

প্রীতি গুপ্তাঃ জয়বন কামান(Jaivana Cannon )বিশ্বের বৃহত্তম এবং ভারী কামানগুলির মধ্যে একটি। এটি ১৮ শতকে ভারতে তৈরি হয়েছিল এবং ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য বিস্ময় । এই কামানটি কেবল তার আকারের কারণেই নয়, এর কারুশিল্প এবং এর পিছনের গল্পের কারণেও চিত্তাকর্ষক। ১৭২০ সালে আম্বরের (আধুনিক জয়পুর) মহারাজা সওয়াই জয় সিংহ দ্বিতীয়ের রাজত্বকালে নির্মিত এই বিশাল কামানটি এখনও পর্যন্ত নির্মিত বিশ্বের বৃহত্তম চাকাযুক্ত কামান। জয়বন কামানের সৃষ্টি আজও ভারতীয় ধাতুবিদ্যার দক্ষতার এক শীর্ষবিন্দু হিসাবে চিহ্নিত।
# ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও জয়বন কামানের জন্ম
১৮ শতকের গোড়ার দিকে, ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সেই সময় একটি ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি করেছিল যা আঞ্চলিক রাজ্যগুলি পূরণ করতে চেয়েছিল। মুঘলদের দীর্ঘকালীন মিত্র আম্বরের (পরবর্তীতে জয়পুর) রাজপুত শাসকরা, বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন দাবি করতে শুরু করেছিলেন। মহারাজা সওয়াই জয় সিং দ্বিতীয়, একজন দক্ষ শাসক ও একজন দূরদর্শী নেতা ছিলেন। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তার আগ্রহের জন্য পরিচিত ছিলেন।তিনি মারাঠাদের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্য এবং মুঘল উপদলের অবশিষ্টাংশের হুমকির বিরুদ্ধে তার রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য এবং তার সেনাবাহিনীর শক্তি প্রদর্শনের জন্য জয়বন কামান তৈরি করা হয়েছিল।
বর্তমানে জয়বন কামানটি জয়পুরের কাছে আরাবল্লি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত জয়গড় ফোর্টে রয়েছে। কামানের বিশাল আকারের জন্য এটিকে প্রায় ৯ ফুট ব্যাসের চাকার এক বিশেষ এক গাড়ির উপর বসানো রয়েছ। জয়বন মূলত একটি প্রতীকী প্রতিরোধক ছিল, যা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের পরিবর্তে জয়পুরের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
জয়বন কামানের বৈশিষ্ট্য


১. জয়বন কামানটি প্রায় ২০ ফুট লম্বা এবং প্রায় ৫০ টন ওজনের। এর বিশাল আকার এটিকে দর্শনার্থীদের জন্য একটি অনন্য আকর্ষণ করে তোলে।
২. কামানটি ব্রোঞ্জ এবং লোহা দিয়ে তৈরি, যা তাদের শক্তি এবং স্থায়িত্বের জন্য মূলত সেই সময় বেছে নেওয়া হয়েছিল। উপকরণের এই সংমিশ্রণ কামানটিকে এত দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে সাহায্য করেছে।
৩. জয়বন কামানটি ৫০ কিলোমিটার (প্রায় ৩১ মাইল) দূরে কামানের গোলা ছুঁড়তে পারে।
৪. কামানটিতে অপূর্ব নকশা খোদাই রয়েছে যা ভারতীয় কারিগরদের শৈল্পিকতাকে প্রতিফলিত করে। যা কামানটিকে কেবল একটি অস্ত্রই নয় বরং শিল্পকর্মও করে তোলে।
যদিও জয়বন কেবল একবারই পরীক্ষামূলকভাবে ছোড়া হয়েছিল— যা নিকটবর্তী পাহাড়ের ঢালে একটি গর্ত তৈরি করেছিল, তবে এটি কখনও যুদ্ধে ব্যবহার হয়নি। এটি ১৮ শতকে ভারতীয় রাজপরিবারের শক্তি এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতীক। আজ, এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। আজ বিশ্বজুড়ে দর্শনার্থীরা এই অবিশ্বাস্য কামানটি দেখতে এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আসেন।আপনি যদি জয়বন ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনার ভ্রমণপথে জয়গড় দুর্গটি একবার ঘুরে যেতে ভুলবেন না।
জয়বন কামান কেবল একটি অস্ত্র নয়; এটি একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং ভারতীয় কারিগরদের অসাধাবণ দক্ষতার প্রতীক। এর বিশাল আকার, চিত্তাকর্ষক পরিসর এবং সুন্দর নকশা ইতিহাস এবং প্রকৌশলে আগ্রহী যে কোনও ব্যক্তির জন্য এটি অবশ্যই দেখার মতো। তাই আপনি যখন জয়গড় দুর্গটি ভ্রমণ করবেন, তখন এই অসাধারণ কামানটি দেখার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।
আরও পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক
উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন