক সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ফল ও শাকসবজি, পূর্ণশস্য, বাদাম, বীজ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ ঘুমের মান উন্নত করার বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপায়। তবে দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা বা ঘুমের ব্যাধি থাকলে শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস নয়, চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ অপরিহার্য।
আরও পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন