চাল-কফির গুণে হার্ট অ্যাটাক রোধ? নতুন গবেষণায় চমক

উত্তরাপথ;প্রতিদিনের খাবারে থাকা কিছু সাধারণ উপাদান হয়তো হৃদরোগের বিরুদ্ধে এক নতুন প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, চাল, কফি ও কিছু সবজিতে থাকা ফেরুলিক অ্যাসিড (Ferulic Acid) নামের একটি প্রাকৃতিক যৌগ হৃদয়ের ধমনী সংকোচন রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই ধমনী সংকোচনই অনেক সময় হৃদস্পন্দন অনিয়ম, বুকে ব্যথা ও হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে।

জাপানের তোহো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স অনুষদের গবেষক ড. কেনতো ইয়োশিওকা, ড. কেইসুকে ওবারাঅধ্যাপক ইওশিও তানাকা সম্প্রতি তাঁদের গবেষণাপত্রে এই ফলাফল প্রকাশ করেছেন ।

কীভাবে কাজ করে এই প্রাকৃতিক যৌগ?

গবেষণায় ব্যবহার করা হয় শূকরের করোনারি আর্টারি, যেটি মানুষের হৃদরক্তনালীর গঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলে যায়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, রাসায়নিকভাবে আর্টারি সংকোচনের সময় ফেরুলিক অ্যাসিড তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।

গবেষকরা জানান, ফেরুলিক অ্যাসিড মূলত দুটি পথে কাজ করে:

  • প্রথমত, এটি ধমনীতে ক্যালসিয়াম প্রবেশে বাধা দেয়, ফলে পেশি সংকোচন বাধাগ্রস্ত হয়।
  • দ্বিতীয়ত, ক্যালসিয়াম ছাড়া অন্য উপায়ে ধমনী সংকোচন রোধেও এটি ভূমিকা রাখে। এটি মায়োসিন লাইট চেইন নামক এক বিশেষ প্রোটিনের সক্রিয়তা কম করে, যা ধমনী সংকোচনের জন্য জরুরি।

ওষুধের চেয়েও কার্যকর?

আরও চমকপ্রদ তথ্য হলো—বাজারে প্রচলিত হৃদরোগ প্রতিরোধী ওষুধ ডিলটিয়াজেম-এর চেয়েও ফেরুলিক অ্যাসিড অনেক ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর হয়েছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

যেহেতু এটি প্রাকৃতিক নিরাপদ, তাই ভবিষ্যতে এটি খাদ্য উপাদান বা হার্টের নতুন ওষুধ তৈরির উপাদান হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে,” বলেন গবেষক ড. ইয়োশিওকা।

কোথায় পাওয়া যায় ফেরুলিক অ্যাসিড?

ফেরুলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়—

  • চালের খোসা ব্রান-
  • কফির দানায় রোস্টেড কফিতে
  • গাজর, টমেটো, আপেল, শস্যদানা, সবুজ পাতাযুক্ত সবজিতে

হৃদয়ের যত্নে খাদ্যের ভাবনা

বর্তমানে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা ভারতে ও বাংলাদেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এই অবস্থায় খাদ্যের মাধ্যমে হৃদয় সুস্থ রাখার এই সম্ভাবনা মানুষের জীবনে নতুন আশা এনে দিতে পারে।

সূত্র :“Inhibitory effects of ferulic acid on the contraction responses of porcine coronary arteries: a comparison with diltiazem”
লেখক: ড. কেনতো ইয়োশিওকা ও সহ-গবেষকবৃন্দ
প্রকাশিত: Journal of Pharmacological Sciences, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

পাঠকদের জন্য টিপস:
আপনার প্রতিদিনের খাবারে যদি নিয়মিত পরিমাণে চাল, সবজি ও কফি থাকে, তাহলে অজান্তেই আপনি হয়তো নিজের হৃদয়কে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন!

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


PAN-Aadhar link: কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে নিষ্ক্রিয় করেছে

উত্তরাপথ : আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link)করার সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ড নিষ্ক্রিয় করেছে৷ আপনি যদি এখনও প্যান কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিঙ্ক না করে থাকেন, তাহলে আপনি সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের আওতায় এসেছেন। আপনি যদি আপনার আধার কার্ডকে প্যানের সাথে লিঙ্ক করতে চান তবে আপনি জরিমানা দিয়ে এটি সক্রিয় করতে পারেন। কেন্দ্র সরকার ১১.৫ কোটি প্যান কার্ডকে আধারের সাথে লিঙ্ক না করার কারণে নিষ্ক্রিয় করেছে। একটি আরটিআই-এর জবাবে, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস জানিয়েছে যে আধার কার্ডের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক (PAN-Aadhar link) করার সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড লিঙ্ক করেননি তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৭০ কোটি প্যান কার্ড বর্তমানে ভারতে প্যান কার্ডের সংখ্যা ৭০.২ কোটিতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৭.২৫ কোটি মানুষ আধারের সাথে প্যান কার্ড লিঙ্ক করেছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন

উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি  তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top