Plant milk বা উদ্ভিজ্জ দুধ কি সত্যই স্বাস্থ্যকর?  

উত্তরাপথঃ গত দশকে Plant milk বা উদ্ভিদের বিভিন্ন বীজ বা ফল থেকে তৈরি সাদা পানীয় যাকে ভেগান মিল্ক বলা হয় তার চাহিদা বিশ্বব্যাপী বাজারে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।এক্ষেত্রে ওটস, বাদাম, সয়া এবং ভাত দিয়ে তৈরি সাদা পানীয়গুলি গরুর দুধের জনপ্রিয় বিকল্প হয়ে উঠেছে । উদ্ভিদ-ভিত্তিক পানীয়ের চাহিদার একটি মূল কারণ হল এই  দুধে কোন কোলেস্টেরল থাকে না এবং গরুর দুধের তুলনায় এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে। তবে, ইতালির ব্রেসিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে এই বিকল্পগুলি গরুর দুধের চেয়ে বেশী স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে ।

গবেষণায়, গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন  যে প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি কিভাবে উদ্ভিদ-ভিত্তিক পানীয়ের পুষ্টির গুণমানকে প্রভাবিত করে। গবেষণার প্রধান লেখক খাদ্য বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মারিয়ান নিসেন লুন্ড বলেন “আমাদের অবশ্যই আরও উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার গ্রহণ করা উচিত।” “কিন্তু যদি আপনি সঠিক পুষ্টির খোঁজ করেন এবং বিশ্বাস করেন যে উদ্ভিদ-ভিত্তিক পানীয় গরুর দুধের বিকল্প হতে পারে, তাহলে আপনি ভুল করবেন,” , ওটস, ভাত এবং বাদামজাত পানীয় রূপান্তরের সময় ব্যাপক প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া, পরীক্ষিত প্রতিটি উদ্ভিদ-ভিত্তিক পানীয়ের আল্ট্রা হাই টেম্পারেচার (UHT) ট্রিটমেন্ট করা হয়, যা বিশ্বজুড়ে এটিকে দীর্ঘ সময় ঠিক রাখার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ডেনমার্কে, দুধ সাধারণত শুধুমাত্র সুপারমার্কেটের রেফ্রিজারেটেড বিভাগে পাওয়া যায় এবং কম পাস্তুরিত হয়, যার অর্থ এটিকে অনেক মৃদু তাপে জীবানুমুক্ত করা হয়।  

উদ্ভিদ-ভিত্তিক সাদা পানীয়ের বিক্রি বৃদ্ধি সত্ত্বেও, গরুর দুধের বিক্রি তার তুলনায় অনেক বেশি। ফলস্বরূপ, উদ্ভিদ-ভিত্তিক সাদা পানীয়গুলিতে তাদের শেলফ লাইফ বাড়ানোর জন্য ডেনমার্কে সাধারণত বিক্রি হওয়া দুধের তুলনায় বেশি তাপ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু এই ধরনের ট্রিটমেন্টের জন্য অনেক বেশী খরচ হয়,” মারিয়ান নিসেন লুন্ড বলেন।এছাড়াও গবেষণা অনুসারে, বেশিরভাগ উদ্ভিদ-ভিত্তিক পানীয়তে গরুর দুধের তুলনায় অনেক কম প্রোটিন থাকে। উদাহরণস্বরূপ, UHT গরুর দুধে প্রতি লিটারে ৩.৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যেখানে দশটি উদ্ভিদ থেকে তৈরি সাদা পানীয়ের মধ্যে আটটিতে ০.৪ থেকে ১.১ গ্রামের মধ্যে প্রোটিন থাকে। উপরন্তু, অনেক উদ্ভিদ-ভিত্তিক পানীয়তে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড কম থাকে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।এছাড়া গবেষণাগারে পরীক্ষিত দশটি উদ্ভিদ-ভিত্তিক সাদা পানীয়ের মধ্যে সাতটিতে গরুর দুধের চেয়ে বেশি চিনি ছিল।

তাপ প্রয়োগ থেকে সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি

উদ্ভিদ থেকে তৈরি সাদা পানীয়তে অত্যাধিক তাপপ্রয়োগ ক্ষতিকারক যৌগ তৈরি করতে পারে। গবেষণায় বাদাম এবং ওটস থেকে তৈরি কিছু পানীয়তে অ্যাক্রিলামাইড নামক একটি কার্সিনোজেন পাওয়া গেছে। এই পদার্থটি রুটি, কুকিজ, কফি এবং ভাজা আলুর মতো খাবারেও পাওয়া যায়।সংক্ষেপে, উদ্ভিদ-ভিত্তিক পানীয় জনপ্রিয় এবং এর কিছু উপকারিতা থাকলেও, এগুলি গরুর দুধের মতো পুষ্টিকর নাও হতে পারে এবং তাদের প্রক্রিয়াজাতকরণ স্বাস্থ্যগত উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

যদিও  “বেশিরভাগ উদ্ভিদ-ভিত্তিক পানীয়তে ইতিমধ্যেই প্রমানিত যে সেখানে গরুর দুধের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম প্রোটিন থাকে। কম পরিমাণে উপস্থিত প্রোটিন, তাপ প্রক্রিয়াকরণের সময় অতিরিক্তভাবে পরিবর্তিত হয়। এর ফলে কিছু প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড নষ্ট হয়ে যায়, যা আমাদের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও উদ্ভিদ-ভিত্তিক পানীয়ের পুষ্টির পরিমাণ ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়, তবে বেশিরভাগের পুষ্টির মান তুলনামূলকভাবে কম।

সূত্রঃ “Investigation of Maillard reaction products in plant-based milk alternatives” by Mariachiara Pucci, Halise Gül Akıllıoğlu, Marta Bevilacqua, Giulia Abate and Marianne Nissen Lund, 20 November 2024, Food Research International.
DOI: 10.1016/j.foodres.2024.115418

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক

উত্তরাপথঃ সারা বিশ্বের জনসংখ্যার বয়স বৃদ্ধির সাথে স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা হ্রাস এবং ডিমেনশিয়ার মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রকোপ বাড়ছে৷ তাদের এই  সমস্যাগুলি যে কেবল তাদের একার সমস্যা তা নয় ,এটি ধীরে ধীরে পুরো পারিবারিক সমস্যার আকার নেয়।সম্প্রতি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য গবেষকদের মধ্যে কার্যকর কৌশল খোঁজার আগ্রহ বাড়ছে।বর্তমানে বেশীরভাগ গবেষক মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । এখন খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসে প্রোবায়োটিক কি? কেনই বা গবেষকরা মস্তিস্কের স্বাস্থ্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিকের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন । .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top