

আমরা এমন এক সময়ে বাস করি যেখানে ইন্টারনেট এক অবিচ্ছেন্দ্য যোগাযোগের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। আজ আমাদের কাছে কয়েক ঘণ্টার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া ব্ল্যাকআউটের সময় বিদ্যুৎ না থাকার চেয়েও খারাপ মনে হয়। আজ, ইন্টারনেট সংযোগের গ্যাজেটগুলি ঘরে সর্বত্র রয়েছে , শিশুরা এখন বাইরে খেলার চেয়ে স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় ব্যয় করে।
বিগত কয়েক বছরে ভারতের ইন্টারনেটের ব্যবহার অনেক বেড়েছে।এখন চীনের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশ ভারত। একটি বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ২০২৪ সালে আমাদের দেশে ৮৮৬ মিলিয়নেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে – যা জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি! ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মতো সরকারি কর্মসূচির সাথে সস্তা স্মার্টফোন এবং ডেটা প্ল্যানগুলি আরও বেশি লোককে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান, শিশুরা এই ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন ১৮ বছরের কম বয়সী এবং ভারতে, ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ১৫ শতাংশ ।
গড়ে, ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা প্রতিদিন প্রায় ৫.৫ ঘন্টা শুধুমাত্র মজা করার জন্য স্ক্রিনে ব্যয় করে, হোমওয়ার্ক বা স্কুলের অনলাইন পড়াশুনার সময় গণনা না করে । ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা আরও বেশি সময় ব্যয় করে – প্রতিদিন প্রায় ৮.৫ ঘন্টা। মহামারী চলাকালীন, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্ক্রিন টাইম ব্যায় করার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়েছে, যা দেখায় যে প্রযুক্তি তাদের জীবনে কতটা গভীরভাবে প্রবেশ করেছে।
পারিবারিক জীবনের উপর প্রভাব
একসময়, বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের “টিভি বন্ধ করতে” বলতেন। এখন, আমরা চাইলেও ইন্টারনেট বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। প্রযুক্তি পারিবারিক রুটিন বদলে দিয়েছে। বই এবং কাগজ ট্যাবলেট এবং স্মার্টফোন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। যখন ইন্টারনেটের গতি কমে যায়, তখন ঘরে ছোট থেকে বড় সবাই উদ্বিগ্ন বা হতাশ হয়ে পড়ে।
আমাদের অনেকেই অনেকটা অভ্যাস বসেই অনলাইনে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। এই অভ্যাস কাটিয়ে উঠা সকলের জন্য, বিশেষ করে শিশুদের জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ। দুর্ভাগ্যবশত, স্ক্রিনের এই অতিরিক্ত ব্যবহার তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বাবা-মা ব্যস্ত এবং বিভ্রান্ত থাকায়, শিশুরা বাইরে খেলতে কম সময় ব্যয় করছে এবং স্ক্রিনে আটকে বেশি সময় ব্যয় করছে।
খেলা কেন গুরুত্বপূর্ণ
শিশুদের বৃদ্ধির জন্য খেলা অপরিহার্য। রান্নাঘরের বাসনপত্র বা কার্ডবোর্ডের বাক্স নিয়ে খেলার মতো সহজ কার্যকলাপ শিশুদের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা শিখতে এবং বিকাশে সাহায্য করে। এগুলি শিশুদের মধ্যে খেলাধুলায় সৃজনশীলতা, সামাজিক দক্ষতা, সমস্যা সমাধান এবং মানসিক নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করে। অনলাইনে আকর্ষণীয় বিনোদনের কারণে, শিশুরা ঘরে ও বাইরে কম খেলাধূলা করছে।
অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে যুক্ত, যেমন বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, আগ্রাসন, ঘুমের সমস্যা এবং এমনকি নিজের ক্ষতি করার চিন্তাভাবনা। টিভি, গেম এবং ইন্টারনেটে হিংসাত্মক বা ক্ষতিকারক বিষয়বস্তুর সংস্পর্শে আসায় অনেক ক্ষেত্রেই তাদের মধ্যে আক্রমণাত্মক আচরণ এবং বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাসের ঝুঁকি বাড়ছে বলে অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন।এনসিআরবি (ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো) অনুসারে, কিশোর হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ ব্যক্তিদের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী।অন্যদিকে সময়ের সাথে সাথে, শিশুরাও সহিংসতার প্রতি আকর্ষিত হয়ে উঠছে এবং তাদের মধ্যে আরও রাগ বা আবেগপ্রবণতা বেশী বাড়ছে।অভিভাবকরা তাদের ফোনে অনেকটা সময় ব্যয় করেন, যা শিশুদের সাথে তাদের মানসিক সংযোগ হ্রাস করতে পারে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য, অত্যধিক স্ক্রিন টাইম তাদের ভাষা দক্ষতা এবং চিন্তাভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
পরিশেষে, গ্যাজেটের অত্যধিক ব্যবহার শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক বিকাশকে প্রভাবিত করছে। আমাদের স্ক্রিন টাইম এবং বাস্তব খেলার মধ্যে একটি ভাল ভারসাম্য খুঁজে বের করতে হবে যাতে শিশুরা সুখী, সুস্থ এবং সুপরিকল্পিতভাবে বেড়ে উঠতে পারে।
আরও পড়ুন
Side effects of vitamin: ভিটামিনের আধিক্য আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
উত্তরাপথঃ ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে সুস্থ থাকতে হলে শরীরে প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন থাকা খুবই জরুরি। ভিটামিন আমাদের সুস্থ করার পাশাপাশি আমাদের সমগ্র শরীরের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আসুন জেনে নিই অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side effects of vitamin)সুস্থ থাকার জন্য শরীরে সব ধরনের পুষ্টি থাকা খুবই জরুরি। এ কারণেই বয়স্ক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সবাই আমাদেরকে সুষম ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সমস্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সুস্থ করে তোলে। এর মধ্যে ভিটামিন একটি, যা আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। .....বিস্তারিত পড়ুন
Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ
উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন
NASA Carbon Emission: পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে
উত্তরাপথঃ কার্বন নির্গমন (NASA Carbon Emission) সম্পর্কে নাসার সর্বশেষ আবিষ্কার পৃথিবীর জন্য এক সতর্কতা সংকেত। মহাকাশ সংস্থার মতে, পৃথিবী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার চেয়ে বেশি নির্গত করছে, যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। NASA এর এই আবিষ্কারটি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে, সেইসাথে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেছে।নাসার সর্বশেষ গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে পৃথিবীর মহাসাগর এবং ভূমি-ভিত্তিক বাস্তুতন্ত্র আগের চেয়ে কম কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে গত এক দশকে ভূমি এবং মহাসাগর দ্বারা শোষিত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৫% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে গ্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। .....বিস্তারিত পড়ুন
ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার
উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে। কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে। যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে। অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়। এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে। এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন