# Barnum Effect : জানেন কেন রাশিফল ​​এত জনপ্রিয় ?

উত্তরাপথঃ আপনি কি কখনও একটি রাশিফল ​​পড়ে ভেবেছেন, “বাহ, এটা সত্যিই আমাকে বর্ণনা করে!”? আপনি একা নন। অনেক মানুষ মনে করেন যে রাশিফল ​​তাদের জীবনের  উপর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এই ঘটনাটিকে বার্নাম(Barnum Effect) প্রভাব নামে একটি জিনিস দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

বার্নাম প্রভাব (Barnum Effect) কী?

বার্নাম প্রভাব বলতে ব্যক্তিদের অস্পষ্ট বা সাধারণ বিবৃতিগুলিকে ব্যক্তিগতভাবে অর্থপূর্ণ হিসাবে গ্রহণ করার প্রবণতাকে বোঝায়। এই মনস্তাত্ত্বিক ঘটনাটির নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত শোম্যান পি.টি. বার্নামের নাম থেকে, যিনি একবার বলেছিলেন, “প্রতি মিনিটে একজন নিকৃষ্ট জন্মগ্রহণ করে।” মূলত, লোকেরা এমন বিবৃতিতে ব্যক্তিগত তাৎপর্য খুঁজে পায় যা যে কারও ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে।

এটি রাশিফলের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত?

রাশিফলগুলি প্রায়শই এমনভাবে লেখা হয় যা প্রতিটি ব্যক্তিকে তাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি দেয়।রাশিফল লেখার সময়  বিস্তৃত এবং নমনীয় ভাষা ব্যবহার করা হয়, যা অনেক পাঠককে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতাগুলি পাঠ্যে প্রতিফলিত হতে দেখায় । উদাহরণস্বরূপ, একটি রাশিফল ​​বলতে পারে, “আপনি আজ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন, কিন্তু আপনার দৃঢ় সংকল্প আপনাকে সেগুলি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।” এই উক্তিটি প্রায় যে কারোরই্যসেই নির্দিষ্ট দিনের কোনও একটি সমস্যাকে চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে, যার ফলে এটি অনন্যভাবে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, যখন বার্নাম এফেক্টের (Barnum Effect ) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে রাশিফল ​​উপস্থাপন করা হয়, তখন মানুষের রাশিফলের উপর বিশ্বাস করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। গবেষণায়, অংশগ্রহণকারীরা প্রায়শই রাশিফলে বা তাদের ব্যক্তিগতকৃত জন্ম ছকে তাদের চরিত্রের বর্ণনাকে নিজেদের জন্য অত্যন্ত নির্ভুল বলে মনে করেছেন। (সূত্রঃdoi.org/10.1037/h0059240, doi.org/10.1177/0022022109332843)।

 কেন মানুষ রাশিফল ​​বিশ্বাস করে?

১। মানুষ এমন তথ্যের উপর বিশেষ মনোযোগ দেয় যা তাদের বিশ্বাসকে নিশ্চিত করে এবং পরস্পরবিরোধী তথ্য উপেক্ষা করে। যদি একটি রাশিফল ​​ইতিবাচক ভবিষ্যদ্বাণী করে, তাহলে ব্যক্তিদের তা মনে রাখার এবং বিশ্বাস করার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যা জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি তাদের বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে।

২। রাশিফলের অস্পষ্ট প্রকৃতি পাঠকদের ব্যক্তিগত অনুভূতিতে সেগুলি ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়। এই ব্যক্তিগতকরণ রাশিফলকে আরও আকর্ষণীয় এবং বিশ্বাস যোগ্য করে তোলে।

 ৩। জীবনের খারাপ সময়ে অনেকেই রাশিফলের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন।নক্ষত্ররা আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে এই ধারণাটি সান্ত্বনা এবং নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি প্রদান করতে পারে।

৪। রাশিফলের উপর বিশ্বাস করা একটি সামাজিক ঘটনা হতে পারে। বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যরা যদি তাদের রাশিফল ​​সম্পর্কে কথা বলেন, তাহলে অন্যান্য ব্যক্তিরাও তাদের রাশিফল ​​অন্বেষণ করতে বেশি আগ্রহী হতে পারেন, যা চক্রটিকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে।

এর পেছনের বিজ্ঞান

অনেক গবেষণায় বার্নাম প্রভাবের সাথে জ্যোতিষশাস্ত্রের সংযোগ খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ক্লাসিক গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেদের মধ্যে কোনও অস্পষ্ট ব্যক্তিত্বের বর্ণনাগুলিকে সঠিক বলে গ্রহণ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে যখন তারা বিশ্বাস করে যে সেগুলি তাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।

সূত্রঃ (doi.org/10.1037/h0044374, doi.org/10.1037/h0035106)।

তাছাড়া, আমাদের প্রচলিত সমাজ ও  সংস্কৃতিতে জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রসার রাশিফলকে আরও সহজলভ্য করে তুলেছে, যা তাদের জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ম্যাগাজিন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা সোশ্যাল মিডিয়া যাই হোক না কেন, রাশিফল ​​সর্বত্র রয়েছে, যা প্রতিটি মানুষের জন্য তাদের নির্দিষ্ট রাশিফল  জানা সহজ করে তোলে। এই মনস্তাত্ত্বিক ঘটনাটি, সামাজিক প্রভাব এবং সান্ত্বনার আকাঙ্ক্ষার সাথে মিলিত হয়ে, নিশ্চিত করে যে রাশিফলগুলি অনেক মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে রয়েছে।

আপনি যদি বার্নাম এফেক্ট এবং এর প্রভাব সম্পর্কে আগ্রহী হন, তাহলে উপরে লিঙ্ক করা বিভিন্ন গবেষণা এবং নিবন্ধের মাধ্যমে আরও অন্বেষণ করতে পারেন। এই প্রভাবটি বোঝা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করতে পারে কেন রাশিফলগুলি কেবল একটি  আকর্ষণীয় মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top