

উত্তরাপথঃ আপনি কি জানেন যে কিছু কুকুর শত শত খেলনার নাম শিখে মনে রাখতে পারে? সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে কুকুররা তাদের খেলনার নাম শেখার বিশেষ ক্ষমতা রাখে তারা বছরের পর বছর এই জ্ঞান ধরে রাখতে পারে।কিছু অসাধারণ প্রতিভাধর কুকুর শত শত খেলনার নাম শিখতে পারে। এটা কিভাবে সম্ভব? গবেষকরা গিফটেড ওয়ার্ড লার্নার (GWL) কুকুর নামে পরিচিত এই বিশেষ কুকুরগুলি নিয়ে গবেষণা করছেন এবং দেখেছেন যে তারা অন্তত দুই বছর পর্যন্ত এই নামগুলি মনে রাখতে পারে।
হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের ফ্যামিলি ডগ প্রজেক্টের গবেষকরা ছয়টি জিডব্লিউএল(GWL) কুকুরকে পর্যবেক্ষণ করেছেন যে তারা কত দ্রুত খেলনার নতুন নাম শিখতে পারে। এক্ষেত্রে তারা কুকুরের মালিকদের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ১২টি নতুন খেলনার নাম শেখাতে বলেছিল। প্রসঙ্গত কুকুরগুলি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করত (নরওয়ে, স্পেন, ব্রাজিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস এবং হাঙ্গেরি) তাই, কুকুরগুলি নতুন খেলনাগুলির নাম শিখেছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য, গবেষকরা অনলাইনে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। এই অনলাইন পরীক্ষাগুলি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়েছিল, যাতে বিশ্বজুড়ে কুকুর প্রেমীরা GWL কুকুরের আশ্চর্যজনক প্রতিভার সাক্ষী হতে পারে। কুকুরগুলি দর্শকদের এবং বিজ্ঞানীদের একইভাবে বিস্মিত করেছিল, কারণ আশ্চর্যজনকভাবে, কুকুরগুলি মাত্র সাত দিনে ১১-১২ টি নতুন খেলনার নাম শিখতে সক্ষম হয়েছিল!
পরীক্ষাগুলি সম্পন্ন হওয়ার পরে, বিজ্ঞানীরা মালিকদের খেলনাগুলি সংরক্ষণ করতে বলেছিলেন যাতে GWL কুকুরগুলি মাঝের সময়টা আর খেলনাগুলি না দেখতে পায়।”আমরা দুই বছর অপেক্ষা করেছিলাম এবং তারপরে কুকুরগুলিকে আবার পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তারা এখনও খেলনার নামগুলি মনে রেখেছে কিনা তা দেখার জন্য,” বলেছেন ডঃ শ্যানি ড্রর, প্রধান গবেষক।
দুর্ভাগ্যবশত, এই সময়ের মধ্যে একটি কুকুর মারা গিয়েছিল, তাই মাত্র পাঁচটি GWL কুকুর নতুন ফলো-আপ গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছিল এবং কিছু মালিক কিছু খেলনা হারিয়ে দিয়েছিল। এই সমস্ত সমস্যা সত্ত্বেও, পরীক্ষা করা ছয়টি কুকুরের মধ্যে পাঁচটি কুকুর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ড্রর বলেন, “দুই বছর পর, আমাদের সকলেরই খেলনাগুলোর নাম মনে রাখতে কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু কুকুরদের নয়!” উল্লেখযোগ্যভাবে, এই গবেষণায় পরীক্ষিত পাঁচটি কুকুরের মধ্যে চারটি GWL কুকুর দুই বছর পরও ৬০ -৭৫% খেলনার নাম মনে রেখেছিল।
গবেষকরা কুকুরদের মধ্যে এই ক্ষমতা দেখে অবাক হয়েছিলেন এবং তারা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে এই কুকুরেরাও মানুষের মত শিশু হিসাবে দ্রুত একটি বড় শব্দভাণ্ডার তৈরি করে। তারা মনে করে যে এই বিশেষ কুকুরগুলির নতুন শব্দ শেখার এবং মনে রাখার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে।কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই গবেষণায় শুধুমাত্র এই বিশেষ GWL কুকুরের দিকে নজর দেওয়া হয়েছিল, সব কুকুর নয়। সুতরাং, আপনার লোমশ বন্ধু অল্প সময়ের জন্য কিছু জিনিস মনে রাখতে সক্ষম হলেও, তারা এই প্রতিভাধর কুকুরের মতো দুই বছরের জন্য খেলনার নাম মনে রাখতে পারে না।
সুতরাং, পরের বার যখন আপনি আপনার কুকুরের সাথে খেলবেন, মনে রাখবেন যে কিছু কুকুর সুপারহিরো হয় যখন শেখার এবং মনে রাখার ক্ষেত্র আসে।
সূত্রঃ “Dogs with a vocabulary of object labels retain them for at least 2 years” by Shany Dror, Ádám Miklósi and Claudia Fugazza, 1 September 2024, Biology Letters.
আরও পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন