

প্রীতি গুপ্তাঃ শুক্রবার দিল্লির নরেলাতে নর্দমা পরিষ্কার করার সময় শ্বাসরোধে দুই শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু কেবল ভারতেই নয়, বিশ্বের অনেক জায়গায় এখনও এটি একটি বড় সমস্যা। এই ধরনের ঘটনা রোধ করার লক্ষ্যে নিয়মকানুন থাকা সত্ত্বেও, সরকারি বিভাগগুলির সেগুলির সঠিক প্রয়োগ এবং গুরুত্বের অভাব বহু মানুষের জীবনহানির কারণ হচ্ছে। তাহলে কেন সুরক্ষা ব্যবস্থা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয় না ,যার ফলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।
ভারতে, নর্দমা পরিষ্কার প্রায়শই ম্যানুয়ালি করা হয়, শ্রমিকরা যথাযথ সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই সীমিত স্থানে প্রবেশ করে। নর্দমায় বিষাক্ত গ্যাস, যেমন হাইড্রোজেন সালফাইড, কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারাত্মক হতে পারে। নরেলাতে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে গিয়ে আরেকজন কর্মী অজ্ঞান হয়ে পড়েন, যা এই ধরনের কাজের বিপদকে তুলে ধরে। দুঃখের বিষয়, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রায়দিনই একই রকম দুর্ঘটনা ঘটে, অবহেলা এবং সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার অভাবে শ্রমিকরা প্রাণ হারান।
বিশ্বব্যাপী তুলনা: অন্যান্য দেশ কীভাবে নর্দমা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করে
আমাদের দেশে যখন এখনও হাতে নর্দমা পরিষ্কারের পদ্ধতি চালু রয়েছে তখন অনেক দেশ নিরাপদ এবং আরও উন্নত পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং জাপানের মতো উন্নত দেশগুলি নর্দমা পরিষ্কার করার জন্য রোবোটিক মেশিন এবং উচ্চ-চাপের জেট ব্যবহার করে, যা মানুষের প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা দূর করে। কঠোর শ্রম আইন এবং সুরক্ষা বিধি শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো মধ্যম আয়ের দেশগুলিও যান্ত্রিক পরিষ্কার ব্যবস্থা শুরু করেছে, যদিও সেখানে সমস্ত ক্ষেত্রে প্রয়োগের ক্ষেত্রে তহবিলের কিছু সমস্যা রয়েছে।
– অন্যদিকে ভারত, বাংলাদেশ এবং নাইজেরিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলি এখনও নর্দমা পরিষ্কারের জন্য কায়িক শ্রমের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। এই দেশগুলিতে শ্রমিকরা একই রকম ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, খুব কম বা কোনও সুরক্ষা সরঞ্জাম বা আইনি সুরক্ষা নেই।
সমস্যাটি কেন টিকে রয়েছে?
মূল কারণটি পদ্ধতিগত সমস্যাগুলির মধ্যে নিহিত: রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব, আধুনিকীকরণের জন্য অপর্যাপ্ত তহবিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বাধ্য করা প্রান্তিক সম্প্রদায়ের শোষণ। সরকারগুলি প্রায়শই দুর্ঘটনার পর ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং-এর উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে এবং তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু বাস্তবে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জবাবদিহিতা ছাড়া, খুব কমই পরিবর্তন হয়।
নারেলার ঘটনাটি একটি স্পষ্ট স্মারক যে এটি কেবল একটি স্থানীয় সমস্যা নয় বরং এটি বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল দেশগুলির সমস্যা। যা দেশগুলিতে শ্রমিকদের দ্বারা সম্মুখীন হওয়া বৈষম্য এবং অবহেলার প্রতিফলন করে। এই বৈষম্য দূর করার জন্য, সরকারগুলিকে অবশ্যই:
১. আধুনিক নর্দমা পরিষ্কার প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে।
২. কঠোর নিরাপত্তা বিধি প্রয়োগ করতে হবে এবং সঠিক প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে।
৩.সেইসাথে প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলিকে আরও ভাল চাকরির সুযোগ এবং শিক্ষা দিয়ে ক্ষমতায়িত করতে হবে।
বিশ্ব আর এই সমস্যাটিকে উপেক্ষা করতে পারে না। নর্দমায় হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি জীবন শাসনের ব্যর্থতা এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘনের কথা তুলে ধরে। এই ট্র্যাজেডির অবসান ঘটাতে সময় এসেছে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল দেশগুলির উদ্যোগ নেওয়ার।
আরও পড়ুন
সম্পাদকীয়
পশ্চিমবঙ্গের ছোট-বড় যে কোনও নির্বাচন মানেই রাজনৈতিক হিংসা । সদ্য অনুষ্ঠিত পঞ্চায়েত নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম নয়।রাজনৈতিক হিংসা যাতে না হয় নির্বাচনে তার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার পরও হিংসা অব্যাহত থাকল, সারা রাজ্যজুরে ঘটল তেরোটি মৃত্যুর ঘটনা ।পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘট হিংসা রাজ্যের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহ নাগরিকদের ভোটাধিকার নিয়ে আমাদের সামনে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আমাদের রাজ্যে চলতে থাকা রাজনৈতিক হিংসার পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ একাধিক কারণ থাকলেও বেকারত্ব সহ দুর্বল গ্রামীন অর্থনীতি এর প্রধান কারণ । দুর্বল গ্রামীন অর্থনীতির কারণে বেশীরভাগ গ্রামীন এলাকার মানুষদের অর্থনৈতিক উপার্জনের সুযোগ খুব কম। বিশেষত স্বল্প শিক্ষিত সেই সব মানুষদের যারা না পায় সরকারি চাকুরি না পারে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতে, গ্রামীন অর্থনীতিতে বিশাল সংখ্যক মানুষ এই শ্রেনীর অন্তর্গত .....বিস্তারিত পড়ুন
জোছনা রাতে
অসীম পাঠক: পূর্ণিমার মায়াবী চাঁদের আলোয় বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। পুরুলিয়ার পান্ডব বর্জিত এক গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে গ্রামের শৌখিন যাত্রার আসরে পঙ্গপালের মতো ছুটে চলেছে সব মানুষজন। গোপালপুরে যাত্রা তাও আবার ঐতিহাসিক পালা। ঝলমলে পোশাকের মেলা আর গ্রাম্য বিনোদনের এক অফুরন্ত ভান্ডার, সাথে মেলা জুয়ার আসর, দেশী মহুয়ার চনমনে নেশা। কাঁচের গ্লাসে ফেনায়িত মদ আর ঝালঝাল চাখনা ছোলা মটর বাদাম। আহা রে- জিভ চকচক করে হরিপদর। বেশ রসিক মানুষ হরিপদ কর্মকার, তার রসের ভান্ডারে কতো বিচিত্র অভিজ্ঞতা র গল্প। নাম করা গুনীন, সাপের বিষ না .....বিস্তারিত পড়ুন
৩৭০ ধারার সিদ্ধান্ত কি SC-এ বাতিল হতে পারে ?
উত্তরাপথ: ৩৭০ ধারা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় আদালত আগামী ২ আগস্ট থেকে এ বিষয়ে নিয়মিত শুনানি করবে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সহ ৫ বিচারপতির বেঞ্চ উভয় পক্ষের যুক্তি শুনবে। এ বিষয়ে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হঠাৎ কেন ৪ বছর পর সুপ্রিম কোর্টে ৩৭০ ধারা নিয়ে শুনানি হচ্ছে, পিটিশনকারীদের যুক্তি কী .....বিস্তারিত পড়ুন
মানভূমের নাচনি শিল্পীদের সংগঠন : 'মানভূম লোকসংস্কৃতি ও নাচনী উন্নয়ন সমিতি'
ড. নিমাইকৃষ্ণ মাহাত: মানভূমের প্রচলিত প্রাচীন লোকনৃত্য গুলির মধ্যে অন্যতম হল নাচনি নাচ । এই অঞ্চলের লোকনৃত্যগুলির মধ্যে জনপ্রিয়তায় ও ব্যাপ্তিতে ছৌ নাচের পরেই রয়েছে নাচনি নাচ। এই নাচে আছে মাটির টান , অন্তরের স্পন্দন । মানভূমে বর্তমানে প্রায় ৭০ জন নাচনিশিল্পী রয়েছেন । এই শিল্পীরা সকলেই কমবেশি দুর্ভাগ্য- পীড়িত। অধিকাংশ নাচনিই দুঃখ-কষ্ট, দারিদ্র ও দুর্ভাগ্যের স্রোতে ভাসতে ভাসতে জীবনে বেঁচে থাকার জন্য খড়কুটোর মত আঁকড়ে ধরেছেন নাচনি নাচকে। .....বিস্তারিত পড়ুন