গার্গী আগরওয়ালা মাহাতোঃ ভারতে খাদ্য অপচয়ের সমস্যা খুবই গুরুতর এবং এটি বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। জাতিসংঘের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ভারতে প্রতি বছর মাথাপিছু গড়ে ৫৫ কেজি খাবার নষ্ট হচ্ছে। দেশে প্রতিটি মানুষ যাতে পর্যাপ্ত খাবার পায় এবং খাবারের অপচয় কমানো যায় সেজন্য খাদ্য সরবরাহ ও ব্যবহারে উন্নতি করার কথা রিপোর্টে বলা হয়েছে।রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে ভারতে প্রতি বছর ৭৮ মিলিয়ন টনেরও বেশি খাবার নষ্ট হচ্ছে। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) প্রকাশিত নতুন প্রতিবেদন ‘ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট ২০২৪’এ এই তথ্য উঠে এসেছে।
এর আগে ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘খাদ্য বর্জ্য সূচক প্রতিবেদন’-এ জনপ্রতি নষ্ট হওয়া খাদ্যের এই পরিসংখ্যান বার্ষিক ৫০ কেজি রেকর্ড করা হয়েছিল। আমরা যদি সেই বছর ভারতে পরিবারের মোট খাদ্য অপচয়ের দিকে তাকাই, তাহলে তা ছিল ৬.৮৮ কোটি টন।
কিন্তু পরিহাসের বিষয় হলো দেশের ২৩.৪ কোটি মানুষ অপুষ্টির শিকার। জাতিসংঘের প্রকাশিত ‘দ্য স্টেট অফ ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২৩’-এর আরেকটি রিপোর্ট অনুসারে, ৭৪.১ শতাংশ ভারতীয়দের কাছে পুষ্টিতে ভরপুর একটি প্লেট বিলাসিতা থেকে কম নয়।
অর্থাৎ দেশের ১০০ কোটির বেশি মানুষ পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে না। তা সত্ত্বেও, খাদ্য সামগ্রীর এই অপচয় একটি বড় সমস্যা তুলে ধরে। ২০২৩ গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যার ১৬.৬ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের অপুষ্টিতে ভুগছে।দেশে খাদ্য ঘাটতি এবং অপুষ্টির সমস্যা কতটা গুরুতর তা অনুমান করা যায় যে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে ১২৫টি দেশের তালিকায় ভারত ১১১ তম স্থানে রয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় দেশে এখনও সবাই পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে না।
শিশুদের কথা বললে দেশে অপুষ্টির সমস্যা অনেক বেশি মারাত্মক। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ শিশুর মাতৃগর্ভে বা জন্মানোর সাথে সাথে মৃত্য হয় ওজন কম থাকার কারণে। সারা বিশ্বের পরিসংখ্যানের সাথে তুলনা করলে, ভারত এই ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে, যেখানে পরিস্থিতি ইয়েমেন (১৪.৪ শতাংশ) এবং সুদান (১৩.৭ শতাংশ) এর থেকেও খারাপ।জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত শিশু অপুষ্টির স্তর ও প্রবণতা ২০২৩-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩১.৭ শতাংশ শিশু স্টান্টিংয়ের শিকার। এর মানে এই শিশুরা তাদের বয়সের জন্য স্টান্টড। পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বে স্টান্টিংয়ে আক্রান্ত প্রতি চতুর্থ শিশু একজন ভারতীয়। এর মানে হল ভারতে ২৪.৬ শতাংশ স্টান্টিং শিশুদের ৫ বছরের কম বয়সী। এমন অবস্থায় দেখা গেলে দেশে খাদ্যদ্রব্যের অপচয় অপরাধের চেয়ে কম নয়।
তবে এই রিপোর্টে ভারতে খাদ্য অপচয় সম্পর্কিত তথ্যগুলিকে ‘মাঝারি আত্মবিশ্বাস’ বিভাগে রাখা হয়েছে। এটি ইঙ্গিত করে যে ডেটাতে ভৌগলিক কভারেজ সীমিত ছিল সেইসাথে নমুনার আকার যা ছোট এবং ট্র্যাক করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। এছাড়াও এই বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকতে পারে।প্রতিবেদনে ভারতের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গবেষকের করা গবেষণার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এই গবেষণাটি অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরালা, উত্তরাখণ্ড এবং ঝাড়খণ্ডে করা হয়েছিল। এর মধ্যে কেরালা এবং কর্ণাটকে পরিচালিত গবেষণাগুলি ইউএন-হ্যাবিট্যাট দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।
আমরা যদি জাতিসংঘের খাদ্য বর্জ্য সূচক প্রতিবেদন ২০২৪-এ প্রকাশিত বৈশ্বিক তথ্যের দিকে তাকাই, তাহলে বছরে মোট খাদ্য উৎপাদনের ১৯ শতাংশ অপচয় হচ্ছে, যা প্রায় ১০৫২ মিলিয়ন টনের সমান। অন্যদিকে, বিশ্বে ৭৮.৩ কোটি মানুষ খালি পেটে ঘুমাতে বাধ্য।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রতিটি মানুষ বছরে প্রায় ৭৯ কেজি খাবার অপচয় করছে, যা বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি প্লেট খাবার নষ্ট করার সমান।
প্রতিবেদনে যে আশ্চর্যজনক বিষয়টা সামনে এসেছে তা হল, একদিকে আফ্রিকার অনেক দেশই অনাহারে ভুগছে, অন্যদিকে নাইজেরিয়ার মতো দেশ রয়েছে যেখানে প্রত্যেক মানুষ বছরে প্রায় ১১৩ কেজি খাবার নষ্ট করে। একইভাবে, মিশরে, প্রতিটি মানুষ গড়ে ১৬৩ কেজি খাবার নষ্ট করছে। যেখানে তানজানিয়ায় এই সংখ্যাটি ১৫২ এ রেকর্ড করা হয়েছে এবং রুয়ান্ডায় এটি ১৪১ কেজি রেকর্ড করা হয়েছে।
মাথাপিছু খাদ্য বর্জ্যের দিক থেকে মালদ্বীপ শীর্ষস্থানীয়, যেখানে প্রতি বছর ২০৭ কেজি খাদ্য বর্জ্য উৎপন্ন হয়। একইভাবে, সিরিয়া এবং তিউনিসিয়ায় এই সংখ্যা ১৭২ রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে পাকিস্তানে এটি ১৩০ রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়ায় খাদ্য অপচয়ের এই পরিসংখ্যান বার্ষিক ৩৩ কেজি রেকর্ড করা হয়েছিল, যেখানে ফিলিপাইনে এটি ২৬ কেজি রেকর্ড করা হয়েছিল। একইভাবে বুলগেরিয়ায় ২৬ কেজি, ভুটানে ১৯ এবং মঙ্গোলিয়ায় বছরে ১৮ কেজি খাবার নষ্ট হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পারস্পরিক সহযোগিতা ও প্রচেষ্টার সাহায্যে এই খাদ্য অপচয় অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব।
আরও পড়ুন
Snake Robot : এবার মহাকাশে সাপ রোবট পাঠাবে NASA
উত্তরাপথ: মহাকাশ অনুসন্ধানের সীমানা আরও বিস্তৃত করতে এবং বহির্জাগতিক পরিবেশের দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে NASA ক্রমাগত উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সন্ধান করেছে। এর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল Snake robot বা সাপের মতো রোবট তৈরি করা যা মহাকাশে নেমে যাবতীয় অনুসন্ধানের কাজগুলি করবে এবং সেই সাথে মহাকাশে বসবাসের ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করবে। এই যুগান্তকারী সৃষ্টিতে মহাকাশ অভিযানে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা দূরবর্তী এবং প্রতিকূল পরিবেশে গবেষণার কাজ নিখুঁত ভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে। .....বিস্তারিত পড়ুন
জঙ্গলমহলে হলুদ বাহিনী আগামীতে তৃণমূলের মাথা ব্যথার কারণ
উত্তরাপথ: পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর হলুদ আবীরে ভরে গেছে জঙ্গলমহল। ২০২৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনের রাজনৈতিক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল জঙ্গলমহল । আকর্ষণের এই কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠার অন্যতম কারণ নিঃসন্দেহে কুড়মি আন্দোলন। এই জঙ্গলমহল নিয়ে শাসকদলের মাথা ব্যাথা যেমন রয়েছে, তেমন রাজনৈতিক উৎকণ্ঠা রয়েছে বিজেপির । শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এই নির্বাচনে অনেকটাই নিজেদের জমি উদ্ধার করতে পেরেছে সন্দেহ নাই । .....বিস্তারিত পড়ুন
World Population: উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে চলেছে বিশ্বের জনসংখ্যা
উত্তরাপথ: সারা পৃথিবীতে জাতিসংঘের উদ্যোগে গত মঙ্গলবার ১১ জুন পালিত হয়েছে বিশ্ব জনসংখ্যা (World Population) দিবস। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা বিভাগ জানিয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ৯৭০ কোটি। অর্থাৎ প্রায় এক হাজার কোটি। এই সময়ে ভারত, চীন ও নাইজেরিয়া হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তিন জনবহুল দেশ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ১৯৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ২৫০ কোটি। ২০২২ সালে জনসংখ্যা হয় ৮০০ কোটি। .....বিস্তারিত পড়ুন
জোছনা রাতে
অসীম পাঠক: পূর্ণিমার মায়াবী চাঁদের আলোয় বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। পুরুলিয়ার পান্ডব বর্জিত এক গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে গ্রামের শৌখিন যাত্রার আসরে পঙ্গপালের মতো ছুটে চলেছে সব মানুষজন। গোপালপুরে যাত্রা তাও আবার ঐতিহাসিক পালা। ঝলমলে পোশাকের মেলা আর গ্রাম্য বিনোদনের এক অফুরন্ত ভান্ডার, সাথে মেলা জুয়ার আসর, দেশী মহুয়ার চনমনে নেশা। কাঁচের গ্লাসে ফেনায়িত মদ আর ঝালঝাল চাখনা ছোলা মটর বাদাম। আহা রে- জিভ চকচক করে হরিপদর। বেশ রসিক মানুষ হরিপদ কর্মকার, তার রসের ভান্ডারে কতো বিচিত্র অভিজ্ঞতা র গল্প। নাম করা গুনীন, সাপের বিষ না .....বিস্তারিত পড়ুন