

উত্তরাপথঃ শীতের ছুটি , গ্রীষ্মের ছুটি বা পূজার ছুটি এলেই আমাদের অনেক পরিবারের পরিকল্পনা শুরু হয়—কোথায় বেড়াতে যাওয়া হবে, কেমন সময় কাটানো হবে। কিন্তু ছুটি মানেই যে পরিবারের কিশোর-কিশোরীরা পুরোপুরি স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারবে, তা অনেক বাবা-মা ভাবতেই পারেন না।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, অর্ধেকেরও কম বাবা-মা তাঁদের টিনএজ সন্তানদের হোটেল রুমে একা রেখে প্রাতরাশ করতে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন । প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বাবা-মা অনুমতি দেন সন্তানকে একা কফি শপে যেতে , আর মাত্র পাঁচ জনের মধ্যে একজন অনুমতি দেন বিনোদন পার্কে একা ঘুরে বেড়াতে।
ভারতে ছবিটা খুব আলাদা নয়। কলকাতার নিউ টাউনের বাসীন্দা অনিতা বসু জানান, তিনি ছেলের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিউ মার্কেট ঘুরতে যেতে দিলেও, দূরের মলে বা সিনেমা হলে একা যেতে দিতে ভয় পান। দিল্লির এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, “আমি আমার ছেলেকে মেট্রোতে একা পাঠাই না, যদিও ওর বয়স ১৬।”
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, টিনএজ বয়সে কিছুটা স্বাধীনতা খুব জরুরি। কারণ এই সময়েই তারা বাস্তব জীবনে সিদ্ধান্ত নেওয়া, পরিস্থিতি সামলানো এবং আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা শেখে। কিন্তু আজকাল শিশু ও কিশোরদের স্বাধীনভাবে খেলাধুলা বা বাইরে যাওয়ার সুযোগ অনেক কমে গেছে। আগের প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে স্কুলে সাইকেলে যাওয়া বা টিউশন শেষে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলার দৃশ্য ছিল খুব সাধারণ—এখন তা প্রায় বিরল।
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার এই অভাবের সঙ্গে কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টিনএজদের মধ্যে উদ্বেগ, বিষণ্নতা এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছুটি হচ্ছে স্বাধীনতা উপভোগের জন্য সেরা সময়। বাবা-মা এর উচিত তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় এমন জায়গা বেছে নেওয়া যেখানে সন্তানরা কিছুটা একা ঘুরতে পারবে—যেমন সুরক্ষিত সমুদ্রসৈকত, রিসোর্টের অভ্যন্তরীণ এলাকা বা পরিচিত পাহাড়ি শহরের বাজার। সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসেবে তারা সন্তানের কাছে তাদের গতিবিধি ম্যাসেজ করে জানানোর নিয়ম করতে পারেন বা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে দেখা করার কথা বলতে পারেন।
উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সব বিপদ থেকে বাঁচানো নয়, বরং জীবনের বাস্তব পরিস্থিতি সামলানোর দক্ষতা শেখানো। যেমন—বাস বা মেট্রো ব্যবহার, অপরিচিত কেউ কথা বললে কী করা উচিত, বা রেস্তোরাঁয় নিজে খাবার অর্ডার দেওয়া।
একজন মনোবিজ্ঞানী যেমন বললেন—”যদি আমরা এই গ্রীষ্ম, শীত বা পূজার ছুটিতে অন্তত কয়েকটি পরিবারকে একটু ভিন্নভাবে কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারি, সেটাই বড় সাফল্য হবে।”
বিভিন্ন পত্রিকা থেকে পাওয়া কিছু সাম্প্রতিক তথ্য:
Uber for Teens — ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে উবার ভারতের ৩৭টি শহরে চালু করেছে “Uber for Teens” পরিষেবা, যা ১৩–১৭ বছরের টিনএজদের জন্য GPS-ট্র্যাকিং, রিয়েল-টাইম মনিটরিং ও পিতামাতার নজরদারি সুবিধা দিয়ে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯২% বাবা-মা জানিয়েছেন তাঁদের টিনএজার যাতায়াতের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য পরিবহন না থাকায় সমস্যায় পড়ে, এবং ৭২% নিরাপত্তাকেই সবথেকে বড় উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।(The Times of India)
Cleartrip এর অনুযায়ী, ভারতের Gen Z (প্রায় ১৮–২৫ বছরের) নতুন প্রজন্ম ডিজিটালভাবে সাবলীল ও স্বাধীন। তারা একা, ফ্লেক্সিবল ভ্রমণ পছন্দ করে, যা তাদের স্বতন্ত্রতার ও নিজস্ব স্বীকৃতির অংশ।(The Times of India)
আর Skyscanner-এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৪৭% ভারতীয় Gen Z প্রথম বিদেশ ভ্রমণই করছে একা। (The Times of India, The Economic Times)
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ কিশোরদের দৈহিক কর্মক্ষমতা কম— তরুণরা পর্যাপ্ত শারীরিক চর্চা করার সুযোগ পায় না, ফলস্বরূপ তারা কম আত্মনির্ভরশীল হয়। চেন্নাইয়ের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭৩.৫% টিনএজার কোনোদিনও স্কুলে হাঁটেন না; ৭৮.৪% সাইকেল চালায় না।(PMC)
নগরজীবনে বেশিরভাগ কিশোর ও মেয়েদের বাইরে চলাফেরার সুযোগ সীমিত হচ্ছে—যা তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় প্রভাব ফেলছে।
পরিশেষে ছুটি কেবল আনন্দ নয়, কিশোরদের জীবনে স্বাধীনতা শেখার এক দারুণ সুযোগ। তারা কেমন করে সিদ্ধান্ত নেয়, কীভাবে বাস্তব পরিস্থিতি সামলায়—এই গুণগুলোকে দারুন ভাবে গড়ে তোলা যায় ছুটি কাটানোর মাধ্যমে। কিছু সতর্কতা মূলক নির্দেশিকা দিয়ে—যেমন নির্দিষ্ট সময় ম্যাসেজ করে বা Uber for Teens-এর মতো পরিষেবা ব্যবহার করে—টিনএজরা স্বতন্ত্রভাবে চলাফেরা শিখতে পারে এবং আত্মবিশ্বাসী হতে পারে।
আরও পড়ুন
সহযাত্রী
দীপা - আর তো এগারো বছর আটমাস বারোদিন চাকরি , তাই না ? অংশু - বাপরে বরাবরই তোমার স্মৃতিশক্তি প্রবল , এতোটা মনে আছে ? দীপা- ঘোরো টো টো করে আর কটা বছর , আফটার রিটায়ার্ড মেন্ট কি করবে ? অংশু - ফার্ম হাউস ,গাছপালা পশুপাখি নিয়ে থাকবো। দীপা- বাঃ উন্নতি হয়েছে। যে অংশুবাবু কখনও একটা ফুলের চারা লাগায়নি সে কিনা ফার্ম হাউস করবে … অংশু - সময়ের সাথে সব বদলায় ম্যাডাম , আচ্ছা তোমার কনুইয়ের নীচে সেই পোড়া দাগটা দেখি তো গেছে কিনা … দীপা- তুমি অনেক রোগা হয়ে গেছো , তা ওজন কত শুনি ? অংশু - সত্তর বাহাত্তর হবে বোধহয় মাপিনি, দীপা - তা কেনো মাপবে ? একটা অগোছালো মানুষ। অংশু - যাক বাবা তাও অপদার্থ শব্দ টা বলোনি। দীপা - ভাবোনা ডিভোর্স হয়েছে বলে সে অধিকার নেই। সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও আসলে সমাজটাই শেখোনি , আর কি শিখেছো বলো, ঐ ছেলে পড়ানো , সেমিনার আর লেখালেখি। তা ধন্যবাদ তোমার রূপালী ঠৌট উপন্যাস এবছর একাডেমি পেলো , দারুণ লেখো তুমি, আগের চেয়ে অনেক ধার। অংশু- বাঃ তুমি পড়েছো ? দীপা- সব পড়েছি , তোমার রিসেন্ট উপন্যাসের নায়িকা মেঘনা টি কে ? মানে কার আড়ালে কাকে লিখেছো ? অংশু - এও কি বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপিকাকে বলে দিতে হবে ? দীপা- বারোটা বছর সময়ের শাসনে অনেক বদলালেও আমি বোধহয় সেই বড্ড সেকেলেই রয়ে গেলাম। অংশু - একা একাই কাটিয়ে দিলে বারো বছর। দীপা- একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। অংশু - আচ্ছা দীপা আজ না হয় শেষবারের মতো বলি, আমার মধ্যে কি ছিলো না বলোতো ? কেনো পারোনি এই বাউন্ডুলে ভবঘুরে মানুষটার সাথে চিরকালের ঘর বাঁধতে ? আমি কি ভালোবাসতে জানি না ? .....বিস্তারিত পড়ুন
World’s most polluted cities: নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়
উত্তরাপথঃ দিওয়ালি উদযাপনের একদিন পর জাতীয় রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই এবং কলকাতা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় উঠে এসেছে।সোমবার, অর্থাৎ দীপাবলির পরের দিন এই শহরগুলির বায়ুর গুণমান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় খারাপ হয়েছে।বায়ুর গুনমান খারাপ হওয়ার পেছনে মাত্রাতিরিক্ত আতশবাজি জ্বালানোকে দায়ী করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের (World’s most polluted cities) তালিকায় যথারীতি প্রথম স্থান দখল করেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দীপাবলির পরের দিন এটির AQI (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) পরিসংখ্যান ছিল ৪০৭। নভেম্বরের শুরু থেকে, দিল্লিতে AQI পরিসংখ্যান খারাপ হয়েছে। সুইস গ্রুপ আইকিউএয়ার শহরের বাতাসকে "বিপজ্জনক" বিভাগে রেখেছে।ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়(World’s most polluted cities), ১৫৭ এর AQI সহ ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। কলকাতা ১৫৪ এর AQI সহ সপ্তম স্থানে রয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?
প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন