স্বাস্থ্যকর জীবনধারা জেনেটিক ব্যাধি থেকেও অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারে

উত্তরাপথঃ আপনি কি জানেন যে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা আপনাকে দীর্ঘ জীবনযাপন করতে সাহায্য করতে পারে? যদি আমরা ভালোভাবে দেখি, তাহলে একজন ব্যক্তি কতদিন বাঁচবে তা মূলত তার জীবনধারা এবং তার বাবা-মা বা পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জেনেটিক ব্যাধির উপর নির্ভর করে। এই জিনগত রোগগুলি এবং এর সাথে যুক্ত জিনগুলি মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটায়। এর সাথে সাথে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে।

কিন্তু একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, উন্নত খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মতো ভালো অভ্যাস গ্রহণের মাধ্যমে অকাল মৃত্যুর এই জিনগত ঝুঁকি ৬২ শতাংশ কমানো যেতে পারে। এর অর্থ হল, উন্নত জীবনযাপনের মাধ্যমে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রোগগুলি থেকে মুক্তি পেতে পারি।বিভিন্ন, গবেষণা অনুসারে, একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা আপনার বয়স পাঁচ বছরেরও বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে।

ধূমপান, মদ্যপান এবং খারাপ খাদ্যাভ্যাসের মতো কিছু বিষয় আমাদের স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ুর উপর গভীর প্রভাব ফেলে।বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেছেন যে, খারাপ জীবনযাত্রা অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনার জিন বা জেনেটিক প্রবণতা যাই হোক না কেন, এর খুব বেশি প্রভাব নেই। এই গবেষণার ফলাফল BMJ Evidence-Based Medicine-এ প্রকাশিত হয়েছে, যা এই বিষয়ে আরও অনেক দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে তৈরি।

পলিজেনিক রিস্ক স্কোর (পিআরএস) অর্থাৎ একজন ব্যক্তি কতদিন বাঁচবে তা জানতে বেশ কয়েকটি জেনেটিক রূপ পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুটি জীবনের উপর যে জেনেটিক ঝুঁকির সম্মুখীন হবে তা নির্ধারণ করা হয়। তবে, ধূমপান, মদ্যপান, খাদ্যাভ্যাস, ঘুম এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মতো জীবনযাত্রার কারণগুলিও দীর্ঘায়ুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিজ্ঞানীদের মতে, জিনের কারণে আয়ুষ্কাল কমে যাওয়ার সম্ভাবনা পূরণে একটি সুস্থ জীবনধারা কীভাবে সাহায্য করতে পারে সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল না। এটি বোঝার জন্য, বিজ্ঞানীরা তাদের নতুন গবেষণায় ৩৫৩,৭৪২ জন প্রাপ্তবয়স্কের তথ্য অধ্যয়ন করেছেন।এই সকল মানুষের স্বাস্থ্য তথ্য ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ইউকে বায়োব্যাঙ্ক দ্বারা রেকর্ড করা হয়েছিল। ২০২১ সাল পর্যন্ত এই ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২৪,২৩৯ জন অংশগ্রহণকারী মারা যান।

গবেষকরা স্বাস্থ্যকর জীবনধারার উপর ভিত্তি করে একটি পরীক্ষা করেন। এর মধ্যে ছিল ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন কমানো বা বর্জন করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, শরীর সুস্থ রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া এবং ভালো খাবার খাওয়ার মতো বিষয়গুলি ছিল। এই ভিত্তিতে সকল মানুষকে অনুকূল, মধ্যপন্থী এবং প্রতিকূল এই তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২৩ শতাংশ অনুকূল, ৫৬ শতাংশ মধ্যবর্তী এবং ২২ শতাংশ প্রতিকূল জীবনধারা বিভাগে অন্তর্গত ছিল।

ফলাফলে আরও দেখা গেছে যে স্বল্প-জীবনী জিনযুক্ত ব্যক্তিদের জীবনযাত্রা নির্বিশেষে, দীর্ঘ-জীবনী জিনযুক্ত ব্যক্তিদের তুলনায় অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা ২১ শতাংশ বেশি। একইভাবে, যাদের জীবনযাত্রা খারাপ তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার লোকেদের তুলনায় ৭৮ শতাংশ বেশি, তাদের জিনগত প্রবণতা যাই হোক না কেন।একটি উন্নত জীবনযাত্রার মধ্যে চারটি প্রধান বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল: ধূমপান না করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। সামগ্রিকভাবে, গবেষণার ফলাফল দেখায় যে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা জেনেটিক প্রভাবে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ৬২ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে, গবেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, যাদের জিনগত কারণে স্বল্প জীবনযাপনের ঝুঁকি বেশি, তারা ৪০ বছর বয়সে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করেও তাদের আয়ু প্রায় ৫.৫ বছর বৃদ্ধি করতে পারেন।গবেষকরা আরও জোর দিয়ে বলেন যে যেহেতু ভালো জীবনযাত্রার অভ্যাস প্রায়শই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই তৈরি হয়ে যায়, তাই এই পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই জিনগত ত্রুটি গুলি মোকাবিলা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। গবেষণার ফলাফল স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


কৃষ্ণগহ্বরের "ছায়া" ও "ছবি"

ড. সায়ন বসু: ১৭৮৩ সালে ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল (John Michell) ‘ডার্ক স্টার’ (dark stars) শিরোনামে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেন। তার গবেষণা পত্রের বিষয়বস্তু ছিল "বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোন বস্তু যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না"। এখান থেকেই মূলত কৃষ্ণগহ্বরের (Black Hole) ধারণা আসে এবং এটি নিয়ে গবেষনা ও অনুসন্ধান শুরু হয়। পরবর্তিতে অবশ্য এটি বিজ্ঞান মহলে একটি অযৌক্তিক তত্ত্ব হিসেবে বেশ অবহেলার স্বীকার হয়। আলোর মত কোন কিছু বেরিয়ে আসতে পারবে না এমন একটি তত্ত্ব বিজ্ঞানীদের কাছে বেশ অযৌক্তিক মনে হয়েছিল। তাই ধীরে ধীরে থেমে যায় কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষনা। .....বিস্তারিত পড়ুন

AFC এশিয়ান কাপ ২০২৩: সুনীলদের Blue Tiger অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি

উত্তরাপথ: অস্ট্রেলিয়া, উজবেকিস্তান এবং সিরিয়ার পাশাপাশি এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৩-এর বি গ্রুপে সুনীলদের Blue টাইগাররা। Blue টাইগাররা ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪-এ আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়ামে গ্রুপ পর্বের তাদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে।ভারতীয় পুরুষ ফুটবল দল এএফসি এশিয়ান কাপ কাতার ২০২৩-এ ১৩ জানুয়ারি আহমদ বিন আলি স্টেডিয়ামে গ্রুপ বি-তে প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবে। এশিয়ার শীর্ষ ২৪ টি দল দোহার কাটরা অপেরা হাউসে তাদের গ্রুপ পর্বে অংশ গ্রহণ করেছে। এএফসি এশিয়ান কাপ কাতার ১২ জানুয়ারী .....বিস্তারিত পড়ুন

মানুষে মানুষে ঐক্য কীভাবে সম্ভব

দিলীপ গায়েন: হিন্দু,মুসলমান,ব্রাহ্মণ,তফসিলি।সকলেই মানুষ।কিন্তু এদের মধ্যে যে ব্যবধান তা হলো ধর্ম ও সাংস্কৃতিক। এই ব্যবধান মুছতে পারলে একাকার হওয়া সম্ভব। যারা বলছে আর্থিক সমতা প্রতিষ্ঠা হলে ব্যবধান মুছে যাবে, তাদের কথাটি বোধ হয় সঠিক নয়।তার প্রমাণ গরিব ও শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে আর্থিক ব্যবধান নেই। অথচ জাতিভেদ রয়ে গেছে। তেমনি কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ব্যতীত ধনী ও শিক্ষিত সমাজে আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও জাতিভেদ রয়ে গেছে। একমাত্র হাসপাতালে বা চিকিৎসা ব্যবস্থায় জাতিভেদ নেই।কারণ সেখানে তো প্রচলিত ধর্মজাত প্রভেদ বা পরিচয় নেই। আছে মেডিসিন, যা সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। কারোর ধর্ম বা জাত দেখে প্রেসক্রিপশন হয় কি? এখানে মানুষের একমাত্র এবং শেষ পরিচয় সে মানুষ। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top