

পশ্চিমবঙ্গের কলেজগুলিতে অনার্স সিটের অর্ধেকেরও বেশি ফাঁকা। নতুন কেন্দ্রীয় ভর্তি পোর্টাল (WBCAP) চালু হলেও ভর্তি প্রক্রিয়ায় দেরি, বিভ্রাট ও জটিলতা শিক্ষার্থীদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে। শেষমেশ কলেজগুলো আবার পুরোনো পথে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের কলেজগুলিতে এক অভূতপূর্ব সংকট দেখা দিয়েছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে রাজ্যের ডিগ্রি কলেজগুলির অনার্স সিটের ৫৩ শতাংশ ফাঁকা। এক দশক আগেও নিজের পছন্দমত বিষয়ে অনার্স নিয়ে পড়বার সুযোগ পাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল প্রবল। পছন্দসই বিষয়ে ভর্তি হতে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীকে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হত। আজ সেই বহু কাঙ্খিত অনার্সের আসন খালি পড়ে আছে। কেন?
রাজ্য সরকার ২০২৪ সালে চালু করেছিল কেন্দ্রীয় ভর্তি পোর্টাল (WBCAP)। উদ্দেশ্য ছিল ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করা, স্বচ্ছতা আনা। কিন্তু প্রযুক্তিগত বিভ্রাট, দেরি, তথ্যের অভাব এবং বারবার প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে অনেক শিক্ষার্থী সময়মতো আবেদন করতে পারেনি। ফলে ভর্তি হয়নি। কলেজগুলো শেষমেশ বাধ্য হয়ে আবার পুরোনো পথে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে।
কিন্তু সমস্যার মূলে শুধু প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়,সমস্যার মূল কারণ আরও গভীরে। আজকের প্রজন্ম জানে—শুধু ডিগ্রি পেলে চাকরি মেলে না। বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কার্যত স্তব্ধ। স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)-এর নিয়োগ দুর্নীতি, মামলা-মোকদ্দমা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের জালে আটকে আছে। হাজার হাজার প্রার্থী বছরের পর বছর অপেক্ষা করছে, কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না। এই ব্যর্থতা শিক্ষার্থীদের মনে অনার্স পড়ার আগ্রহই নষ্ট করে দিয়েছে।
ফলে তারা ঝুঁকছে স্কিল-ভিত্তিক, পেশাভিত্তিক বা প্লেসমেন্ট-নিশ্চিত কোর্সের দিকে। আইটি, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল টেকনোলজি বা ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ে ভর্তি বাড়ছে, অথচ প্রচলিত বিষয় যেমন ইতিহাস, দর্শন, সংস্কৃত, বটানি—সেখানে সিট খালি থাকছে।
সবচেয়ে করুণ চিত্র হলো, রাজনীতি এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। শাসক দল বলে—“বিরোধীরা মামলা করছে, তাই নিয়োগ আটকে গেছে।” বিরোধীরা বলে—“শাসক দলের দুর্নীতি ঠেকাতে আদালতে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।” এই দোষারোপের খেলায় কেউ ভাবছে না সেই হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর কথা, যাদের ভবিষ্যৎ প্রতি বছর ধ্বংস হচ্ছে।
এভাবে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির দাবা খেলার গুটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই ১। ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনা জরুরি। কেন্দ্রীয় পোর্টালকে সহজ করতে হবে, তথ্য দ্রুত পৌঁছে দিতে হবে।
২। চাকরির নিশ্চয়তা ফিরিয়ে আনতে হবে। SSC-র মতো নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, দ্রুত এবং দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।
৩। অনার্স কোর্সকে সময়োপযোগী করতে হবে। নতুন ইন্ডাস্ট্রি-সংযুক্ত, স্কিল-ভিত্তিক বিষয় চালু করতে হবে।
৪। শিক্ষানীতি রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। সরকার ও বিরোধী, সবাইকে আগে দেখতে হবে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ।
শিক্ষা কোনও রাজনৈতিক খেলা নয়, এটি সমাজের ভিত্তি। আজ কলেজের অর্ধেকের বেশি আসন ফাঁকা—এ শুধু ভর্তি সংকট নয়, এটি আমাদের শিক্ষার প্রতি আস্থাহীনতার প্রতীক। যদি আমরা এখনই সতর্ক না হই, তাহলে আগামী দিনে ডিগ্রি কলেজগুলো শুধু ভবনের ভিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে, ভেতরে থাকবে না প্রাণ।
প্রশ্নটা সরল—আমরা কি রাজনীতির ঝগড়া দেখব, নাকি আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ বাঁচাব?
আরও পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে
উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Fructose: নতুন গবেষণায় ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার কারণ বলা হয়েছে
উত্তরাপথঃ একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোরালো প্রমাণ দেওয়া হয়েছে যে ফ্রুক্টোজ (Fructose), সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে থাকা এক ধরনের চিনি, যা স্থূলতার প্রাথমিক চালক। বছরের পর বছর ধরে, পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা , পাশ্চাত্য খাদ্যে, স্থূলতার মূল কারণ নিয়ে বিতর্ক করেছেন, কেউ কেউ অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, অন্যরা কার্বোহাইড্রেট বা চর্বি জাতীয় খাবারকে দায়ী করেছেন। Obesity জার্নালে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে ফ্রুক্টোজকে স্থূলতার প্রকৃত চালক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।The University of Colorado Anschutz Medical Campus এর Dr. Richard Johnson এবং তার দলের মতে, ফ্রুক্টোজ হল একটি সাধারণ চিনি যা ফল এবং মধুর প্রাথমিক পুষ্টি। .....বিস্তারিত পড়ুন