ক্যাফেইন আপনার মস্তিষ্ককে ঘুমের মধ্যেও “জাগিয়ে” রাখে!

উত্তরাপথঃ আপনি কি সকালে এক কাপ কফি দিয়ে দিন শুরু করেন ? কিংবা সকালে চা, চকোলেট, এনার্জি ড্রিংক বা কোমল পানীয় পছন্দ করেন ? তাহলে জেনে নিন, এগুলোর মধ্যে থাকা ক্যাফেইন আপনার ঘুমের সময়ও মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে পারে! মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নতুন গবেষণায় এমনই চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে।

ক্যাফেইন শুধু আপনাকে দিনের বেলা জাগিয়ে রাখে না, এটি ঘুমের সময় মস্তিষ্কের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকেও বদলে দেয়। এতে শরীর ও মনের সতেজতা এবং স্মৃতিশক্তির উপর প্রভাব পড়ে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ফিলিপ থলকে ও কারিম জারবি। তাঁরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি (EEG) ব্যবহার করে দেখেছেন, ক্যাফেইন ঘুমের সময় মস্তিষ্কের সংকেতের জটিলতা বাড়ায়। এটি মস্তিষ্ককে একটি “ক্রিটিকাল” অবস্থায় নিয়ে যায়, যেখানে মস্তিষ্ক সুশৃঙ্খল কিন্তু নমনীয় থাকে। এই অবস্থায় মস্তিষ্ক তথ্য প্রক্রিয়া করতে, শিখতে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

কিন্তু সমস্যা হলো, এই “জাগ্রত” অবস্থা ঘুমের সময় মস্তিষ্কের বিশ্রামে বাধা দেয়। গবেষক জুলি ক্যারিয়ার বলেন, “ক্যাফেইন মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে, যার ফলে এটি রাতে মস্তিস্ককে পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে দেয়  না। ফলে স্মৃতি গঠন ও মনোযোগ ক্ষমতার উপর প্রভাব পড়তে পারে।”

কিভাবে গবেষণা হলো?

গবেষকরা ৪০ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের ঘুমের সময় মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেছেন। এক রাতে তাঁরা ঘুমের আগে ক্যাফেইন ক্যাপসুল খেয়েছেন, আরেক রাতে প্লাসিবো (নকল ওষুধ)। ফলাফলে দেখা গেছে, ক্যাফেইন গ্রহণের পর মস্তিষ্কের সংকেত আরও জটিল এবং গতিশীল হয়, বিশেষ করে নন-র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (NREM) ঘুমের সময়, যা স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া, ক্যাফেইন ধীর তরঙ্গ (থিটা ও আলফা), যা গভীর ঘুমের সঙ্গে যুক্ত, কমিয়ে দেয় এবং বেটা তরঙ্গ বাড়ায়, যা জাগ্রত অবস্থায় মানসিক সক্রিয়তার সময় দেখা যায়। এর মানে, ক্যাফেইনের প্রভাবে ঘুমের সময়ও মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে, যা বিশ্রামের জন্য ক্ষতিকর।

তরুণদের উপর বেশি প্রভাব

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০-২৭ বছর বয়সী তরুণদের মস্তিষ্ক ক্যাফেইনের প্রভাবে বেশি সাড়া দেয়, বিশেষ করে REM ঘুমের সময়, যখন আমরা স্বপ্ন দেখি। এর কারণ তরুণদের মস্তিষ্কে অ্যাডেনোসিন রিসেপ্টর বেশি থাকে। অ্যাডেনোসিন হলো একটি অণু, যা দিনের বেলা মস্তিষ্কে জমে ক্লান্তি সৃষ্টি করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে এই রিসেপ্টর কমে যায়, তাই মধ্যবয়সী (৪১-৫৮) মানুষের উপর ক্যাফেইনের প্রভাব কম দেখা যায়।

কেন এটা জানা জরুরি?

আজকাল ক্যাফেইন আমাদের জীবনের একটি সাধারণ অংশ। ক্লান্তি দূর করতে আমরা অনেকেই এটির উপর নির্ভর করি। কিন্তু এই গবেষণা বলছে, ক্যাফেইন আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপে গভীর প্রভাব ফেলে, যা বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য ভিন্ন হতে পারে। তাই ক্যাফেইন গ্রহণের সময় সতর্ক থাকা উচিত, যাতে আমাদের ঘুম ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয়।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি

উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top