

উত্তরাপথঃ আমরা জানি, ডিমেনশিয়া একটি ভয়ঙ্কর ও অপ্রতিরোধ্য রোগ, যা মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করে স্মৃতি এবং চিন্তাশক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। আর যদি এই রোগ পার্কিনসনের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে রোগীর অবস্থা আরও করুণ হয়। কিন্তু সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ কাশির ওষুধ ‘অ্যামব্রোক্সল’ এই পার্কিনসন-সম্পর্কিত ডিমেনশিয়ার ধ্বংসাত্মক প্রভাবকে থামাতে পারে — এবং এই খবর চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক নতুন আশার আলো উন্মোচন করেছে।
কানাডার লন্ডনের Lawson Health Research Institute-এর একদল গবেষক, JAMA Neurology পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বছরব্যাপী ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে, পার্কিনসনের সঙ্গে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ৫৫ জন রোগীর উপর পরীক্ষা চালান। তাঁদের দু’টি ভাগে ভাগ করা হয় — একদলকে প্রতিদিন অ্যামব্রোক্সল ও অন্যদলকে প্লেসেবো (ভুয়া ওষুধ) দেওয়া হয়। ফলাফল চমকে দেওয়ার মতো:
- অ্যামব্রোক্সল সুরক্ষিত, সহনীয় এবং কার্যকরভাবে মস্তিষ্কে পৌঁছায়।
- যাঁরা অ্যামব্রোক্সল নিয়েছেন, তাঁদের মানসিক ও স্মৃতিশক্তি স্থিতিশীল থাকে, কিন্তু প্লেসেবো নেওয়া রোগীদের ,মধ্যে অবস্থার অবনতি দেখা যায়।
- বিশেষ এক ধরনের উচ্চঝুঁকির জিন (GBA1) থাকা রোগীদের মধ্যে অ্যামব্রোক্সল ব্যবহারে স্মৃতিশক্তিতে উন্নতি দেখা যায়।
- মস্তিষ্কের কোষ ক্ষয় হওয়ার একটি চিহ্ন (GFAP) প্লেসেবো গ্রুপে বেড়েছে, অথচ অ্যামব্রোক্সল গ্রুপে স্থির থেকেছে — যা এটা দেখায়, অ্যামব্রোক্সল হয়তো মস্তিষ্কের কোষকে রক্ষা করতে পারে।
অ্যামব্রোক্সল আসলে একটি পুরনো ও বহুল ব্যবহৃত কাশির সিরাপ, যা ইউরোপে বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার চিকিৎসায়। কিন্তু এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে — এটি GCase নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। এই এনজাইমটি GBA1 নামক জিন দ্বারা তৈরি হয় এবং পার্কিনসন রোগে সাধারণত এর মাত্রা কম থাকে। যখন GCase সঠিকভাবে কাজ না করে, তখন মস্তিষ্কে টক্সিক পদার্থ জমতে থাকে, যা কোষ ধ্বংস করে দেয়। অ্যামব্রোক্সল এই এনজাইমকে সক্রিয় করে সেই কোষ-ধ্বংসের প্রক্রিয়া থামাতে পারে।
এই গবেষণার প্রধান গবেষক, স্নায়ুবিজ্ঞানী ড. স্টিফেন পাস্টারনাক বলেন, “আমরা কেবল রোগের লক্ষণ কমাতে নয়, বরং রোগের গতিপথই বদলাতে চেয়েছিলাম। এই গবেষণার প্রাথমিক ফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক এবং আরও বড় পরিসরের গবেষণার ভিত্তি গড়ে তুলেছে।”
তিনি আরও জানান, “বর্তমানে পার্কিনসনের বা ডিমেনশিয়ার কোনও চিকিৎসাই এই রোগ ঠিক করতে পারে না। অ্যামব্রোক্সল যদি সত্যিই মস্তিষ্ককে রক্ষা করতে পারে, তাহলে সেটি আমাদের হাতে এক বিরল ও কার্যকর অস্ত্র তুলে দেবে।”
যদিও ইউরোপে এই ওষুধটি দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপদভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এমনকি গর্ভাবস্থাতেও, তবুও কানাডা বা আমেরিকায় এখনো এটি ডিমেনশিয়া বা নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের জন্য অনুমোদিত নয়। তবে এই গবেষণা তার সম্ভাবনা এবং গুণমানকে নতুন করে সামনে এনেছে।
একটা সময় ছিল যখন অ্যামব্রোক্সল শুধু কাশির ওষুধ বলেই পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন সেটা স্মৃতিশক্তি রক্ষা ও নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ ঠেকাতে পারে — এমন সম্ভাবনা সামনে এসেছে। ডিমেনশিয়ার মতো জটিল ও কষ্টকর রোগে যদি এমন একটি সস্তা ও সহজলভ্য ওষুধ সহায়ক প্রমাণিত হয়, তাহলে কোটি কোটি রোগীর জীবন এক নতুন আশায় উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।
এই গবেষণা হয়তো চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ দিশা পাল্টে দিতে পারে। এখন দরকার আরও বড় পরিসরের ট্রায়াল এবং আন্তর্জাতিক অনুমোদনের — যাতে এই ‘সাধারণ’ ওষুধ একদিন অসংখ্য মানুষের স্মৃতির সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।
আরও পড়ুন
NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে
উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন