### New research : “ভালো” কোলেস্টেরল আপনার চোখের জন্য খারাপ হতে পারে

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে “ভালো” কোলেস্টেরল, যা HDL নামে পরিচিত, ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে গ্লুকোমার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অন্যদিকে, “খারাপ” কোলেস্টেরল, বা LDL, এই গুরুতর চোখের অবস্থার ঝুঁকি কমাতে পারে। এই ফলাফলগুলি কোলেস্টেরল কীভাবে চোখের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে আমাদের অতীত ধারনার পরিবর্তন করে।

ব্রিটিশ জার্নাল অফ অফথালমোলজিতে প্রকাশিত এই গবেষণায়, যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাঙ্ক থেকে ৪০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী ৪০০,০০০ জনেরও বেশি মানুষের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের গড়ে ১৪ বছর ধরে তাদের রক্ত ​​পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে, প্রায় ৭,০০০ জনের গ্লুকোমা হয়েছে, প্রসঙ্গত গ্লুকোমা এমন একটি রোগ যা অপটিক স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে এবং অন্ধত্বের দিকে পরিচালিত করতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যাদের শরীরে উচ্চ HDL কোলেস্টেরল বা “ভালো” HDL কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা রয়েছে তাদের গ্লুকোমা হওয়ার সম্ভাবনা কম স্তরের মানুষের তুলনায় ১০% বেশি ছিল। বিপরীতে, যাদের “খারাপ” এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি তাদের গ্লুকোমা হওয়ার ঝুঁকি ৮% থেকে ১৪% কম রয়েছে বলে গবেষণায় দাবী করা হয়েছে।

 গ্লুকোমা হওয়ার কারণ

২০৪০ সালের মধ্যে গ্লুকোমা প্রায় ১১২ মিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। গ্লুকমা হওয়ার সম্ভাব্য সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বয়স, জাতিগত কারণ এবং রোগের পারিবারিক ইতিহাস। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের মতো অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলিও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

যদিও পূর্ববর্তী গবেষণাগুলিতে কোলেস্টেরলের মাত্রা চোখের স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত ছিল, সেক্ষেত্রে ফলাফলগুলি মিশ্রিত এসেছিল। বর্তমান এই গবেষণার লক্ষ্য কোলেস্টেরল এবং গ্লুকোমার মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট ।এই গবেষণার ফলাফলগুলি মূলত ৫৫ বছর এবং তার বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; তরুণ অংশগ্রহণকারীদের (৪০-৫৫ বছর বয়সী) মধ্যে কোনও উল্লেখযোগ্য সংযোগ পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে গবেষকরা গ্লুকোমার প্রতি সংবেদনশীলতা মূল্যায়ন করার জন্য একটি জিনগত সমস্যার তালিকা তৈরি করেছেন, এক্ষেত্রে তারা দেখিয়েছেন যে প্রতিটি অতিরিক্ত জেনেটিক ঝুঁকি রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা ৫% বৃদ্ধি করে।

গবেষণার সীমাবদ্ধতা

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এটি একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা ছিল, অর্থাৎ এটি কারণ এবং প্রভাব প্রমাণ করতে পারে না। গবেষণার সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেমন রক্তের নমুনা সংগ্রহের সময় এবং অংশগ্রহণকারীদের জনসংখ্যার গঠন, যারা বেশিরভাগই ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত।

এই ফলাফলগুলি দেখায় চোখের স্বাস্থ্যের সাথে “ভাল” এবং “খারাপ” কোলেস্টেরল সম্পর্কিত । সেইসাথে এই গবেষণা  আমরা কোলেস্টেরলকে কীভাবে দেখি তা পুনর্বিবেচনা করতে আমাদের উৎসাহিত করে। এইচডিএল কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা, যা দীর্ঘদিন ধরে উপকারী বলে মনে করা হয়, চোখের স্বাস্থ্যের জন্য সর্বদা ভাল ফলাফল নাও দিতে পারে। তবে গ্লুকোমা চিকিৎসার জন্য এই সম্পর্কগুলি এবং এর প্রভাবগুলি সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।

সূত্রঃ “Associations between serum lipids and glaucoma: a cohort study of 400 229 UK Biobank participants” by Yiyuan Ma, Yue Wu, Leyi Hu, Wen Chen, Xinyu Zhang, Danying Zheng, Nathan Congdon, Guangming Jin and Zhenzhen Liu, 4 February 2025, British Journal of Ophthalmology.
DOI: 10.1136/bjo

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি

উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা  ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

সহযাত্রী

দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top