

উত্তরাপথঃ UNSW-এর বিজ্ঞানীদের একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু “পরিবেশ-বান্ধব” রেফ্রিজারেন্ট ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাসে ভেঙে যেতে পারে, কারণ এগুলির মধ্যে রয়েছে এমন রাসায়নিক পদার্থ যা বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রেফ্রিজারেন্ট কী?
রেফ্রিজারেন্ট হল এমন রাসায়নিক পদার্থ যা জিনিসপত্র ঠান্ডা বা গরম রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার এবং হিটিং সিস্টেমে। এগুলি অ্যারোসল স্প্রে, অগ্নিরোধী এবং ফোম প্লাস্টিক তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।
নতুন রেফ্রিজারেন্ট এবং তাদের ঝুঁকি
সম্প্রতি, হাইড্রোফ্লুরোওলেফিন (HFOs) নামক এক ধরণের রেফ্রিজারেন্ট জনপ্রিয় হয়েছে কারণ এগুলি দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং পুরানো ধরণের তুলনায় পরিবেশের জন্য ভাল বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে, গবেষকরা এখন প্রশ্ন তুলছেন যে এগুলি আসলে কতটা নিরাপদ। আমরা জানি যে HFOs ট্রাইফ্লুরোএসিটালডিহাইডের মতো কিছু রাসায়নিকে পরিণত হতে পারে, তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে এগুলি আরও ফ্লুরোফর্ম নামক আরও ক্ষতিকারক গ্যাসে পরিবর্তিত হতে পারে কিনা, যা অত্যন্ত শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস সে নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন।
নতুন গবেষণা কী দেখায়
ডঃ ক্রিস্টোফার হ্যানসেন এবং UNSW-এর তার দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ পেয়েছেন যে HFOs সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায় না – তারা অল্প পরিমাণে ফ্লুরোফর্মে পরিণত হয়, এটি একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস যা ২০০ বছর ধরে বায়ুমণ্ডলে থাকতে পারে এবং CO₂ এর চেয়ে ১৪,০০০ গুণ বেশি তাপ আটকে রাখতে পারে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
অতীতে, CFC এর মতো রেফ্রিজারেন্ট ওজোন স্তরের ক্ষতি করত, তাই এগুলি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তারপর, HFC তাদের প্রতিস্থাপন করেছিল—কিন্তু এগুলি বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য ভয়াবহ প্রমাণিত হয়েছিল। এখন, HFO হল নতুন বিকল্প, কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেছে যে এতেও লুকানো বিপদ থাকতে পারে।
গবেষণার নেতৃত্বদানকারী ডঃ ক্রিস্টোফার হ্যানসেন বলেছেন: “আমরা এখনও HFO-এর সম্পূর্ণ প্রভাব জানি না, তবে আমরা সমস্যাগুলি তাড়াতাড়ি ধরার চেষ্টা করছি—কোনও পরিবেশগত ক্ষতি করার আগে।”
### বিজ্ঞানীরা কীভাবে এটি আবিষ্কার করলেন?
অনুসন্ধানগুলি নিশ্চিত করেছে যে HFO থেকেও অল্প পরিমাণে ফ্লুরোফর্ম তৈরি হতে পারে, এবং যেহেতু ফ্লুরোফর্ম তাপকে এত কার্যকরভাবে আটকে রাখে, তাই এটি ভবিষ্যতে একটি গুরুতর পরিবেশগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
জলবায়ু এবং নীতির জন্য প্রভাব
এই গবেষণাটি জলবায়ু মডেলগুলিকে উন্নত করার জন্য এবং নীতিনির্ধারকদের এই রাসায়নিকগুলিকে আরও ভালভাবে পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে। UNSW-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন যে আমাদের এই প্রতিক্রিয়াগুলি নিয়ে অধ্যয়ন চালিয়ে যেতে হবে, বিশেষ করে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে, তাদের প্রভাব সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য।
এরপর কী?
ডঃ হ্যানসেন এবং তার দল তাদের গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, পরিবেশের উপর HFO-গুলির প্রভাব আরও ভালভাবে বোঝার জন্য, বিভিন্ন ধরণের সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এই রাসায়নিকগুলি কীভাবে ভেঙে যায় তা পরীক্ষা করার চেষ্টা করছেন ।এই গবেষণার লক্ষ্য হল অতীতের ভুলগুলি এড়ানো—যেমন সীসাযুক্ত পেট্রোল বা ওজোন সংকট—যেখানে ক্ষতিকারক রাসায়নিকগুলি কেবল বড় ক্ষতি হওয়ার পরেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
সংক্ষেপে, “সবুজ” রেফ্রিজারেন্টগুলি নিরাপদ বলে মনে হলেও, এতে লুকানো বিপদ থাকতে পারে তাই আমাদের গ্রহকে রক্ষা করার জন্য এই বিষয়ে আরও তদন্তের প্রয়োজন।
সূত্রঃ “Fluoroform (CHF3) Production from CF3CHO Photolysis and Implications for the Decomposition of Hydrofluoroolefins and Hydrochlorofluoroolefins in the Atmosphere” by Joshua D. Thomson, Jyoti S. Campbell, Ethan B. Edwards, Christopher Medcraft, Klaas Nauta, Maria Paula Pérez-Peña, Jenny A. Fisher, David L. Osborn, Scott H. Kable and Christopher S. Hansen, 23 December 2024, Journal of the American Chemical Society.
DOI: 10.1021/jacs.4c11776
আরও পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন