বায়ু দূষণ আমাদের চিন্তাভাবনা ও মনকে কীভাবে প্রভাবিত করে

উত্তরাপথঃ দূষিত বাতাস আপনার চিন্তাভাবনা এবং মানসিক স্বচ্ছতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারনা।সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে কয়েক ঘন্টা থাকার পর কোনও কাজে মনোনিবেশ করা, কারও আবেগ বোঝা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।দীর্ঘ মেয়াদে এই সমস্যাগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবন এবং উৎপাদনশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা আমাদের মস্তিষ্কের সুস্থ্য কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

বায়ু দূষণ এবং মনোযোগ সম্পর্কে নতুন তথ্য

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্বল্প সময়ের জন্য বায়ু দূষণের সংস্পর্শে থাকার ফলে, বিশেষ করে কণা পদার্থ (PM) নামে পরিচিত ক্ষুদ্র কণা, মানুষের কোনও কাজে মনোনিবেশ করা এবং কারও আবেগ বোঝা কঠিন করে তুলতে পারে। এর অর্থ হল অদূর ভবিষ্যতে  বায়ু দূষণ বাড়ার সাথে সাথে সারাদিন মাঠে রাস্তায় ঘোরার পরে এইসব সাধারণ কাজগুলি করা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে।বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে উচ্চ মাত্রার PM-এর সংস্পর্শেও অল্প সময়ের জন্য মনোযোগ হ্রাস, বিক্ষেপ বৃদ্ধি এবং সামাজিক আচরণ পরিবর্তিত হয়।

গবেষণা পদ্ধতি

একটি গবেষণায়, গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের দূষিত বায়ু শ্বাস নিতে বলেছিলেন, যা মোমবাতির ধোঁয়া ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল। তারা অংশগ্রহণকারীদের দূষিত বাতাসের সংস্পর্শের আসার আগে এবং বাতাসের সংস্পর্শের আসার চার ঘন্টা  পরে জ্ঞানীয় ক্ষমতা পরীক্ষা করেছিলেন।গবেষকরা এই পরীক্ষাগুলি কাজের স্মৃতি, মনোযোগ, আবেগ স্বীকৃতি এবং প্রতিক্রিয়ার মতো দিকগুলি পরিমাপ করেছিলেন।

নেচার কমিউনিকেশনস–এ প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে যে, অংশগ্রহণকারীরা যেভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস নেন না কেন, বায়ু দূষণ তাদের মনোযোগ এবং মানসিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে দূষণের কারণে সৃষ্ট প্রদাহ এই জাতীয় সমস্যার পিছনে থাকতে পারে।এক্ষেত্রে  মনোযোগ এবং আবেগের অনুভূতির দিকটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, কর্মক্ষম স্মৃতিশক্তি অক্ষত থাকে, যা পরামর্শ দেয় যে কিছু মস্তিষ্কের কার্যকারিতা স্বল্পমেয়াদী দূষণের সংস্পর্শে বেশি স্থিতিস্থাপক।

বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ থমাস ফাহার্টি বলেছেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে কণা পদার্থের সাথে স্বল্পমেয়াদী সংস্পর্শও দৈনন্দিন কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় মস্তিষ্কের কার্যকারিতা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যেমন কেনাকাটা।”

খারাপ বায়ু মানের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফ্রান্সিস পোপ জোর দিয়ে বলেছেন যে নিম্ন বায়ুর মান শেখার এবং কাজের কর্মক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যার গুরুতর অর্থনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে। এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য উন্নত বায়ু মান বজায় রাখার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, বিশেষ করে দূষিত শহরাঞ্চলে।

প্রসঙ্গত দৈনন্দিন কাজের জন্য জ্ঞানীয় দক্ষতা অত্যাবশ্যক।এটি সামাজিক-মানসিক জ্ঞান আমাদের আবেগ চিনতে এবং বুঝতে সাহায্য করে, উপযুক্ত সামাজিক মিথস্ক্রিয়া পরিচালনা করে। একসাথে, এই দক্ষতাগুলি কাজ এবং দৈনন্দিন জীবনে সাফল্যের জন্য অপরিহার্য।

এই গবেষণাটি বায়ু দূষণ কীভাবে জ্ঞানীয় কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের মতো দুর্বল গোষ্ঠীর উপর, সে সম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।এই ক্ষেত্রে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গর্ডন ম্যাকফেগানস জ্ঞানীয় স্বাস্থ্যের উপর দূষণের প্রভাব বোঝার গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন, বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য।

বায়ু দূষণ একটি উল্লেখযোগ্য বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ঝুঁকি, যা অকাল মৃত্যুতে অবদান রাখে এবং হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে বলে জানা যায়। এটি আলঝাইমার এবং পার্কিনসনের মতো গুরুতর মস্তিষ্কের রোগের সাথেও যুক্ত।

PM ২.৫  এক ধরণের সূক্ষ্ম কণা যা, বিশেষ ক্ষতিকারক। ২০১৫ সালে, এটি আনুমানিক ৪.২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সুপারিশ করে যে দৈনিক এবং বার্ষিক এক্সপোজার সীমা যথাক্রমে ১৫ μg/m³ এবং ৫ μg/m³ এর নিচে রাখা উচিত। সংক্ষেপে, এই গবেষণাটি আমাদের জ্ঞানীয় স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্য বায়ু দূষণ মোকাবেলার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

“Acute particulate matter exposure diminishes executive cognitive functioning after four hours regardless of inhalation pathway” by Thomas Faherty, Jane E. Raymond, Gordon McFiggans and Francis D. Pope, 6 February 2025, Nature Communications.
DOI: 10.1038/s41467-025-56508-3

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে

উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top