মান্ডির মহাশিবরাত্রি মেলা আন্তর্জাতিক উৎসব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে

প্রীতি গুপ্তাঃ মান্ডি শহর হিমাচল প্রদেশের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে একটি।এটি ছোট কাশী নামে পরিচিত হিমাচল প্রদেশের সংস্কৃতির মতোই মান্ডির মহাশিবরাত্রি উৎসব নানাভাবে অনন্য।এই উৎসব দেবতা ও মানুষের মিলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।আসলে, হিমাচলের প্রায় প্রতিটি গ্রামেরই নিজস্ব দেবতা রয়েছে। মান্ডির মহাশিবরাত্রি উৎসবের বিশেষত্ব হল , সেখানকার মানুষ এই দিনটিতে তাদের স্থানীয় দেব-দেবীদের পালকিতে বা পিঠে করে মেলার প্যাডাল মাঠে নিয়ে আসেন।

মান্ডি মহাশিবরাত্রি মেলা হল একটি বার্ষিক মেলা যা এক সপ্তাহ ধরে অনুষ্ঠিত হয়। এটি মহাশিবরাত্রির দিনে শুরু হয় এবং ৭ দিন পর শেষ হয়। মান্ডি শিবরাত্রি মেলা প্রতি বছর হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়।হিমাচল প্রদেশের মান্ডি শহরে শিবরাত্রি উৎসবের জনপ্রিয়তা ব্যাপক এবং তাই এটি একটি আন্তর্জাতিক উৎসব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মান্ডিতে যেখানে এই উৎসব হয় সেখানে প্রচুর সংখ্যক দেব-দেবী আসেন। এই উৎসবের একটি বিশেষত্ব হল সমস্ত দেবতাকে শুধুমাত্র পালকিতে আনা হয় এবং যাতায়াতের জন্য আর অন্য কোনও যানবাহন ব্যবহার করা হয় না। এই উৎসবে অংশ গ্রহণকারী দেব দেবীদের মধ্যে অনেকগুলি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসে যা মান্ডি শহর থেকে বেশ দূরে। হিমাচলের অন্যান্য জেলার দেবতারাও শিবরাত্রি উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। ৮১টি মন্দিরের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গার দেবতাকে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়। মান্ডি শহরটি ‘পাহাড়ের বারাণসী’ নামেও পরিচিত।

মান্ডি মহাশিবরাত্রি মেলার আকর্ষণের আরেকটি কারণ হল এক সাথে এত সংখ্যক দেবদেবীর সমাবেশ। শুধুমাত্র মান্ডি জেলায় ২০০ টিরও বেশি দেবতা রয়েছে যারা মহাশিবরাত্রি মেলার সময় একত্রিত হন।এছাড়াও পুরো হিমাচল প্রদেশ থেকে বহু দেবদেবী এই মেলায় অংশগ্রহণ করে।শিঙা ও ঢোলের ধ্বনির সাথে সুন্দর সুসজ্জিত পালকিতে দেবতাদের আগমন হয়। মেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেবতারা মেলার প্যাডালে থাকেন।

স্থানীদের মতে এই মেলায় অংশগ্রহণকারী দেবতাদের মধ্যে বিশিষ্টরা হলেন ভূতনাথ, ত্রিলোকি নাথ, জগন্নাথ, তরনা দেবী এবং জলপা দেবী।মান্ডি রাজ্যের শাসকরা ছিলেন শিবের ভক্ত।একটি কিংবদন্তি অনুসারে,হিমাচলের শাসক সেন রাজা (১৪০০- ১৫৩৯) তার স্বপ্নে একটি গাভীকে ভগবান শিবের মূর্তির কাছে দুধ নিবেদন করতে দেখেছিলেন। তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হয় যখন তিনি নিজেই গরুটিকে একটি প্রতিমাকে দুধ দিতে দেখেন।এরপর তিনি ১৫২৬ সালে সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করেন – যার নামকরন করেন ‘ভূতনাথ মন্দির’। এটিকে তিনি ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। তিনি একই সাথে মান্ডি শহরের ভিত্তিও স্থাপন করেন এবং তিনি তার রাজধানী এখানে স্থানান্তর করেন।

মহাশিবরাত্রি মেলার প্রথম দিন, ভগবান বিষ্ণুর অবতার এবং প্রধান দেবতা, শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন। সমবেত দেবতারা তাকে অনুসরণ করে সুন্দরভাবে সজ্জিত পালকিতে, প্রোটোকল অনুসারে, ভূতনাথ মন্দিরে সমবেত হন।মহাশিবরাত্রিতে এই ধরনের তিনটি শোভাযাত্রা, মেলার উদ্বোধনী, মাঝামাঝি ও সমাপনী দিনে বের হয় যা স্থানীয়ভাবে জালেব নামে পরিচিত।এই মহশিবরাত্রির মেলার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল  ‘গুর’ সম্প্রদায়ের মানুষদের উপস্থিতি। এই ‘গুর’ মানুষ এবং দেবতাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করে।এই মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ খেলা হয় এবং লাখ লাখ টাকার লেনদেন হয়।প্রতি বছর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রচুর পর্যটকদের সমাগম হয়।এই মহাশিবরাত্রি মেলা বিদেশী এবং গবেষকদের বিশেষ করে আকর্ষণ করে।

খবরটি শেয়ার করুণ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন


Vijay Stambh : চিতোরগড় দুর্গে বিজয় স্তম্ভ হিন্দু – মুসলিম সহাবস্থানের প্রতীক

উত্তরাপথঃ খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মৌর্য রাজবংশ কর্তৃক স্থাপিত চিতোরগড় দুর্গ সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এই দুর্গ তার বিশাল কাঠামো, রাজপ্রাসাদ, একাধিক  সুদৃশ্য মন্দির সহ সুন্দর জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত।৭০০-একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্গটিতে প্রায় ৬৫টি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা রাজপুত এবং ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর সূক্ষ্মতার প্রমান দেয়। বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh)) হল এই দুর্গে অবস্থিত,সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর কাঠামো।এই আশ্চর্য-অনুপ্রেরণামূলক স্তম্ভটি কেবল তার উচ্চতার জন্য বিখ্যাত নয়,এটি রাজপুতদের অদম্য সাহস এবং অধ্যবসায়ের গল্পও বলে যা চিতোরগড় দুর্গেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে।বিজয় স্তম্ভ (Vijay Stambh), নাম থেকে বোঝা যায়, বিজয়ের প্রতীক।  প্রাচীনকালে যে কোনো যুদ্ধ অভিযানের সাফল্যের পর সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে রাজারা মন্দির, স্তূপ, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্তম্ভ নির্মাণ করতেন।  ৯ তলা এই বিজয় স্তম্ভটি ১৯৪০ থেকে ১৪৪৮ সালের মধ্যে মহারানা কুম্ভ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। .....বিস্তারিত পড়ুন

দীপাবলির সময় কেন পটকা ফোটানো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা যায় না ?

উত্তরাপথঃ দীপাবলির পরের দিন, যখন কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) শহরের বায়ু মানের সূচকের তালিকা প্রকাশ করে,তখন  দেখা যায় রাজধানী দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের প্রথমেই রয়েছে। CPCB-এর মতে, ১২ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ২১৮ যা ভোরের দিকে বেড়ে ৪০৭ এ পৌঁছায় । ৪০০ – ৫০০ AQI  এর স্তর সুস্থ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। দীপাবলির সারা রাত, লোকেরা পটকা ফাটিয়ে দীপাবলি উদযাপন করে। ১৩ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আবার তথ্য প্রকাশ করে এই তালিকায়, দিল্লির গড় বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৫৮ যা 'খুব খারাপ' বিভাগে পড়ে।   বায়ু দূষণের এই পরিস্থিতি শুধু দিল্লিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।  নয়ডার বায়ু মানের সূচক ১৮৯ থেকে ৩৬৩ এ এবং রোহতক, হরিয়ানার ১৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮৩ হয়েছে। দীপাবলির দুই দিন দিল্লি ,নয়ডা  ,কলকাতা, মুম্বাই সহ দেশের অন্যান্য শহরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এই দিনগুলিতে মানুষ বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে বাধ্য হয়েছে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় রাজধানী দিল্লি এবং নয়ডায় সবুজ পটকা ছাড়া যে কোনও ধরণের আতশবাজি ফাটান সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। আদালত সবুজ পটকা পোড়ানোর সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে রাত ৮টা থেকে ১০টা। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের মানে কী?  আদালতের এই আদেশ কি এখন প্রত্যাহার করা উচিত?  পুলিশ কেন এই আদেশ কার্যকর করতে পারছে না?  এর জন্য কি পুলিশ দায়ী নাকি সরকারের উদাসীনতা রয়েছে এর পেছনে? .....বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদকীয়-  রাজনৈতিক সহিংসতা ও আমাদের গণতন্ত্র

সেই দিনগুলো চলে গেছে যখন নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকেও সম্মান করতেন। শাসক দলের নেতারা তাদের বিরোধী দলের নেতাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনতেন এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।  আজ রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে।  কেউ কারো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়।  আগ্রাসন যেন রাজনীতির অঙ্গ হয়ে গেছে।  রাজনৈতিক কর্মীরা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুন বা মানুষ মারার মত অবস্থার দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশে যেন রাজনৈতিক সহিংসতা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন।  ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) অনুসারে, ২০১৪ সালে, রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২০০০ জন মারা গিয়েছিল।  আমরা পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য গর্বিত হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের গণতন্ত্রের শিকড়কে গ্রাস করছে, যার জন্য সময়মতো সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। .....বিস্তারিত পড়ুন

রাতের ঘামের সমস্যা এবং এ সম্পর্কে আপনি কি করতে পারেন  

উত্তরাপথঃ রাতের ঘামের সমস্যা শরীরের কুলিং সিস্টেমের একটি স্বাভাবিক অংশ, তাপ মুক্তি এবং সর্বোত্তম শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।তবে রাতের ঘাম একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে।এর  অস্বস্তিকর অনুভূতির জন্য ঘুম ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি রাতে অতিরিক্ত ঘাম অনুভব করেন, তাহলে তার অন্তর্নিহিত কারণটি চিহ্নিত করা এবং এটি মোকাবেলার জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাতের ঘামের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল।মেনোপজ: যে কেউ, বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, রাতের ঘাম অনুভব করতে পারে। .....বিস্তারিত পড়ুন

Scroll to Top