

গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ ভারতের মতো পরিবারকেন্দ্রিক সমাজেও আজ প্রবীণদের প্রতি অবহেলা ও নিগ্রহের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সম্প্রতি হরিয়ানার পঞ্চকুলার এক ঘটনা আরও একবার সমাজের এই নির্মম বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। সেখানে এক বৃদ্ধ দম্পতি তাঁদের পুত্র ও পুত্রবধূর সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস করলেও, তাঁদের একঘরে করে রাখা হয়, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় এবং এমনকি সম্পত্তি পুত্র ও পুত্রবধূর নামে করে দেওয়ার চাপও দেওয়া হয়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।
ভারতীয় সমাজে পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা, সেবা ও কর্তব্যের ঐতিহ্য বহু পুরনো। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেই ঐতিহ্য গভীর সংকটে পড়েছে। যেসব সন্তানদের মানুষ করতে পিতা-মাতা তাঁদের জীবনের সমস্ত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই সন্তানরাই আজ অনেক সময় তাঁদের বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি অবহেলা ও নির্যাতনের পথ নিচ্ছেন।
এই প্রেক্ষাপটে হরিয়ানা মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা প্রবীণ দম্পতির পক্ষে রায় দিয়ে স্পষ্ট করেছে যে, ‘Maintenance and Welfare of Parents and Senior Citizens Act, 2007’ অনুযায়ী, সন্তানদের কাছ থেকে প্রবীণ পিতামাতা খরচ দাবি করার অধিকার রয়েছে। এছাড়া, যদি কেউ সম্পত্তি হস্তান্তর করেন এই শর্তে যে, তাঁকে দেখাশোনা করা হবে, এবং সেই শর্ত লঙ্ঘন হয়, তবে ধারা ২৩ অনুযায়ী সেই হস্তান্তর বাতিলযোগ্য। ধারা ২৪ অনুযায়ী, প্রবীণ ব্যক্তিকে ত্যাগ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
যত আধুনিক হচ্ছে সমাজ, তত নিঃস্ব হচ্ছে মানবতা?একদিকে প্রযুক্তি ও জীবনযাত্রার মান যত উন্নত হয়েছে, ততই যেন কমেছে মানবিক মূল্যবোধ। আধুনিক জীবনের আরাম-আয়েশ পাওয়া সন্তানেরা তাঁদের বৃদ্ধ পিতামাতার ন্যূনতম যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেন না অনেক সময়। অথচ, এই মা-বাবারাই নিজেদের স্বপ্ন ত্যাগ করে সন্তানদের সুখী ভবিষ্যতের জন্য সব কিছু দিয়েছেন।
আমাদের দেশে আজও পর্যাপ্ত সংখ্যক বৃদ্ধাশ্রম নেই। যে গুটিকয়েক আছে, সেগুলোর বেশিরভাগেই পরিকাঠামো ও মানবিক সংবেদনশীলতার অভাব আছে। ফলে পরিবারে উপেক্ষিত ও নিগৃহীত প্রবীণদের জন্য একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিণতির ব্যবস্থা নেই।এটা শুধু সামাজিক বা পারিবারিক সংকট নয়, এটি মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই শুধু সরকারের নয়, সমাজের প্রতিটি সদস্যেরও দায়িত্ব রয়েছে প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি সম্মান ও যত্ন নিশ্চিত করার।
তাহলে সমাধানের পথ কী? প্রথমতআইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে,যাতে প্রবীণরা তাঁদের অধিকার সম্পর্কে জানেন ও প্রয়োজনে আইনি সাহায্য নিতে পারেন।দ্বিতীয়ত পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের পুনর্গঠন প্রয়োজন—ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের শেখাতে হবে পিতামাতার যত্ন নেওয়া কেবল কর্তব্য নয়, এটা কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।তৃতীয়তবেসরকারি ও সরকারি উদ্যোগে গুণগত মানসম্পন্ন বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলা জরুরি—যেখানে প্রবীণেরা সুরক্ষিত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন কাটাতে পারবেন।
এবং পরিশেষে সামাজিক পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেশী সচেতনতা বাড়ানো—যাতে গোপনে প্রবীণদের প্রতি নির্যাতন ঠেকানো যায়।
পরিশেষে বলা যায়, একটি সমাজ কতটা সভ্য, তা বোঝা যায় তারা তাদের প্রবীণ নাগরিকদের কীভাবে সম্মান ও যত্ন করে তাঁর উপর। বাড়িতে বয়স্ক বাবা- মা উপর নির্যাতন এ এক চরম লজ্জা । এই লজ্জা থেকে আমাদের মুক্তি চাই—নিজেদের ঘরেই যেন আর কেউ পরবাসী না হন।
আরও পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন