

উত্তরাপথঃ আমরা প্রতিদিন প্লাস্টিকের ব্যবহার করি—পানীয়ের বোতল, বাজারের ব্যাগ, খেলনা থেকে শুরু করে শ্যাম্পুর বোতল পর্যন্ত। কিন্তু সেই একই প্লাস্টিক এখন আমাদের শরীরের ভেতরে, এমনকি মস্তিষ্কের ভেতরেও ঢুকে পড়ছে—যা এক সময় অকল্পনীয় মনে হতো।
সম্প্রতি Nature Medicine-এ প্রকাশিত এক গবেষণা দেখিয়েছে, গত ২৫ বছরে সংগৃহীত মস্তিষ্কের টিস্যু নমুনায় চমকপ্রদ মাত্রায় মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানোপ্লাস্টিক (MNPs) জমা পাওয়া গেছে। গবেষকরা জানান, ২০১৬ সালে যেখানে প্রতি গ্রাম মস্তিষ্ক টিস্যুতে গড়ে প্রায় ৩,৩৪৫ মাইক্রোগ্রাম প্লাস্টিক পাওয়া যেত, ২০২৪ সালে সেই মাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪,৯১৭ মাইক্রোগ্রামে—অর্থাৎ প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
আমাদের মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখতে একটি বিশেষ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে—blood-brain barrier। এটি সাধারণত ক্ষতিকর পদার্থকে মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। কিন্তু এই গবেষণা প্রমাণ করেছে যে মাইক্রোপ্লাস্টিকও সেই প্রাচীর ভেদ করে প্রবেশ করতে সক্ষম। এমনকি লিভার ও কিডনির তুলনায় মস্তিষ্কে ১০ গুণ বেশি প্লাস্টিক জমে থাকতে দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এটি স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা প্রভাবিত করতে পারে। আরেকটি আলাদা গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে যেখানে সমুদ্রের জলে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক ছিল, সেখানে বাসিন্দাদের মধ্যে একটা বয়সের পর স্মৃতিশক্তি হ্রাস, চিন্তা-ভাবনার সমস্যা, এমনকি দৈনন্দিন কাজ (যেমন পোশাক পরা, বাজার করা) করার ক্ষেত্রেও নানা অসুবিধার মধ্যে পড়তে দেখা গেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কে পাওয়া প্লাস্টিক কণাগুলো মূলত পলিথিন (Polyethylene) জাতীয় প্লাস্টিক থেকে এসেছে—যা বাজারের ব্যাগ, বোতল বা খেলনায় ব্যবহৃত হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এগুলো মসৃণ দানার মতো নয়, বরং ধারালো ও লম্বাটে কণা—যা টিস্যুকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে মাইক্রোপ্লাস্টিক সরাসরি মস্তিষ্কে রোগ সৃষ্টি করে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন—হৃদরোগ, স্ট্রোক, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত এর সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। তাই দেরি না করে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
কী করা যেতে পারে?
- একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো (বোতল, ব্যাগ, কাঁটাচামচ ইত্যাদি)।
- খাবার সংরক্ষণে কাচ বা স্টিল ব্যবহার করা।
- প্লাস্টিকের বোতল বা জার ব্যবহারের পরিবর্তে ফিল্টার করা জল পান করা।
- প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার (recycling) বাড়ানো এবং নীতি-নির্ধারকদের উপর চাপ তৈরি করা।
কার্ডিওলজিস্ট সার্জু গণাত্রা বলেন, “আমাদের স্বাস্থ্যের সঙ্গে পৃথিবীর স্বাস্থ্যের গভীর সম্পর্ক। আমরা যে বাতাসে শ্বাস নিই, যে জল পান করি এবং যে খাবার খাই—সবকিছুতেই যদি প্লাস্টিক ঢুকে যায়, তাহলে তা পৃথিবীর সাথে সাথে আমাদের শরীরকেও ধ্বংস করবে।”এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কত দ্রুত সচেতন হব এই প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে ?
আরও পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
Roop Kishor Soni: একটি আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য তুলে ধরেছেন
উত্তরাপথঃ রাজস্থান মানেই ওজনদার রূপার গহনা ,আর তার উপর কারুকাজ। প্রচলিত এই ধারনা ভেঙ্গে আজ রূপোর গহনাকে আধুনিকতার সাথে শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন যে ব্যক্তি তিনি হলেন রূপ কিশোরী সোনী(Roop Kishor Soni)।তিনি ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছ থেকে তার অসাধারণ শিল্প কর্মের জন্য জাতীয় পুরুস্কার পান। রাজস্থানের জয়সলমেরের শহরের এই শিল্পী ৩.৮ গ্রাম ওজনের ০.৯ সেমি চওড়া রৌপ্য আংটিতে বিশ্বের আটটি আশ্চর্য খোদাই করেছেন।এই ছোট রূপার আংটিতে শিল্পী তাজমহল, সিডনি অপেরা হাউস, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, চীনের গ্রেট ওয়াল, আইফেল টাওয়ার, বিগ বেন, পিসার হেলানো টাওয়ার এবং মিশরীয় পিরামিডের চিত্র এক সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।এছাড়াও তিনি আরও দুটি পৃথক ডিজাইনের অত্যাশ্চর্য আংটি তৈরি করেছেন।৮.৬ গ্রাম ওজনের একটি রিংয়ে তিনি সূর্যাস্তের সময় ভারতীয় উট সাফারি সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভারতীয় বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন,এবং অন্যটিতে বিভিন্ন হিন্দু দেব-দেবী ছবি এবং মন্দির খোদাই করেছিলেন। শিল্পী বলেছেন যে তিনি তার বাবার কাছ থেকে তার শৈল্পিক দক্ষতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সেই সাথে তিনি বলেন "আমার বাবাও একজন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত শিল্পী ছিলেন। তিনি আমাকে শিল্পের এই দক্ষতা শিখিয়েছিলেন কারণ তিনি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের ফর্মটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।" .....বিস্তারিত পড়ুন