গার্গী আগরওয়ালা মাহাতো


গোন্ড উপজাতির শৈল্পিক প্রতিভা, ছবি সংগৃহীত
গোন্ড উপজাতি (Gond tribe) বিশ্বের বৃহত্তম উপজাতি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটি। এটি ভারতের বৃহত্তম উপজাতি । এদের গায়ের রং কালো, চুল কালো, ঠোঁট মোটা, নাক বড় ও ছড়ানো। তারা অলিখিত ভাষা গোন্ডি ভাষাতে কথা বলে, যা দ্রাবিড় ভাষার সাথে সম্পর্কিত। গোন্ড উপজাতির একটি দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, বিশ্বাস করা হয় যে তাদের শিকড় প্রাক-আর্য যুগে্র । গোন্ডদের সবচেয়ে গৌরবময় রাজা ছিলেন সংগ্রাম শাহ এবং দলগত শাহ, যারা ম্ধ্যপ্রদেশের গন্ডয়ানা রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় অনেকগুলি দুর্গ তৈরি করেছিলেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সে দলগত শাহের আকস্মিক মৃত্যুতে রানী দুর্গাবতী দক্ষতার সাথে রাজ্য শাসন করেন। দুর্গাবতী ছিলেন একজন চান্দেল রাজপুত মেয়ে এবং তার বিয়ে হয়েছিল দলগত শাহের সাথে। ১৮৯৪ সালে আকবরের সেনাপতি আসাফ খানের সাথে রানী দুর্গাবতীর যুদ্ধ হয় এবং তিনি মারা যান। এই যুদ্ধ গোন্ড রাজত্বকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল । গোন্ড উপজাতি, যারা উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় অনেকটা এগিয়েছিল, তারপর ধীরে ধীরে সামাজিক ভাঙ্গনের শিকার হয় এবং ভারতবর্ষের ছড়িয়ে যায় ।
বর্তমানে বেশিরভাগ এই উপজাতির লোকেরা মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, ঝাড়খণ্ড কর্ণাটক তেলেঙ্গানাতে বসবাস করে এছাড়া উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশাতেও এদের দেখতে পাওয়া যায় ৷ গন্ডরা চারটি উপজাতিতে বিভক্ত যথাক্রমে রাজ গোন্ড, যাদিয়া গোন্ড, ধুরভে গোন্ড এবং খাতুলওয়ার গোন্ড । এই উপজাতির প্রধান পেশা কৃষি, তবে কৃষির পাশাপাশি তারা পশুপালনও করে। তাদের প্রধান খাদ্য হল বাজরা, যা তারা দুটি রূপে গ্রহণ করে (কোদো এবং কুটকি)।
আজ আমরা ভারতের মধ্যপ্রদেশের প্রাচীন গোন্ড উপজাতি নিয়ে আলোচনা করব। মধ্যপ্রদেশে গোন্ড উপজাতি বহু শতাব্দী ধরে তাদের শিল্প, ঐতিহ্য এবং প্রকৃতির সাথে ঘনিষ্ঠ সংযোগের মাধ্যমে নিজেদের জন্য একটি অনন্য পরিচয় তৈরী করেছে।তা সত্বেও এই উপজাতি গোষ্ঠীর ইতিহাস, শৈল্পিকতা এবং তাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণে তারা আজ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
গোন্ড উপজাতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকগুলির মধ্যে একটি হল তাদের ব্যতিক্রমী শৈল্পিক প্রতিভা। গোন্ড জনগণ তাদের জটিল এবং প্রাণবন্ত চিত্রকর্মের জন্য বিখ্যাত, যা তাদের পৌরাণিক বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান এবং দৈনন্দিন জীবনকে চিত্রিত করে। “গন্ড আর্ট” নামে পরিচিত এই পেইন্টিংগুলি গাঢ় রঙ এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীর অনন্য উপস্থাপনা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। আজ গোন্ড শিল্প আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং অনেক গোন্ড শিল্পীর এটি আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস হয়ে উঠেছে।
গোন্ড উপজাতির প্রকৃতির সাথে গভীর আধ্যাত্মিক সংযোগ রয়েছে এবং তারা গাছ, নদী এবং প্রাণীর সাথে যুক্ত বিভিন্ন দেবতা ও আত্মার উপাসনা করে তারা অ্যানিমিজেমে বিশ্বাস করে। তারা বিশ্বাস করে যে এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলি ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী এবং মহাবিশ্বের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গোন্ড উপজাতি এই দেবতাদের সম্মান জানাতে এবং তাদের সুরক্ষিত অস্তিত্বের জন্য আশীর্বাদ চাইতে তাদের দেবতাদের সামনে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান পালন সহ ,নাচ এবং গান করে।
তাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও, গন্ড উপজাতি তাদের ঐতিহ্য এবং জীবনধারা সংরক্ষণে আজ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন ।আধুনিকীকরণ সহ মূলধারার সংস্কৃতির প্রভাব , গোন্ড উপজাতির তরুণ প্রজন্মকে তাদের ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং অনুশীলন থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। গোন্ড উপজাতি, অনেক আদিবাসী সম্প্রদায়ের মতো, আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক সুযোগের সীমিত উপস্থিতি তাদের অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছে ।এছাড়া ভূমি অধিকার গোন্ড উপজাতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে তাদের পৈতৃক জমি জোরপূর্বক দখল তাদের জীবনযাত্রাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের গোন্ড উপজাতি দেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং শৈল্পিক উৎকর্ষের জীবন্ত প্রমাণ। তাদের অনন্য শিল্প, আধ্যাত্মিক বিশ্বাস এবং প্রকৃতির সাথে গভীর সংযোগ বিশ্বকে বিমোহিত করেছে। তারা যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি তা মোকাবেলা করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা করা হচ্ছে । গোন্ড সম্প্রদায় এবং বহিরাগত সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতায় গোন্ড জনগণ তাদের শিল্প এবং ঐতিহ্যকে দর্শকদের কাছে প্রদর্শন করতে পারছে ৷এছাড়া গোন্ড সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচী প্রসারের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে আগামীতে খুব শীঘ্র গোন্ড উপজাতি তার যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে উঠতে পারবে ।
আরও পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
Bandna Festival: ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পাঁচ দিন বাঁদনার আমেজে মশগুল থাকে
বলরাম মাহাতোঃ চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন থেকে মোট পাঁচ দিন ব্যাপী বাঁদনার(Bandna Festival) আমেজে মশগুল থাকে ছোটনাগপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অবশ্য, পরবের শুভ সূচনা হয় তারও কয়েকদিন আগে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সামাজিক শাসন ব্যবস্থার চূড়ামণি হিসাবে গাঁয়ের মাহাতো, লায়া, দেহরি কিম্বা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নির্ধারণ করেন- ৩, ৫, ৭ বা ৯ ক’দিন ধরে গবাদি পশুর শিং-এ তেল মাখাবে গৃহস্বামী! রুখামাটির দেশের লোকেরা কোনোকালেই মাছের তেলে মাছ ভাজা তত্ত্বের অনুসারী নয়। তাই তারা গোরুর শিং-এ অন্য তেলের পরিবর্তে কচড়া তেল মাখানোয় বিশ্বাসী। কারণ কচড়া তেল প্রস্তুত করতে গোধনকে খাটাতে হয় না যে! কচড়া তেলের অপ্রতুলতার কারণে বর্তমানে সরষের তেল ব্যবহৃত হলেও, কচড়া তেলের ধারণাটি যে কৃষিজীবী মানুষের গবাদি পশুর প্রতি প্রেমের দ্যোতক, তা বলাই বাহুল্য! এভাবেই রাঢ বঙ্গে গোবর নিকানো উঠোনে হাজির হয়- ঘাওয়া, অমাবস্যা, গরইয়া, বুঢ়ি বাঁদনা ও গুঁড়ি বাঁদনার উৎসবমুখর দিনগুলি। পঞ্চদিবসে তেল দেওয়া, গঠ পূজা, কাঁচি দুয়ারি, জাগান, গহাইল পূজা, চুমান, চউক পুরা, নিমছান, গোরু খুঁটা, কাঁটা কাঢ়া প্রভৃতি ১১টি প্রধান পর্ব সহ মোট ১৬টি লোকাচারের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বাঁদনা পরব(Bandna Festival )। .....বিস্তারিত পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন
সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?
উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন