

উত্তরাপথঃ আমাদের দেহের গঠন ও কাজকর্মে হাড়ের ভূমিকা অপরিসীম। হাড় শুধু শরীরকে আকার দেয় না, মস্তিষ্ককে করোটি দিয়ে এবং হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসকে পাঁজর দিয়ে রক্ষা করে। এর পাশাপাশি, হাড়ের মধ্যে থাকা মজ্জায় রক্তকণিকা তৈরি হয় এবং হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সংরক্ষিত থাকে।
তবুও, হাড়ের যত্ন আমরা প্রায়ই অবহেলা করি। অস্থি ও জয়েন্ট বিশেষজ্ঞ ডঃ রাজু ব্যানার্জির মতে , হাড় দুর্বল হওয়ার প্রধান তিনটি কারণ হলো –
১. অপুষ্টি
২. দৈহিক পরিশ্রমের অভাব
৩. অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এই কারণগুলো হাড়ের ক্ষতি করে এবং কীভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১. অপুষ্টি (Nutritional Deficiencies)
হাড় মজবুত রাখতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উপাদান দুটির ঘাটতিতে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অস্টিওপোরোসিস ও সহজেই ভাঙার মতো সমস্যা দেখা দেয়। ভারসাম্যহীন খাদ্যাভ্যাসই এই ঘাটতির মূল কারণ।
সমাধান:
- প্রতিদিন দুধ, দই, পনির, মাছ, ডিম এবং সবুজ শাকসবজি খান
- সকালের রোদে (সকাল ৮টা–১০টার মধ্যে) অন্তত ২০ মিনিট সময় কাটান
- প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন
২. দৈহিক পরিশ্রমের অভাব (Lack of Physical Activity)
সক্রিয় জীবনধারাই হাড়কে সবল রাখে। দীর্ঘ সময় বসে থাকা, ব্যায়ামের অভাব কিংবা অলস জীবনধারা হাড়ের কোষকে দুর্বল করে এবং হাড় ক্ষয়ের গতি বাড়িয়ে দেয়।
সমাধান:
- রোজ ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো বা হালকা ব্যায়াম করুন
- যাদের বসে কাজ করতে হয়, প্রতি ঘন্টায় অন্তত ৫ মিনিট উঠে হাঁটুন
- যোগব্যায়াম বা ভারোত্তোলনের মতো ওজন বহনকারী ব্যায়াম হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে
৩. অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা (Unhealthy Lifestyle)
ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান হাড়ের বিপাকক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। ধূমপান হাড়ে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয় এবং মদ্যপান হাড় গঠনের গতি কমিয়ে দেয়।
সমাধান:
- ধূমপান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করুন
- মদ্যপান সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব না হলে, খুব সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন
- পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমানোর দিকে নজর দিন
হাড় ভালো রাখতে চাইলে এখন থেকেই সঠিক অভ্যাস গড়ে তুলুন –
- সুষম আহার করুন
- নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন
- ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, অনিয়মিত ঘুম ও মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন
হাড় একবার দুর্বল হয়ে গেলে, তাকে আগের মতো করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আগে থেকেই সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াই সবচেয়ে ভালো পথ।
🔔 গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
এই প্রতিবেদনটি সাধারণ তথ্যের উপর ভিত্তি করে লেখা। এটি চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। হাড়ের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত হলে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
আরও পড়ুন
NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে
উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Fried rice syndrome: আগের দিনের রান্না করা ভাত খেলে হতে পারে এই বিশেষ অসুখটি
উত্তরাপথঃ আপনার কি বাসী ভাত বা পান্তা খাওয়ার অভ্যেস আছে? সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম (Fried rice syndrome) নিয়ে আমরা প্রায়ই অবশিষ্ট খাবার গরম করে আবার খাই। কিন্তু জানেন কি এই অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। অনেক সময় পর আগের রান্না করা ভাত খাওয়ার ফলে পেট সংক্রান্ত সমস্যা হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে খাবার পুনরায় গরম করলে এতে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, কিন্তু তা নয়। যে খাবারেই স্টার্চ থাকে না কেন, এতে উপস্থিত টক্সিন তাপ প্রতিরোধী। অর্থাৎ খাবার গরম করার পরও ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয় না। ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম নামে এই সমস্যা সম্পর্কিত একটি অবস্থা রয়েছে। আজ আমরা এই ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম অবস্থার লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করব। ভাত রান্না করার পর, যখন অবশিষ্ট ভাত কয়েক ঘন্টা বা সারারাত ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয় এবং তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে, তখন এই অবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন
Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে বিতর্কে এ আর রহমান
উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন