

উত্তরাপথঃ কাঁওয়ার যাত্রা ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় আয়োজন। শ্রাবণ মাস এলেই লক্ষ লক্ষ ভক্ত গঙ্গাজল নিয়ে , খালি পায়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে তা শিবমন্দিরে অর্পণ করেন। ভক্তির এই যাত্রা কেবল আধ্যাত্মিকতার নয়, এটি এক ধরনের মানসিক শক্তির উৎসওকিন্তু এ বছরের যাত্রায় বিশেষ আলোচনায় উঠে এসেছেন দিল্লির যুবক রাহুল কুমার। তার গল্প সাধারণ ভক্তির নয়, বরং ভালোবাসা আর প্রতিশ্রুতির এক বিরল উদাহরণ।
রাহুল টানা ২২০ কিলোমিটার হেঁটেছেন, কাঁধে নিয়ে ১২১ লিটার গঙ্গাজল। উদ্দেশ্য একটাই—তার প্রিয় বান্ধবী যেন আইপিএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। এটাই তার চতুর্থ কাঁওয়ার যাত্রা। গত বছর তিনি বহন করেছিলেন ১০১ লিটার জল, এবার তা আরও বাড়িয়েছেন। এই পদক্ষেপ কেবল ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা নয়, বরং বান্ধবীর প্রতি অটল আস্থার প্রতীক।
সরকারি হিসেবে প্রতি বছর প্রায় ৪-৫ কোটি মানুষ এই যাত্রায় অংশ নেন। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ। তবে, এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে—কেন তরুণ সমাজ এই যাত্রায় এত গভীরভাবে যুক্ত হচ্ছে?
- একদিকে আছে ভক্তি ও বিশ্বাস,
- অন্যদিকে আছে ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও প্রতিজ্ঞা।
রাহুলের পদক্ষেপ দেখাচ্ছে, ধর্মীয় বিশ্বাস কিভাবে ব্যক্তিগত স্বপ্নের সঙ্গে মিশে যেতে পারে।
এই দীর্ঘ পথচলায় রাহুল একা নন।সঙ্গে রয়েছে তার বন্ধু নন্দলাল, যিনি বাইকে করে পাশে থেকেছেন, জল-খাবার জুগিয়েছেন। এর মধ্যেও রয়েছে এক সামাজিক শিক্ষা—বন্ধুত্ব কেবল আনন্দে নয়, কঠিন সময়েও সত্যিকার শক্তি জোগায়।
রাহুলের কাহিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বলছেন—
- “আজকের দিনে এমন ভালোবাসা বিরল।”
- “এটা সিনেমার গল্পের মতো।”
- “ভক্তি, আশা আর ভালোবাসার সুন্দর মিলন।”
কিন্তু এই ভাইরাল গল্প আমাদের আরেকটা প্রশ্নও তুলে দেয় —আজকের তরুণরা কি ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য কেবল নিজে লড়বে, নাকি প্রিয়জনের জন্যও এতটা ত্যাগ স্বীকার করবে?
আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যখন ভালোবাসা ও প্রতিশ্রুতি প্রায়ই ক্ষণস্থায়ী বলে মনে হয়। সেখানে রাহুলের পদযাত্রা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
- ভক্তি কেবল মন্দিরের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়,
- ভালোবাসা কেবল ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়,
- আর প্রতিশ্রুতি কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
রাহুল দেখিয়েছেন, প্রার্থনা যখন বিশ্বাসের সঙ্গে মেশে আর বিশ্বাস যখন ভালোবাসার সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন তা হয়ে ওঠে এক অসাধারণ শক্তি।
তার পদযাত্রা হয়তো বান্ধবীর পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণ করবে না, কিন্তু সমাজকে মনে করিয়ে দিল—ভালোবাসা এখনো আছে, প্রতিশ্রুতি এখনো শক্তিশালী, আর বিশ্বাস এখনো মানুষের পথ দেখায়।
রাহুলের এই গল্প আমাদের ভাবতে বাধ্য করে—আমরা কি জীবনে শুধু নিজের স্বপ্ন নিয়েই ব্যস্ত, নাকি প্রিয়জনের স্বপ্নকেও সমান গুরুত্ব দিতে পারি?
কাঁওয়ার যাত্রার মতো ধর্মীয় আচার হয়তো বাইরের চোখে কেবল ভক্তির উৎসব, কিন্তু রাহুল দেখিয়েছেন এটি হতে পারে ভালোবাসারও উৎসব। তিনি প্রমাণ করেছেন, ত্যাগ মানে কেবল কষ্ট সহ্য করা নয়, বরং অন্যের জন্য নিজের সীমা অতিক্রম করার সাহস।
সমাজে যদি আরও অনেক রাহুল জন্ম নেয়—যারা প্রিয়জনের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য নিজের সাধ্যমতো কিছু করতে চায়—তাহলেই তো ভক্তি, ভালোবাসা আর প্রতিশ্রুতি সত্যিকার অর্থে অর্থবহ হবে।
আরও পড়ুন
রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন
উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Free Gift in Politics: ভারতের নির্বাচন ও ফ্রি গিফট সংস্কৃতি
উত্তরাপথঃ ফ্রি গিফট (Free gift in politics)এর রাজনীতি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করছে। বিনামূল্যে কোটি কোটি জনগণকে উপহার প্রদান যা রাজকোষের উপর অতিরিক্ত বোঝা ফেলবে এই সত্যটি জানা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্রি গিফট (Free gift in politics) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের দৌড়ে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।এক সময় প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা বিনামূল্যে শাড়ি, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, টেলিভিশন সেট ইত্যাদির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের আগে যে বিনামূল্যের সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন তা পরবর্তী কালে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি দ্রুত অনুসরণ করেছিল। এরপর ২০১৫ সালে আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব দিল্লির ভোটারদের কাছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, বাস ভ্রমণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়
উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে। সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন