জলবায়ুর পরিবর্তন কতটা কমানো যায় তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই
বর্তমানে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে কীভাবে এটি বন্ধ করা যায়, সেই প্রশ্ন অবান্তর বরং এটিকে কিভাবে কতটা কমানো যায় তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা এখন বিশ্বময়। ২৮ ফেব্রুয়ারী প্রকাশিত সর্বশেষ ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে (AR6), জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল (IPCC) সারা বিশ্বকে সতর্ক করেছে যে ইতিমধ্যেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যদি কিছু আগামীতে উপযুক্ত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় তাহলে আমরা খুব দ্রুত এক চরম সংকটের সম্মুখীন হব। IPCC বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞানের উপর কাজ করছে, যা AR6 সংশ্লেষণ রিপোর্ট নামে পরিচিত। এই AR6 রিপোর্ট এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বিশ্ব উষ্ণায়নের উপর মানুষের কার্যকলাপের প্রভাব সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই এবং অনুমান করা হচ্ছে যে আগামী ২০৪০ সাল নাগাদ, বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প বিপ্লবের স্তরের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি বেড়ে যাবে। সেই সাথে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে তাদের কয়লার ব্যবহার বন্ধ করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে । জার্মানি সহ কয়েকটি দেশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। জাপান তার জাতীয় স্বার্থের চেয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং ক্লিন কয়লা প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। এই ক্লিন কয়লা প্রযুক্তিটি চীন ও ভারতের মতো প্রধান কয়লা ব্যবহারকারী দেশগুলি গ্রহন করলে উল্লেখযোগ্যভাবে নির্গমন কমাতে পারে।
অন্যদিকে আমাদের দেশের সরকার জাতীয় সৌর মিশন, জাতীয় জল মিশন, হিমালয়ান ইকোসিস্টেমকে টিকিয়ে রাখার জন্য জাতীয় মিশন সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহন করেছিল ২০০৮ সালে । কিন্তু তারপরও বিশ্বঊস্নায়ন ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সমাজকে প্রভাবিত করছে। তাপপ্রবাহ, বন্যা, বর্ষা এবং ক্রমহ্রাসমান ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার আমাদের চরম চ্যালেঞ্জযার মুখোমুখি দাঁর করিয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহ আমাদের স্বাস্থ্য এবং জিডিপিকে প্রভাবিত করেছে । বন্যায় ভারতের ২৬.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে, এই ক্ষয়ক্ষতি তার জিডিপি-র প্রায় ০.৫% ছাড়িয়ে গেছে।গবেষকরা অনুমান করছেন ভারতে জলবায়ু-সম্পর্কিত ক্ষয়ক্ষতি আগামী ৫০ বছরে মোট US$৩৫ ট্রিলিয়নের বেশী হতে পারে। জলবায়ু পরিবরতনের এর প্রভাব সবচেয়ে বেশী আমাদের স্বাস্থ্য ও কৃষিক্ষেত্রকে করবে ।ভারত ইতিমধ্যে স্থানীয় বায়ু দূষণের স্বাস্থ্যগতপ্রভাবের সাথে লড়াই করছে যা ভারতের জিডিপি-তে US$৩৬ বিলিয়নের বার্ষিক ক্ষতির কারণ । মানব ক্রিয়াকলাপ থেকে ক্রমবর্ধমান নির্গমন দেখে ভারত ক্রমাগতভাবে বিশ্বব্যাপী বায়ু মানের মূল্যায়নে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে৷
এখন প্রশ্ন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ভারত কী করছে?ভারত রেল ব্যবস্থাকে সবুজ করা, একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক হ্রাস করাএবং পরিষ্কার রান্নার জ্বালানী উৎপাদন করা সহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যা ২০২২ IPCCরিপোর্ট অনুসারে , অন্যান্য প্রধান বিশ্বঅর্থনীতির তুলনায় ভারতের মাথাপিছু কম কার্বন নির্গমন হয়। কিন্তু ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি যথেষ্ট নয় । সরকারকে দ্রুত অ-জীবাশ্ম জ্বালানী শক্তির ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নাগরিক-কেন্দ্রিক কর্মসূচি গ্রহন করতে হবে এবং প্রয়োজনে বিচার ব্যবস্থাকেও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ।
আরও পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন
ওজন হ্রাস (weight loss) মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে
উত্তরাপথঃ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, শাকসবজি, সামুদ্রিক খাবার এবং গোটা শস্য সমৃদ্ধ একটি ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য খাওয়া - এমনকি শুধুমাত্র খাদ্যের নির্দেশিকা অনুসরণ করে ওজন হ্রাস (weight loss)মস্তিষ্কের বার্ধক্যের লক্ষণগুলিকে ধীর করে বলে মনে করা হয়।সাম্প্রতি ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ওজন হ্রাস মস্তিষ্কে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ৯ মাস পর্যন্ত ধীর করে (aging process) দিতে পারে। গবেষণায় ৬০ থেকে ৭৮ বছর বয়সের মধ্যে ৪৭ জন অংশগ্রহণকারীকে জড়িত করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেকেরই ওজন বেশি বা স্থূল ছিল এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ ছিল। তাদের এলোমেলোভাবে একটি ক্যালোরি-সীমাবদ্ধ গ্রুপ বা একটি নিয়ন্ত্রণ গ্রুপে বরাদ্দ করা হয়েছিল।ক্যালোরি-সীমাবদ্ধতা গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি খাদ্য পরিকল্পনা অনুসরণ করে, যার লক্ষ্য ছিল তাদের আনুমানিক প্রয়োজনের চেয়ে ১০ – ১৫% কম ক্যালোরি গ্রহণ করা। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ তাদের খাদ্য পরিবর্তন করেনি .....বিস্তারিত পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন