

উত্তরাপথঃ মানুষ আর মুরগির মধ্যে এত মিল থাকতে পারে—তা শুনলে অবাক হতে হয়। বিশেষ করে প্রজনন বা ফার্টিলিটির ক্ষেত্রে! আর এই অদ্ভুত মিলের সেতুবন্ধনে রয়েছে এক সাধারণ কিন্তু বহুল ব্যবহৃত ডায়াবেটিসের ওষুধ—মেটফর্মিন।
পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের নতুন আবিষ্কার বলছে, এই ওষুধ শুধু টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) এর চিকিৎসায় কার্যকর নয় বরং এটি ব্রয়লার ব্রিডার মুরগিদেরও বেশি ডিম দিতে সাহায্য করে। মূলত মুরগির বার্ধক্যজনিত ফার্টিলিটি হ্রাস প্রতিরোধে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কিভাবে কাজ করে মেটফর্মিন?
যদিও আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা জানতেন মেটফর্মিন ডিম উৎপাদনে সহায়তা করে, কিন্তু ঃ সম্প্রতি উন্মোচন হয়েছে ‘Biology of Reproduction’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায়।দেখা গেছে, মুরগির শরীরের লিভার অংশে এই ওষুধ এমন কিছু জিনকে “উদ্দীপিত” করে যেগুলো ইয়োল্ক প্রোটিন তৈরি ও রক্তে সুগারের ভারসাম্য রক্ষা করে। একইসঙ্গে এটি এমন কিছু জিনকে “’ নিষ্ক্রিয়” করে দেয় যেগুলো চর্বি সঞ্চয়ের জন্য দায়ী। এর কাজ মানুষের শরীরে মেটাবলিক ডিসঅর্ডারে ওষুধের কাজের সাথে মিলে যায়।
মানুষের জন্য কী বার্তা দেয় এই গবেষণা?
PCOS একটি হরমোনজনিত সমস্যা, যা প্রায় ৪% থেকে ১২% নারীর মধ্যে দেখা যায় এবং এটি নারী বন্ধ্যাত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। মেটফর্মিন প্রায়শই PCOS লক্ষণগুলির চিকিৎসার জন্য অফ-লেবেল ব্যবহার করা হয় ।এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে, অতিরিক্ত হরমোনের মাত্রা কমায় এবং মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, সম্ভাব্যভাবে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
প্রোডাকশন জার্নালে প্রকাশিত ২০২৩ সালের একটি গবেষণায়, পেন স্টেটের গবেষকরা মুরগির একটি দলকে ৪০ সপ্তাহ ধরে মেটফর্মিনের একটি ছোট দৈনিক ডোজ দিয়েছিলেন।ফলাফলগুলি ছিল আশ্চর্যজনক: এতে মুরগিগুলি বেশি উর্বর ডিম পাড়ে, তাদের শরীরের চর্বি কম ছিল এবং ওষুধ না দেওয়া মুরগির তুলনায় এই মুরগিগুলিতে স্বাস্থ্যকর প্রজনন হরমোনের মাত্রা দেখিয়েছিল।সুতরাং এই গবেষণার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে—মানুষের প্রজনন সমস্যা বোঝার জন্য মুরগিকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
খাদ্য নিরাপত্তা ও পোলট্রি শিল্পে সম্ভাবনা
গবেষকদের মতে, মেটফর্মিন পুরোনো মুরগিদের প্রজনন ক্ষমতা ধরে রাখতে সহায়তা করে, ফলে তারা দীর্ঘ সময় ধরে ডিম দিতে পারে। এর ফলেখামার ব্যবসায়ীদের ব্যবসার জন্য খরচ কমবে, পশু কল্যাণ বাড়বে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়বে। সবচেয়ে বড় বিষয়, যেহেতু মেটফরমিন দ্রুত বিপাকীয় হয় এবং মাংসে জমা হয় না, তাই এটি হাঁস-মুরগিতে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়।
গবেষণা দলের প্রধান ড. রমেশ রামাচন্দ্রন বলেন, “এই ওষুধ মুরগির ডিম উৎপাদন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।“ গবেষক দলের আরেক গবেষক এভলিন ওয়েভারের মতে, “মেটফরমিন বয়স্ক মুরগিকে বিপাকীয় স্তরে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, যা তাদের আরও ডিম উৎপাদন করতে দেয়।”
বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার হাঁস-মুরগি পালনে বিপ্লব আনতে পারে—সরবরাহ বৃদ্ধি করতে, পশুর কল্যাণ উন্নত করতে এবং ডিম উৎপাদনকে আরও দক্ষ করে তুলতে—সবকিছুই একটি সাশ্রয়ী মূল্যের, প্রমাণিত ওষুধ ব্যবহার করার মাধ্যমে। তাই পরের বার যখন আপনি আপনার খাবার টবিলে ডিমের কোনও পদ উপভোগ করবেন, মনে রাখবেন—এই ডিমগুলির পিছনে আপনার ধারণার চেয়েও বেশি প্রযুক্তি রয়েছে!
Reference: “Metformin alters liver metabolism to sustain egg production in the reproductively aging broiler breeder hen” by Evelyn Anne Weaver, Nathan Patrick Connolly, Tae Hyun Kim and Ramesh Ramachandran, 28 March 2025, Biology of Reproduction.
DOI: 10.1093/biolre/ioaf072
আরও পড়ুন
সম্পাদকীয়- রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র
সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল। আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন
Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক
উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক। প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন। ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন
দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?
উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে। বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী? আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত? পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না? এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন