১৫ ই সেপ্টেম্বর ২০২৩

জানুন ২০২৩ সালের জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক ডঃ শীলা অসোপা’র কথা

ডঃ শীলা অসোপা শ্যাম সদন বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যোধপুরের অধ্যক্ষা।ছবি সৌজন্যে- টুইটার

উত্তরাপথঃ ডঃ শীলা অসোপা, শ্যাম সদন বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যোধপুরের অধ্যক্ষা, তিনি ১৭ বছর ধরে স্কুলের বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন।তাঁকে শিশুদের শেখানোর নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন, স্কুলের অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং উদ্ভাবনের জন্য ২০২৩ সালের জাতীয় শিক্ষক পুরস্কারে পুরুস্কৃত করা হয়।  

ডঃ অসোপাকে, যোধপুরে শ্যাম সদন, সরকারি বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, ১০ মাস আগে বদলি করা হয় । সেই সময় দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয়ে মাত্র দুটি কক্ষ ছিল।মেয়েরা টিনের চালা দিয়ে তৈরি ঘরে পড়াশোনা করত।  ঘর কম থাকায় গাছের নিচেও ক্লাস হত । তার কথায় ,সেই সময়টা বাচ্চাদের পড়াশুনা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় কেটেছে । এরপর টিনের চালা দিয়ে তৈরি কক্ষে কাঠের পার্টিশন দিয়ে ৬টি কক্ষ তৈরি করা হয়। একইভাবে, একটি হলকে ৪ টি কক্ষে এবং বারান্দাটিকে দুটি কক্ষে রূপান্তরিত করা হয়েছিল।  এভাবে ১২টি কক্ষ প্রস্তুত করা হয়।

এরপর বাচ্চাদের পড়াশুনার সুবিধার জন্য টিনের চালায় নির্মিত কক্ষে প্রজেক্টর, টিভি, কুলার ফ্যান ও চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা করা হয়।রাজস্থানের এটাই প্রথম সরকারি স্কুল যেখানে প্রতিটি ঘরে কুলার লাগানো আছে।এই কারণে বিদ্যালয়ে শিশুদের উপস্থিতি বেড়েছে।কোনো শিশুই তার ক্লাস মিস করতে চায় না।শিশুরা বুঝতেও পারে না যে তারা টিনের চালা দিয়ে তৈরি ঘরে বসে পড়াশোনা করছে।

 প্রতিটি ক্লাসে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।তিনি জানান, আমি সব সময় বলি যে যে শিশু পড়াশোনা করতে চায়, সে যে কোনও জায়গায় পড়তে পারে।আগে বিদ্যালয়ে ৯০ জন শিশু ছিল বর্তমানে তা বেড়ে ১৬০ জনে উন্নীত হয়েছে।সরকারি বিদ্যালয় হওয়ার কারণে এখানে রিকশাচালক থেকে শ্রমিক সকলের সন্তানরাই আসে।বাচ্চাদের কিউআর কোড সহ বই দেওয়া হয় যাতে তারা বাড়িতেও পড়াশোনা করতে পারে।শিশুরা এর মাধ্যমে ঘরে বসে পড়াশুনা রিভিশন করতে পারে। সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানি এই ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করেছে।

ডঃ শীলা অসোপা এর মতে এখন পর্যন্ত আমাকে ৬টি স্কুলে বদলি করা হয়েছে।শ্যাম সদন স্কুলে আসার আগের স্কুলটিতে ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার কাজ করেছি।আজ আমার কাজে মুগ্ধ হয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেরাই সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে।এছাড়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও পাওয়া গেছে।সিঙ্গাপুরের কোম্পানি সেটিয়াট প্রাইভেট লিমিটেডও শিশুদের শিক্ষার জন্য সহায়তা দিয়েছে। তার মতে যদি কোনও কাজ সততার সাথে করা হয়,তাহলে অনেক সংগঠন নিজেরাই সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে ।

এর আগে তিনি যোধপুরের একটি স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য জনসাধারণের থেকে ১০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেন।২০১৬ সালে যোধপুরের থোবে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যখন তিনি বদলি হয়ে আসেন সেই সময় পুরো বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। চারটি কক্ষ থেকে স্ল্যাব (সিলিং) খসে পড়ছিল সারা ঘরে ভাঙ্গা ঘরের টুকরো ছিল ছড়ানো । সেই সময় এমন জরাজীর্ণ বিদ্যালয়েও ৪৫০ শিশু লেখাপড়া করত। 

বিদ্যালয়ের এমন বেহাল অবস্থা দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি একটি নতুন স্কুল ভবন তৈরি করবেন।তারপর দীর্ঘ সংঘর্ষের পর ১ কোটি টাকা ব্যয়ে স্কুলটি রূপান্তরিত হয়েছিলীবং তাঁর সিদ্ধান্ত পূর্ণ হয়েছিল।এই ভবন তৈরিতে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য আসে এবং সাধারণ মানুষও সহযোগিতা করেন।তিনি বলেন আমি সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতাম।লোকেদের কাছে স্কুল ভবনের জন্য সাহায্য চাইতাম।জনসাধারণের সহযোগিতায় ১০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করা গেছিল। যা বিদ্যালয়ের অবকাঠামোতে ব্যয় করা হয়েছে।

এখন সেই স্কুলে সব সুযোগ-সুবিধা আছে।আগে মেয়েরা স্কুলে আসত না।কিন্তু স্কুলের উন্নতি দেখে অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে শুরু করেছে।আগে স্কুলে মেয়েদের খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল না । এরপর স্কুলে মেয়েদের খেলার জন্য ব্যবস্থা করা হয়।  কিছু দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পরে, মেয়েরা খেলাধুলায় অংশ নিতে শুরু করে। সেই সময় প্রথমবারের মতো,একটি ভলিবল দল গঠন করা হয়েছিল এবং এই দলটি রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে জিতেছিল।আজ সেসব মেয়ের মধ্যে কেউ কেউ শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে সরকারি চাকরিতেও কাজ করছে।

যোধপুর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ধোয়াতে তিনি শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। সেই সময় খারাপ স্বাস্থ্যর কারণে বিদ্যালয়ে শিশুদের অনুপস্থিতি বেশি ছিল।প্রায় ৫০০০ ছাত্রকে নিয়ে ‘ক্লিন হ্যান্ডস, ক্লিন বডি ক্যাম্পেইন চালান।দেশের প্রথম গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রথমবারের মতো এমন প্রচার চালানোর জন্য ইন্ডিয়া বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম নথিভুক্ত করা হয়েছিল। এরপর কন্যাদের ডিগ্রি দরকার, যৌতুক নয় এই নিয়ে প্রচার শুরু করেন।এর জন্য তিনি প্রতিটি বাড়িতে যোগাযোগ করতেন এবং মেয়েদের শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতেন তাদের অভিভাবকদের।  

তার প্রথম চাকরির পোস্টিং ছিল পিপারে ২০০৬ সালে।যোধপুর থেকে ৬৫ কিমি দূরে । সেখানেও শিশুদের দক্ষতা বোঝার ও উন্নত করার চেষ্টা শুরু করেন।খেলাধুলায় মনোনিবেশ করেন।সেখানকার মেয়েরা খেলাধুলায় রাজ্যস্তরে উঠেছিল। আজ অনেক মেয়ে উচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত।কেউ পুলিশে, কেউ খেলায় আবার কেউ শিক্ষকতার পেশায়।সেই সমস্ত মেয়েরা আজও ডঃ শীলা অসোপাকে তাদের রোল মডেল বলে।ডঃ শীলা অসোপার কথায় একজন শিক্ষকের জন্য এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে?

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


পশ্চিমবঙ্গে 'দ্য কেরালা স্টোরি'সিনেমাটির ভাগ্য সুপ্রিম কোর্টের হাতে

উত্তরাপথ: 'দ্য কেরালা স্টোরি' সিনেমাটি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হওয়ায় সিনেমাটির সিনেমার নির্মাতারা বাংলার নিষেধাজ্ঞাকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তাদের দাবী ছিল নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রতিদিন তাদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে । নির্মাতাদের আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট আজ 'দ্য কেরালা স্টোরি' সিনেমাটি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ হওয়ার পিছনে যুক্তি জানতে চেয়েছে । প্রধান বিচারপতির একটি বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করেছে, যখন এটি কোনও সমস্যা ছাড়াই সারা দেশে চলছে।পশ্চিমবঙ্গের সিনেমাটি কেন নিষিদ্ধ করা উচিত? এটি একই রকম জনসংখ্যার সংমিশ্রণ রয়েছে এম .....বিস্তারিত পড়ুন

মণিপুরের সামগ্রিক উন্নয়ন বর্তমান সমস্যার সমাধান হতে পারে

উত্তরাপথ: মণিপুরের মেইতি সম্প্রদায় তফসিলি উপজাতির তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্তির দাবি অব্যাহত রাখবে এবংআন্দোলন তীব্রতর করবে বলে খবর। অন্যদিকে ট্রাইবাল সলিডারিটি মার্চ, কিছু পাহাড়ি উপজাতির একটি তড়িঘড়ি তৈরি করা ছাতা সংগঠন,তারা মেইতি সম্প্রদায়ের দাবির বিরোধিতা করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই পরিস্থিতি আরও অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।অন্যদিকে আরেকটি সূত্র বলছে মণিপুরের পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। যদিও এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিচ্ছে রাজ্য সরকার।  কিন্তু এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে দীর্ঘ .....বিস্তারিত পড়ুন

রাহুলের ভারতজোড় সাফল্য পেলেও, অভিষেক কি পারবে ?

উত্তরাপথ: রাহুল গান্ধীর ১৪৬ দিনের প্রায় ৩৮৫০ কিলোমিটার ভারতজোড় যাত্রার সাফল্য কংগ্রেস ঘরে তুলতেই তৃনমূলের নতুন উদ্যোগ জনসংযোগ যাত্রা।এই যাত্রায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৬০ দিনে ৩,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ " জনসংযোগ " করবেন। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রা রাজ্যের সবচেয়ে দক্ষিণ প্রান্ত দক্ষিণ ২৪ পরগণার কাকদ্বীপে শেষ হবে। এই পুরো যাত্রায় অভিষেক মোট ২৫০টি সমাবেশে ভাষণ দেবেন। এখন প্রশ্ন তৃণমূল তথা অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে। কংগ্রেস তথা রাহুল গান্ধীর ভারতজোড় যাত্রার উদ্দেশ্য .....বিস্তারিত পড়ুন