হিরোশিমা দিবস: পারমাণবিক অস্ত্রকে না বলার দিন

হিরোশিমা দিবস পালন ,জাপান। ছবি সৌজন্য – উত্তরাপথ

গার্গী আগরঅয়ালা মাহাতোঃ ৬ আগস্ট, ১৯৪৫-এ,সারা বিশ্ব প্রথম পারমাণবিক যুদ্ধের বিধ্বংসী প্রভাব প্রত্যক্ষ করেছিল । সেইদিন জাপানের হিরোশিমা শহরটি পারমাণবিক বোমা দ্বারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।প্রতি বছর হিরোশিমা দিবস নামে পরিচিত এই দিনটিতে পরমাণু যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং বৈশ্বিক শান্তির জন্য জরুরী পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করার একটি দিন।এই দুঃখজনক ঘটনার ৭৮তম বর্ষ আবার আমাদের সেই বিভীষিকাময় ইতিহাসকে বিশ্ববাসীকে পরমাণু যুদ্ধের ভয়াবহতা স্মরণ করাল।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত ৬ বছর ধরে চলেছিল । এই যুদ্ধকে অন্তিম পরিণতি দেবার জন্য আমেরিকা জাপানের উপর পরমাণু আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। আমেরিকা প্রথম জাপানের কিয়োটো শহরকে চিহ্নিত করে পরমাণু হামলার জন্য ।কিন্তু প্রাচীন ঐতিহ্য মণ্ডিত এই শহরে অনেকগুলো প্রধান ইউনিভার্সিটি ,  বড় শিল্প ,২০০০ বৌদ্ধ মন্দির এবং বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন থাকায় কিয়োটোর বদলে আমেরিকা হিরোশিমায় পরমাণু আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়।

১৯৪৫সালের ৬ আগস্ট সকাল ৮.১৫ মিনিটে, মার্কিন বি-২৯ বোমারু বিমান এনোলা গে হিরোশিমায় “লিটল বয়” নামক পারমাণবিক বোমা ফেলে। বিস্ফোরণ তাৎক্ষণিকভাবে আনুমানিক ১৪০,০০০ লোককে হত্যা করেছিল, পরবর্তী বছরগুলিতে হিরোশিমাবাসীকে গুরুতর আঘাত এবং বিকিরণ-সম্পর্কিত অসুস্থতায় ভুগতে হয়েছিল।  যে সময় হিরোশিমা শহরে বোম ফেলা হয়েছিল সেই সময় শহরের তাপমাত্রা চার লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল। ধ্বংস এবং মানুষের দুর্ভোগের একটি ভুতুড়ে উত্তরাধিকার রেখে শহরটিকে ধ্বংস করা হয়েছিল পারমাণবিক বোমা ফেলে।আজও হিরোশিমায় গেলে পরমাণু যুদ্ধের সেই ভয়ঙ্কর ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যাবে।  

হিরোশিমা, জাপান । ছবি সৌজন্য – উত্তরাপথ

হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা দ্বারা সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ বিশ্ববাসীর চেতনার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। বিশ্ব পারমাণবিক অস্ত্রের অপরিমেয় ধ্বংসাত্মক শক্তি প্রত্যক্ষ করেছে, যা  বিশ্ববাসীকে একটি সম্মিলিত উপলব্ধির দিকে পরিচালিত করেছে যে এই ধরনের অস্ত্র মানবতার অস্তিত্বের জন্য হুমকি। হিরোশিমার ট্র্যাজেডি পারমাণবিক যুদ্ধ প্রতিরোধের জন্য বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের একটি ক্ষেত্র হয়ে ওঠে।

হিরোশিমা এবং পরবর্তীতে নাগাসাকিতে ৯ আগস্ট, ১৯৪৫-এ আবার আমেরিকার দ্বারা পরমাণু হামলা হয়, পরপর দুটি হামলার পর জাপান আত্মসমর্পণ করে, কার্যকরভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এই দুই শহরে সংঘটিত নৃশংসতা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এটি অবশেষে ১৯৬৮সালে বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রের অপ্রসারণ সংক্রান্ত চুক্তি (NPT) তৈরির দিকে উদ্বুদ্ধ করে, যার লক্ষ্য ছিল পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ করা এবং নিরস্ত্রীকরণের প্রচার করা।

হিরোশিমা দিবস ৭৮ বছর পরও আমাদের পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার জরুরি প্রয়োজনীতার কথা স্মরণ করায়। এই দিনটি বিশ্ববাসীকে  শান্তি ও পারমানবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে উৎসাহিত করে।সেইসাথে ক্ষতিগ্রস্থদের স্মরণ করে এবং পারমাণবিক যুদ্ধের পরিণতি স্মরণ করার মাধ্যমে, আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ এবং আরও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব তৈরি করার চেষ্টা করতে উৎসাহিত করে। সেই সাথে এই দিনটি উদযাপনের একটি অপরিহার্য দিক হল বিশ্বে শান্তি প্রচার করা। যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক পরিণতি চিন্তা করে এবং শান্তিপূর্ণ সংঘাত সমাধানের গুরুত্ব সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষিত করা, একটি প্রজন্মকে গড়ে তোলা  যারা সক্রিয়ভাবে সহিংসতাহীন বিশ্ব নির্মাণের জন্য কাজ করবে ।

হিরোশিমা, জাপান ।ছবি সৌজন্য – উত্তরাপথ

যদিও পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু এখনও অনেক কাজ করা বাকি আছে। বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার পারমাণবিক অস্ত্রের অস্তিত্ব বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিরোশিমা দিবসে, আমাদের অবশ্যই সারা বিশ্ব থেকে পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পূর্ণ নির্মূলের চেষ্টা করতে হবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে দ্বন্দ্ব সমাধানের উপায় হিসাবে সংলাপ ও কূটনীতিকে উৎসাহিত করতে হবে।

সারা বিশ্ব এই কালোদিনটিতে, হিরোশিমা বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করে এবং সম্মান করে।কিভাবে এই দিনটিতে হিরোশিমাবাসীর  জীবন দুঃখজনকভাবে শেষ হয়েছিল, এবং তাদের মধ্যে যারা জীবিত ছিলেন তাদের জীবনের বাকিদিনগুলি কি নিদারুন দুঃখকষ্টের মধ্য দিয়ে পরিণতির দিকে গিয়েছিল। হিরোশিমা দিবস স্মরণের মাধ্যমে, আমরা তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি এবং একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পুনরায় স্মরণ করি।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


বিশ্বকাপ ২০২৩: পাকিস্তানকে হারিয়ে Afghanistan এ ঈদের মতো পরিস্থিতি

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ২২ তম ম্যাচে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আফগানিস্তান। এই প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল আফগানিস্তান আর এই পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্থানে(Afghanistan)এখন ঈদের মতো পরিস্থিতি।এক আফগানিস্থানি সমর্থকের মতে এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এবং নিজেদের মত করে তারা তাদের এই খুশী উদযাপন করেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক সমর্থকের মতে, সেদিন উদযাপন ছিল, পার্টি ছিল। এটি ছিল আমাদের ইতিহাসের একটি বিরল মুহূর্ত যখন পুরো জাতি খুশি ছিল এছাড়াও, এটি ছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের তৃতীয় বড় আপসেট । টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাবর আজমের দল। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান দল ২৮২ রান করে। জবাবে আফগানিস্তান দল ২৮৩ রান তাড়া করে ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য অর্জন করে। এই ম্যাচে হারের পর বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল অধিনায়ক বাবর আজমকে। ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনার সময়, তিনি দলের ত্রুটিগুলি তালিকাভুক্ত করেছিলেন এবং পরাজয়ের জন্য নিজেদের দায়ী করেছিলেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে

উত্তরাপথঃ হঠাৎ করেই একটি নতুন দ্বীপের জন্ম হয়েছে।২০২৩ এর ৩০ অক্টোবর  প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত একটি নতুন দ্বীপের জন্ম দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর জাপানের ওগাসাওয়ারা দ্বীপ চেইনের কাছে বিশাল বিশাল পাথরের টুকরো দেখা গেছে। এ বিষয়ে জাপানি গবেষক বলেন, গত মাসে প্রশান্ত মহাসাগর জলের নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইওটো দ্বীপের কাছে একটি ছোট নতুন দ্বীপের উদ্ভব হয়েছে।টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফুকাশি মায়েনো জানিয়েছেন যে নতুন দ্বীপ, এখনও যার নাম নেই প্রশান্ত মহাসাগরের ইওটো দ্বীপ থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ১০০ মিটার ব্যাসের একটি পাথুরে দ্বীপে একটি phreatomagmatic বিস্ফোরণ ঘটেছে। টোকিও থেকে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিস্ফোরণটি দেখা গেছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের সাথে লাল গরম ম্যাগমা সংঘর্ষের কারণে প্রতি কয়েক মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটে।গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩-এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছিল, যা আগে ইও জিমা নামে পরিচিত ছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্থান ছিল। প্রায় ১০ দিন ধরে অগ্ন্যুৎপাত চলার পর, আগ্নেয়গিরির উপাদান অগভীর সমুদ্রতলের উপর জমা হয় এবং প্রায় ১৬০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় বড় বড় পাথরের আকারে সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে উঠে আসে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Electoral Bond এর গোপনীয়তা সরিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে, জানাতে হবে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ

উত্তরাপথঃ বুধবার, নির্বাচনী বন্ড (Electoral Bond)প্রকল্পের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের শুনানি হয়। শীর্ষ আদালত তার মন্তব্যে বলেছে, 'নির্বাচনী বন্ডগুলি রাজনৈতিক দলগুলিকে বেনামী অর্থ প্রদান করে, কারণ তাদের কেনাকাটা সম্পর্কিত রেকর্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে উপলব্ধ যা শুধুমাত্র তদন্তকারী সংস্থাগুলি অ্যাক্সেস করতে পারে৷ এর আগে নির্বাচনী বন্ড’ (Electoral Bond) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) কেন্দ্র দাবি করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের উৎস জানার অধিকার নেই জনতার।এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৎপর হল নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)।বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে যাবতীয় হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bond)মামলায় কেন্দ্রের আর্জি সত্বেও সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে আয়ের উৎস জানাতে বলেছিল। আদলত নির্দেশ দিয়েছিল, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান মিলেছে, সেই তথ্য বন্ধ খামে জানাতে হবে।এর আগেও নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীরা অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ বিদেশ থেকে পেতে পারে এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। যদিও কোনও রাজনৈতিক দলই এই দাবি মানতে চায়নি। ৩ অক্টোবর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সব তথ্য দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এই রায়ের পরেই তৎপর হল কমিশন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top