জানেন কি কেন আমাদের খাওয়ার পর কেন ঘুম পায় ?

উত্তরাপথঃশরীরের সার্বিক বিকাশের জন্য খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদের শক্তি জোগায় এবং আমাদের দিনের সমস্ত কাজ সঠিকভাবে করতে দেয়, কিন্তু বিশেষত দুপুরের খাবার খাওয়ার পর আমরা অলস বোধ করতে শুরু করি । এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ঘুমের অনুভূতি হয় সোজাকথায় আমরা যাকে ‘ভাতঘুম’বলে থাকি। সত্যি কি তাই ,আমরা বাঙালীরা ভাত খায় বলেই কি আমাদের ঘুম পায়,কিন্তু বাকী অন্য জায়গার লোকেরা যারা ভাত খায় না তাদের ক্ষেত্রে ঘুমের রহস্যটা কি ? কি বলছে বিজ্ঞান?

 খাবার খাওয়ার পরে অলসতা এবং ঘুমের অনুভূতি হওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার, কারণ সব ধরনের খাবার হজম করা সহজ নয়, তবে এমন হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে।আসলে, খাওয়ার পরে আমাদের শক্তির স্তরে ইনসুলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা যখন খাবার চিবিয়ে খায় ,তখন আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যাতে শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে। একই সময়ে, আপনি যখন আপনার খাবার সম্পূর্ণরূপে বাদ দেন, তখন ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়। এই কারণেই আপনি খাওয়ার পরে অলস এবং ক্লান্ত বোধ করতে শুরু করেন। এই প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হলে চিন্তার কোনো দরকার নেই, তবে দীর্ঘদিন ধরে এমন মনে হলে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে পারেন। এই নিবন্ধে, আমরা আপনাকে খাবারের পরে ঘুমের অনুভূতির কারণ এবং সেই সাথে সমস্যার সমাধানও বলছি।

১। বড় বা ভারী খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ইনসুলিনের বৃদ্ধি ঘটে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই বৃদ্ধির ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে, যার ফলে তন্দ্রা অনুভব হতে পারে।

২। ইনসুলিনের প্রাথমিক বৃদ্ধির পর, রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত হ্রাস পেতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি, অলসতা এবং ঘুমের অনুভূতি হতে পারে।

৩। পরিপাক প্রক্রিয়ার জন্য পাকস্থলী এবং অন্ত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রক্ত ​​প্রবাহের প্রয়োজন হয়। এটি মস্তিষ্ক থেকে রক্ত ​​​​প্রবাহকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে, যার ফলে তন্দ্রা এবং ক্লান্তির অনুভূতি হয

৪। খাবারে ট্রিপটোফ্যান থাকে, একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়। সেরোটোনিন একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা ঘুম এবং শিথিলতা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। হজমের সময় ট্রিপটোফ্যান নিঃসৃত হলে, এটি সেরোটোনিনের মাত্রা স্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ হতে পারে, যার ফলে শিথিলতা এবং ঘুমের অনুভূতি হয়।

৫। আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই সকালের দিকে কাজকর্মের পর ক্লান্তি অনুভব করে, যাকে প্রায়ই “লাঞ্চ-পরবর্তী ডিপ” বলা হয়। এটি শরীরের স্বাভাবিক সার্কাডিয়ান ছন্দ যা সূর্যালোক দ্বারা প্রভাবিত হয়।

৬। খাবার পরিপাকের সময় হরমোন কোলেসিস্টোকিনিন (CCK) নিঃসৃত হয় এবং অগ্ন্যাশয় এনজাইম নিঃসরণকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। CCK-এর মস্তিষ্কে ঘুম-উন্নয়নকারী প্রভাবও রয়েছে, যা দুপুরের খাবার-পরবর্তী ঘুমের ক্ষেত্রে এক কারণ হতে পারে।

৭। আবার প্রচুর পরিমাণে খাবার গ্রহণ করলে শরীরে এক অস্বস্তি এবং অলসতার অনুভূতি হতে পারে, যার ফলে কোনও কাজে মনোযোগ দেওয়া বা সতর্ক থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

মধ্যাহ্নভোজনের পরের ঘুমের সাথে লড়াই করতে, এই কৌশলগুলি চেষ্টা করুন:

* সারাদিনে ছোট, আর সুষম খাবার খান

* রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে আপনার খাবারে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যোগ করুন

* কিছু সময় খোলা বাতাসে বাইরে একটু হাঁটাহাঁটি করুন

* যোগচর্চার কৌশলগুলি অনুশীলন করুন, যেমন গভীর শ্বাস বা ধ্যান

* অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন

* শক্তির মাত্রা বাড়ানোর জন্য দিনের বেলা কিছু শারীরিক কার্যকলাপ করার চেষ্টা করুন

মনে রাখবেন, দুপুরের খাবার খাওয়ার পর একটু ঘুমিয়ে পড়া স্বাভাবিক, কিন্তু আপনি যদি অতিরিক্ত ঘুম বা ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে যেকোন অন্তর্নিহিত কারণ হতে পারে সেক্ষেত্রে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করা সবসময়ই ভালো।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


সেলফির উচ্চ রেটিং কি আপনাকে আরওপাতলা হতে উৎসাহিত করছে ?

উত্তরাপথঃ সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সেলফি তোলা এবং নিজেকে পাতলা হিসাবে দেখানোর মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির রুথ নাইট এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের ক্যাথরিন প্রেস্টন সম্প্রতি PLOS ONE জার্নালে তাদের ফলাফল প্রকাশ করেছেন।সেখানে সেলফির উচ্চ রেটিং এবং আমাদের শরীরের গঠনের মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।    বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলফি হল এক জনপ্রিয় ছবি দেওয়ার ধরন। যিনি সেলফি তোলেন তিনি ক্যামেরাকে তাদের শরীর থেকে দূরে রেখে নিজেই নিজের ছবি তোলে। আগের গবেষণায় বলা হয়েছে সেলফিগুলি দেখার ফলে ছবির বিষয়গুলি সম্পর্কে দর্শকদের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

ফ্লিম রিভিউ -ওপেনহাইমার

উত্তরাপথ: বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান দ্বারা পরিচালিত”ওপেনহাইমার” একটি মাস্টারপিস মুভি। ছবিতে জে. রবার্ট ওপেনহেইমার, এক নামকরা পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।এই সিনেমায় ওপেনহাইমার এর জটিল জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই হিসেবে 'ওপেনহাইমার'কে বায়োপিক বলা যেতে পারে।  কারণ এটি একজন মানুষের গল্প। এই ছবির গল্প তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।ছবির শুরুতে পারমাণবিক বোমা তৈরির আবেগের কথা বলা হয়েছে।  যেখানে নায়ক কিছু না ভেবে নিবেদিতপ্রাণভাবে এমন একটি অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত থাকে যা বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে।  অস্ত্র তৈরি হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক তার কাজের ফলাফল দেখে অপরাধবোধে পূর্ণ হয়।  এবং তৃতীয় পর্যায়টি হল রাজনীতি  যা ওপেনহাইমারকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  পুরো সিনেমাটি রঙিন হলেও রাজনৈতিক অংশ সাদা-কালো রাখা হয়েছে।  এই তিনটি সময়কালে যা কিছু ঘটছে, তা সবই একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। .....বিস্তারিত পড়ুন

World Children's Day: সত্যিই কি ‘বিশ্ব শিশু দিবস´পালনের কোনও যৌক্তিকতা আছে ?

প্রীতি গুপ্তাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটি দিন তারপর ১৪ নভেম্বর আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে  পালন করা হবে ‘বিশ্ব শিশু দিবস´(World Children's Day)।এই দিনটি শিশুদের মঙ্গলের জন্য, তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুকূল বিশ্ব তৈরি করার প্রচেষ্টার একটি দিন।কিন্তু প্রশ্ন,সত্যি কি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সারা বিশ্ব জুড়ে শিশু দিবস পালন করার কোনও যৌক্তিকতা আছে? আদৌ কি এর কোনও লাভ আমরা আমাদের প্রান্তিক স্তরের শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি ? সম্প্রতি কাজের প্রয়োজনে রাজস্থানের উদয়পুর শহরে আসা। আমরা সবাই জানি উদয়পুর বিখ্যাত তার হ্রদের কারণে । এখানকার স্থানীয় থেকে পর্যটক সকলেই এই সুন্দর হ্রদগুলির আকর্ষণে বারবার ছুঁটে যায়। ‘ফতে সাহেব লেক’ রাজস্থানের উদয়পুরের এক বিখ্যাত পর্যটক স্থল।এখানে বহু মানুষ সকাল- বিকেল এই লেকের চার ধারে হাঁটাহাঁটি করতে বেরিয়ে পড়ে। সেভাবেই দুই দিন আগে বিকেলে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লাম ‘ফতে সাহেব লেকের ধারে হাঁটার উদ্দেশ্য নিয়ে। হাঁটার মাঝখানে হঠাৎ করে একটি বাচ্চাছেলে আওয়াজ করে ডাকছে ,বললাম কিছু বলবি? সে বলল একটু দাঁড়াতে। ও ছুটে গিয়ে হাতে করে কয়েকটি বেলুন নিয়ে এসে হাজির । সে বারবার বেলুন কেনার অনুরোধ জানাতে লাগল। হাতে অন্য কাজের চাপ নেই অনেকটা অবসর সময় তাই আমি অনেকটা সাংবাদিক সুলভ মন নিয়ে বললাম ঠিক আছে আমি তোর বেলুন নেব ,কিন্তু তার আগে আমি  তোকে যা বলব তার তার ঠিক ঠিক উত্তর দিতে হবে। সে খুশী খুশী রাজি হয়ে গেল । .....বিস্তারিত পড়ুন

Karar Oi Lauh Kapat: কাজী নজরুলের এই গানকে ঘিরে  বিতর্কে এ আর রহমান

উত্তরাপথঃ বিতর্কে 'পিপ্পা' ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান।সম্প্রতি কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার একটি হিন্দি ছবিতে কবির জনপ্রিয় গান 'করার ঐ লৌহ কাপাত...' (Karar Oi Lauh Kapat )।কিন্তু এ আর রহমানের সঙ্গীত পরিচালনায় ওই গানটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আপত্তি জানিয়েছে নজরুল পরিবার।বিতর্কের পর যে চুক্তির আওতায় ওই গানটি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছে কবির পরিবার।'পিপ্পা' শিরোনামের হিন্দি চলচ্চিত্রটি যেখানে (Karar Oi Lauh Kapat )গানটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন ভারতীয় সেনা সৈনিককে কেন্দ্র করে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান। গানের কথা ঠিক রেখেও সুর পাল্টানোর অভিযোগে ভারত ও বাংলাদেশে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।কবির পরিবারের অভিযোগ, গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও সুর পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।পরিবারের সদস্যরাও ছবিটি থেকে গানটি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top